র‌্যাব হেফাজতে জেসমিনের মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদনে হাইকোর্টের ক্ষোভ

প্রকাশিত: ৭:২৩ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন অস্পষ্ট উল্লেখ করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট। এ সংক্রান্ত বিষয়ে আসা প্রতিবেদন সন্তোষজনক না বলে জানিয়েছেন রিটকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।
তিনি বলেন, গ্রেফতারের প্রক্রিয়া উল্লেখ নেই। আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করার পর এ বিষয়ে জারি করা রুলের ওপর শুনানির জন্য আগামী ২৯ নভেম্বর পরবর্তী দিন ঠিক করেছেন আদালত।
আজ রোববার (১৫ অক্টোবর) হাইকোর্টের বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহাম্মদ মাহবুব উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। এ দিন আদালতে শুনানিতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। আর রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ (এএম) আমিন উদ্দিন।
এর আগে নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের কমিটিকে দুই মাস সময় বেঁধে দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালত বলেছেন, এটা সেনসিটিভ ম্যাটার। বারবার সময় দেওয়া হবে না। দুই মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে শুনানিতে গত ১৩ জুন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চ এ কথা বলেন। ওই দিন আদালতে তদন্ত কমিটির পক্ষে দুই মাস সময় চেয়ে আবেদন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস। তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। উচ্চ পর্যায়ের কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অ্যাভিডেন্স সংগ্রহ করেছেন। আরও আনুষঙ্গিক কাজ রয়েছে। তদন্ত শেষ করতে দুই মাস সময় প্রয়োজন।
এ সময় রিটের পক্ষের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক সময় আবেদনের বিরোধিতা করে বলেন, তারা আদালতের আদেশের এক মাস দুই দিন পর কমিটি গঠন করেছে। এখানে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। দুই মাস সময় দেওয়া ঠিক হবে না।
তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে হাইকোর্ট বলেন, আমরা দুই মাস সময় দিচ্ছি। দুই মাস কিন্তু দুই মাসই। এ সময়ের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। এটা সেনসিটিভ ম্যাটার। বারবার সময় দেওয়া হবে না। পরে আদালত দুই মাস সময় আবেদন মঞ্জুর করে আদেশ দেন।


গত ৫ এপ্রিল নওগাঁয় র‌্যাব হেফাজতে ভূমি অফিসের সহকারী সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ওই ঘটনায় জড়িত র‌্যাব সদস্যদের দায়িত্ব থেকে আপাতত সরিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট একই বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। কমিটিতে জেলা জজ পদ মর্যাদার একজন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা এবং চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে রাখতে বলা হয়। তদন্ত সম্পন্ন করে কমিটিকে ৬০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়।
তদন্তকালীন জেসমিনকে গ্রেফতারের সঙ্গে র‌্যাবের যেসব সদস্য জড়িত ছিলেন তাদের দায়িত্ব পালন থেকে সরিয়ে রাখতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া মামলা ছাড়াই সুলতানা জেসমিনকে তুলে নেওয়া ও গ্রেফতার কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। হাইকোর্টের আদেশে পরে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব।
গত ২৮ মার্চ র‌্যাব হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনায় একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারকের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশনা চেয়ে রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক। জনস্বার্থে দায়ের করা এ রিটে স্বরাষ্ট্র সচিব, র‌্যাবের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টায় নওগাঁ শহরের নওযোয়ান মাঠের সামনে থেকে সুলতানা জেসমিনকে আটক করে র‌্যাব। এরপর র‌্যাব হেফাজতে থাকা অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রথমে তাকে নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। ২৪ মার্চ সকালে রামেক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।