জেলা প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর
লক্ষ্মীপুরে কাঠমিস্ত্রি রিয়াজ হোসেনকে (২৫) হত্যার দায়ে দুইজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও ১ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- কাউসার হোসেন (৩১) ও রাকিব হোসেন (২৫)। কাউসার সদর উপজেলার মান্দারী ইউনিয়নের পশ্চিম যাদিয়া গ্রামের আবু তাহেরের ছেলে ও রাকিব তেওয়ারীগঞ্জ ইউনিয়নের বিনোদধর্মপুর গ্রামের মৃত রুহুল আমিনের ছেলে।
জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, হত্যার ঘটনায় আসামি কাউছার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে রিয়াজকে অপহরণের কথা বলে অপর আসামি রাকিব তার স্বজনদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে বলে জবানবন্দি দিয়েছেন। দুজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। রায়ের সময় তারা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তাদেরকে লক্ষ্মীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারের পর থেকে তারা কারাগারেই ছিলেন।
২০২৩ সালের ১ এপ্রিল মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও চন্দ্রগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবদুর রহিম দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষীদের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত মামলা রায় দেন। এর আগে একই বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি রাতে রিয়াজকে হত্যা করা হয়। নিহত রিয়াজ দত্তপাড়া ইউনিয়নের করইতলা গ্রামের মৃত খোকনের ছেলে।
অভিযোগপত্র থেকে আসামিদের দেওয়া জবানবন্দি সূত্রে জানা যায়, কাউসার চন্দ্রগঞ্জের কামারহাট বাজারে একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন। একপর্যায়ে তাকে বাদ দিয়ে রিয়াজকে কাজে নেন দোকান মালিক। তবে কাউসার ও রিয়াজ পরিচিত ছিলেন। এতে রিয়াজ বিভিন্ন সময় কাউসারকে ডেকে এনে নকশার কাজ করাতেন। এর মধ্যে রিয়াজ তার ভাই দ্বীন ইসলাম রুবেলের মান্দারী বাজার ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতে কাউসারকে বলেন। এতে কাউসার রাজি হন। পরে দুজনে একসঙ্গে কাজ করতেন।
কাজ করার সময় রিয়াজ গোপনে কাউসারের মোবাইল থেকে তার স্ত্রীর নম্বর নিয়ে নেন। এরপর ৩-৪ বার কাউসারের স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন। এর মধ্যে মান্দারী বাজার এলাকায় দিঘলী রোডে তারা একটি বাসা ভাড়া নেন। এরপর রিয়াজ ফেনী কাজের উদ্দেশ্যে চলে যান। রিয়াজের কল পেয়ে কাউসারও সেখানে যান। সেখানে কাজ করালেও রিয়াজ তাকে কোনো টাকা দেননি। পরে কাউসার এলাকায় চলে আসে। এক সপ্তাহ পর রিয়াজ এলাকায় এসে ভাড়া বাসা ছেড়ে দিতে বলেন। এতে কাউসার রাগান্বিত হয়ে তাকে শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আর ভাড়া বাসায় প্রায়ই তারা দুধ ও জুসের সঙ্গে মিশিয়ে ঘুমের ওষুধ খেতেন। ১৪ ফেব্রুয়ারি সকালে রিয়াজ ফোন করে তাকে মিশিয়ে ঘুমের ওষুধ বানাতে বলেন। একইদিন রাতে ভাড়া বাসায় দুজনে ঘুমের ওষুধ খায়। কিন্তু কাউসার কৌশলে রিয়াজের পানিয়তে ১০টি ঘুমের ট্যাবলেট দিয়ে দেন। পরে কাউসার তার হাত-পা বেঁধে ফেলেন।
মান্দারী বাজার থেকে চা খেয়ে এসে রিয়াজকে নড়াচড়া করতে দেখেন তিনি। এ সময় রিয়াজ তার কাছে হাত-পা বাঁধার কারণ জানতে চায়। তখন মাথা চেপে ধরে গামছা দিয়ে শ্বাসরোধ করে রিয়াজকে হত্যা করেন কাউসার। পরে রিয়াজের বিকাশ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে নেন তিনি। পরদিন কাউসার তার জেঠাতো শ্যালক রাকিবকে ফোন দিয়ে ডেকে আনেন এবং রিয়াজকে অপহরণের ঘটনা জানান। পরে রিয়াজের পরিবারকে ফোন দিয়ে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এতে রিয়াজের ভাই রুবেল ৫০ হাজার টাকা দেবেন বলে জানান। পরে রুবেল বিকাশে তাকে ২ হাজার টাকা পাঠান। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার এড়াতে তারা চট্টগ্রাম গিয়ে একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন। কিন্তু রুবেল ফোনে রিয়াজের ছবি পাঠাতে বলেন। এতে ১৬ ফেব্রুয়ারি লক্ষ্মীপুর আসার পথে কাউসারকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। পরে কাউসারের তথ্য অনুযায়ী চট্টগ্রামের হোটেল থেকে রাকিবকেও গ্রেপ্তার করা হয়। হত্যার ঘটনায় নিহত রিয়াজের মা খুরশিদা বেগম বাদী হয়ে চন্দ্রগঞ্জ থানায় মামলা করেন।