রোগী মৃত্যুর জেরে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যালে চিকিৎসকদের ওপর হামলা

প্রকাশিত: ৪:১৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৪

ঢাকা প্রতিনিধি:

রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সকালে হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে রোগীর মৃত্যুর জের ধরে হামলার সূত্রপাত হয়। এসময় বেশ কয়েকজন চিকিৎসক হামলার শিকার হন, তাদের মধ্যে দুজন নারী চিকিৎসকও আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী চিকিৎসকরা জানান, রবিবার সকালে কয়েক ধরনের জটিলতা নিয়ে চিকিৎসাধীন একজন ডায়ালাইসিসের রোগী মারা যান। এ সময় ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকজন হাসপাতালের ওয়ার্ডে প্রবেশ করে চিকিৎসকদের মারধর শুরু করেন। এসময় একটি ইসিজি মেশিন ভেঙে ফেলা হয়।
সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসক শরিফুল আহসান রাকিব  বলেন, ‘আমাদের ৫২৫ নম্বর ওয়ার্ডে আইসিইউ থেকে স্থানান্তর করা একজন ডায়ালাইসিসের রোগী ভর্তি ছিলেন। তার অবস্থা গুরুতর ছিল, যেকোনও সময় মারা যাওয়ার মতো অবস্থা ছিল। ওনার শাসকষ্ট ছিল, যার কারণে নেবুলাইজ করা হয়। নেবুলাইজ করার পরই তিনি কিডনি ফেল করে মারা যান। এসময় রোগীর পরিবার ভুল চিকিৎসার অভিযোগ তোলে। কিন্তু তারা কোনও অভিযোগ অফিসিয়ালি না দিয়ে, হতে পারে প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে বাইরে থেকে আরও কয়েকজন ছেলেকে ডেকে নিয়ে এসে হামলা করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার (৩১ আগস্ট) ঢাকা মেডিক্যালে হামলা, আর এখন এখানে হামলা— এগুলো আসলে বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। প্রথমে ১০-১২ জন এসে টার্গেট করে চিকিৎসককে খোঁজেন তারা। কিন্তু পাননি। কারণ চিকিৎসকরা রাউন্ডে ছিলেন। হঠাৎ করে দেখি, ইসিজি মেশিন ভেঙে ফেলছে। আমরা বাইরে ছিলাম, দৌড়ে সেখানে গিয়ে তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু হামলাকারীদের একজন কলার চেপে ধরলেন, আমার সঙ্গে থাকা চিকিৎসককে। ধরে টেনে নিয়ে গেলেন। তারা উগ্র হয়ে আরও কয়েকজনকে মারার জন্য উদ্ধত হন। ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে দেন, সেখানে নারী চিকিৎসক ছিলেন দুজন। তাদেরকেও লাঞ্ছিত করেন, গায়ে হাত তোলেন। মোট তিন জন চিকিৎসকের গায়ে হাত তোলা হয়েছে।’

চিকিৎসকরা আরও জানান, হামলার সময় হাসপাতালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনও উপস্থিতি ছিল না। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে আছেন এখানকার চিকিৎসকরা। হামলার খবর পেয়ে হাসপাতালে আসেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এসময় একজনকে আটক করা হয়। এছাড়া পুলিশ আসলে আরও দুজনকে তাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা ঘটনাগুলো নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. শফিউর রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এসময় তারা চিকিৎসকদের নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি তোলেন এবং হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার দাবি জানান। পরিচালক তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন এবং তিনটি ধারায় মামলা করার নির্দেশ দেন। তবে চিকিৎসকরা তাতে আশ্বস্ত না হয়ে ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দেন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেন। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত হাসপাতালে চিকিৎসকদের সঙ্গে পরিচালকের আলোচনা চলছিল। নিরাপত্তার দাবিতে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করছেন।