লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্র শিমুল হত্যায় ৬ জনের যাবজ্জীবন

প্রকাশিত: ৭:১৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৯, ২০২৩

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি:

লক্ষ্মীপুরে স্কুলছাত্র রবিউল ইসলাম শিমুল (১৪) হত্যা মামলায় ছয়জনকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাদের প্রত্যেকের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা এবং অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রহিবুল ইসলাম এ রায় দেন। মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাজল ইসলাম তাজু ভূঁইয়া নামে একজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত।

জেলা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রায় ঘোষণার সময় দণ্ডপ্রাপ্ত ইলিয়াস আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন।

সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের দেওপাড়া গ্রামের মৃত সিরাজ মিয়ার ছেলে ইলিয়াস, সদর উপজেলার বশিকপুর গ্রামের মাসুদুর রহমান কালা মাসুদ, উত্তর জামিরতলী গ্রামের নুর মোহাম্মদ লিটন, পশ্চিম লতিফপুর গ্রামের সাদ্দাম, আনোয়ার হোসেন সাদ্দাম ও নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের আমান উল্যাহপুর ইউনিয়নের গোবিন্দের খিল গ্রামের শাহরিয়ার রাশেদ।

খালাসপ্রাপ্ত তাজু ভূঁইয়া চন্দ্রগঞ্জের আমানী লক্ষ্মীপুর গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে ও চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্যসচিব।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ভুক্তভোগী শিমুল মামলার বাদী কাজী মামুনুর রশীদ বাবলুর ভাগিনা। ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল বাবলু অসুস্থ হয়ে লক্ষ্মীপুরে একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। বাড়িতে তার মা-ভাবি ও ভাগিনা ছিল। ওই দিন রাত সাড়ে ৯টার দিকে অস্ত্র হাতে কয়েকজন মুখোশধারী বাবলুর বাড়িতে ঢোকে।

এ সময় ভয়ে বাবলুর মা ও ভাবি পালিয়ে যান। কিন্তু পালায়নি শিমুল। পরে সন্ত্রাসীরা ঘরের আসবাবপত্র ভাঙচুর করলে শিমুল বাধা দেয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিমুলকে তুলে নিয়ে দেওপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় গুলি করে হত্যা করে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতালে পাঠায়।
ঘটনার ১৪ দিন পর ৫ মে বাবলু বাদী হয়ে লক্ষ্মীপুর সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
প্রায় ছয় বছর পর ২০২০ সালের ৪ মার্চ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) নোয়াখালী কার্যালয়ের পুলিশ পরিদর্শক মো. আনোয়ার উল ইসলাম আদালতে সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন।

এর আগে চন্দ্রগঞ্জ পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দুইজন উপপরিদর্শক, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক পুলিশ পরিদর্শক ও ডিবির চারজন উপপরিদর্শক মামলাটি তদন্ত করেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালত আজ এ রায় দেন।

আদালতে পুলিশের দেওয়া অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, আসামিরা সন্ত্রাসী জিসান বাহিনীর সদস্য ছিলেন। আর বাদী বাবলু আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এ জন্য ঘটনার দিন ভয়-ভীতি দেখানোর জন্য মুখোশ পরে আসামিরা বাবলুর বাড়িতে সশস্ত্র হামলা চালায়। একপর্যায়ে তার ভাগিনা শিমুলকে তুলে নিয়ে গুলি করে। পরে লাশ ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। তদন্তকালে এ ঘটনার সঙ্গে জিসান বাহিনীর প্রধান জিসান জড়িত থাকার সত্যতা পাওয়া যায়। কিন্তু র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি জিসান কুমিল্লার দাউদকান্দিতে মারা যান। জিসান মারা যাওয়ায় তাকে আসামি করা হয়নি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।

মামলার বাদী ও চন্দ্রগঞ্জ থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক কাজী মামুনুর রশিদ বাবলু বলেন, আমাকে হত্যা করতে গিয়ে আসামিরা শিমুলকে হত্যা করেছে। আমি আদালতের রায়ে সন্তুষ্ট। তাজু আইনি লড়াইয়ে জিতেছে। আদালত তাকে খালাস দিয়েছে। এতে আমার কিছু বলার নেই।