রেলওয়ের চার প্রকল্প: সময় আর ব্যয় বাড়িয়েও কাজ শেষ করা যায়নি

প্রকাশিত: ১২:১৮ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৫, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য রেলওয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। গত কয়েক বছরে রেলের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু এ খাতের কিছু কিছু মেগা প্রকল্প গত কয়েক বছর ধরে ধুঁকছে। প্রকল্প ব্যয়ের সঙ্গে সময় বাড়িয়েও প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্ধেক কাজ ফেলে চলে গেছে ঠিকাদাররা। আবার নতুন করে প্রস্তাব আহ্বান করার ফলে সময় ও অর্থ দুই অপচয় হচ্ছে। এসব প্রকল্প রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলওয়ে প্রকল্প, ঢাকা-টঙ্গী জয়দেবপুর প্রকল্প, মধুখালী-কামারখালী-মাগুরা প্রকল্প, খুলনা-মংলা পোর্ট প্রকল্প এমন অবস্থায় গিয়েছে যে, এগুলো সময়মতো বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এসব প্রকল্পের খরচ ও সময় বেড়েছে অনেক বার। অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও এসব প্রকল্প চলে গিয়েছে অনভিজ্ঞ ঠিকাদারদের হাতে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে প্রায় ৩৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এটি ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ৯ বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এই প্রকল্প এখনো আলোর মুখ দেখেনি। পাওয়ার চায়না নামের একটি বিদেশি কোম্পানি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছিল। এই প্রকল্পের ব্যয় এখন ৬৬০ কোটি টাকা। রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বারবার তাগাদ দেওয়ার পরেও বিদেশি ঠিকাদার কালক্ষেপণ করেছে বছরের পর বছর। শেষমেশ উক্ত ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিল হয়ে যায়। কিছুদিন আগে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পুনরায় দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

অভিযোগ আছে, কালক্ষেপণ এবং রেলওয়ের লোকসানের জন্য কোম্পানিটিকে কোনো প্রকার দায় বা জরিমানা করা হয়নি। অবশ্য প্রকল্প পরিচালক মো. সেলিম রউফ ইত্তেফাককে জানিয়েছেন, প্রকল্পের কাজ সাড়ে ৪৭ শতাংশ শেষ হয়েছে। আমরা ওই কোম্পানিকে সাইট বুঝিয়ে দিতে পারিনি। এজন্য কোম্পানিকে দায়ী করা যায় না।
অপরদিকে, টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে দ্বিতীয় ডুয়েলগেজ লাইন এবং ঢাকা-টঙ্গী সেকশনে তৃতীয় ও চতুর্থ ডুয়েল রেললাইন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় প্রায় ৩০০ শতাংশ বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালে এ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মেয়াদ পাঁচ বছর বাড়িয়ে ২০২৭ সাল পর্যন্ত নেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ৮৫০ কোটি টাকা। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৩ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঠিকাদারের অবহেলার কারণে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ বারবার পিছিয়ে গেছে।

এ ছাড়া রেললাইনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাঁচামাল সময়মতো সরবরাহ না করার কারণে প্রকল্পে প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে। এসব কারণে বাস্তবায়ন কাজ বিলম্ব হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রকল্পের কাজ আট বছর শেষ হয়েছে। আগামীতে কবে কাজ শেষ হবে তা কেউ সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি।
এদিকে, প্রায় ২৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ফরিদপুরের মধুখালী থেকে গোপালগঞ্জ হয়ে মাগুরা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছিল প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি দুটি ভাগে বিভক্ত। প্রথম অংশ রেলের অংশটুকুর কাজ পেয়েছে ক্যাসেল কনস্ট্রাকশন এবং দ্বিতীয় অংশ ব্রিজের কাজ করছে মীর আখতার হোসেন লিমিটেড। ঝুলে যাওয়া এই প্রকল্প মাগুরাবাসীর জন্য দুর্দশা বয়ে এনেছে। বিগত পাঁচ বছরেও রেল এবং ব্রিজ দুই অংশেরই কাজের এক-চতুর্থাংশও শেষ হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে এই কাজ শেষ হলেও প্রকল্পের ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বাড়বে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলের এক কর্মকর্তা জানান, এই প্রকল্প যারা বাস্তবায়ন করছে তাদের অভিজ্ঞতা নেই। এজন্য প্রকল্পটি দীর্ঘদিন ঝুলে আছে।

মোংলা এবং আখাউড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত দুটি রেলপথ নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হয়েছে ভারতীয় ঋণে। এরই মধ্যে খুলনা-মোংলা পথে একটি ট্রেন যাত্রা শুরু করলেও আখাউড়া-আগরতলা লাইনে এখন পর্যন্ত কোনো ট্রেন চলাচল করেনি। উল্লেখ্য, ২০১০ সালে প্রায় ১ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয়ে খুলনা মংলা রেললাইন প্রকল্প নেওয়া হলেও তিন বছরে এই কাজ শেষ হয়নি বরং পাঁচ বার প্রকল্প সংশোধন করার পরে ১৩ বছরে ব্যয় বেড়ে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।
রেলপথ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেছেন, সরকার রেলের এ ধরনের প্রকল্পগুলো মূল্যায়ন করবে। এক্ষেত্রে কাদের গাফিলতি আছে তা খুঁজে বের করা হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে চুক্তির পুনর্মূল্যায়নও করা হবে।