ফুলবাড়িয়া প্রতিনিধি:
ফুলবাড়িয়া উপজেলার সন্তোষপুর বন এলাকায় সরকারি অনুমোদন ছাড়াই শতাধিক স’মিলে (করাত কল) চলছে রমরমা বাণিজ্য। অনুমোদনহীন এসব স’মিলে মাসের পর মাস চলছে চোরাই কাঠ চেরাই। এতে সাবাড় হচ্ছে মূল্যবান বনজ, ফলদসহ নানা প্রজাতির গাছ।
এসব করাত কলে দেদার চলছে বনের কাঠ চেড়াই। এতে বন উজাড় হওয়ায় নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। অথচ এসব দেখার যেন কেউ নেই। এসব করাত কল সরকারি আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছে স্থানীয় সচেতন মহল।
বন বিভাগের তথ্যমতে, বন আইন ১৯২৭ ও বিধিমালা ২০১২ অনুযায়ী বন এলাকার ৫ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে কোনো স’মিল গড়ে উঠতে পারবে না। স’মিল মালিক লাইসেন্স না নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না। লাইসেন্স নেওয়ার পর থেকে প্রতিবছর তা নবায়ন করতে হবে।
জানা গেছে, ফুলবাড়িয়া উপজেলায় শতাধিক করাত কল রয়েছে। যার মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে মাত্র চারটির। কিন্তু সেগুলো এখনও নবায়নও হয়নি ঠিকমতো। বাকিগুলোর নেই কোনো অনুমোদন।
ফুলবাড়িয়া পৌর সদরের ভালুকজান বাজারে করাত কলের হাট বললেই চলে, প্রতিটি বাজারের মোড়ে এবং বাজারের পাশে রয়েছে করাত কল।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সন্তোষপুর বন এলাকার ভেতরেই রয়েছে প্রায় ৫০টি করাত কল। কেউ বনের জায়গা ভাড়া নিয়ে, আবার কেউ নিজস্ব জায়গায় যত্রতত্র করাত কল স্থাপন করে বছরের পর বছর ব্যবসা করে আসছেন। স’মিল চালানোর ক্ষেত্রে সরকারের সুনির্দিষ্ট বিধান থাকলেও ফুলবাড়িয়া উপজেলার চিত্র একেবারেই ভিন্ন। কোনো কোনো মালিক ১৫-২০ বছর ধরে অনুমোদন ছাড়াই স’মিল চালাচ্ছেন। লাইসেন্সহীন এসব করাত কল বন্ধ করার কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। তবে এসব স’মিলে সন্তোষপুর বন এলাকার সামাজিক বনায়নের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ মজুত করে রেখেছে। কাকডাকা ভোর থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এসব মিলে বিরামহীনভাবে চলে কাঠ চেরাই কাজ।
অভিযোগ উঠেছে, বছরে দু-একবার বন বিভাগের রেঞ্জ অফিস থেকে অবৈধ করাত কলগুলোতে অভিযান চালালেও অভিযান শেষে আবার চালু করেন মালিকরা। এ ছাড়া বন বিভাগের স্থানীয় গার্ডরা অবৈধ করাত কল থেকে মাসোহারা নিচ্ছেন এমন অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে কালাদহ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দদীঘি এলাকার স’মিল মালিক বুলবুল হোসেন ও কাজল মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে স’মিল চালাচ্ছেন তারা। এতে কোনো সমস্যা হয়নি। কেউ লাইসেন্স করার বিষয়ে কখনো কিছু বলেনি। কেউ বিষয়টি জানালে লাইসেন্স করার উদ্যোগ নেওয়া হতো।
পৌরসভার ভালুকজান স’মিলের বাজার এলাকার সমাজসেবক নাজমুল হক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে পৌর এলাকায় করাত কলের ব্যবসা চলছে। এই করাত কলের কারণে আমরা বাসায় ঘুমাতে পারি না। ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখার সমস্যা হচ্ছে। একাধিকবার বলেছি তারা কর্ণপাত করে না।’
স’মিল মালিক ফজলুল হকের দাবি, অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছেন। এখনও অনুমোদন পাননি।
ভালুকজান বাজারের বৈধ করাত কলের মালিক নেকবর আলী আক্ষেপ করে বলেন, ‘অনেক টাকা খরচ করে লাইসেন্স করেছি। লাইসেন্স করে কি লাভ! অবৈধ করাতকলের মালিকরা ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।’
আব্দুল কুদ্দুস নামে একজন জানান, ফুলবাড়িয়া উপজেলায় চারটি করাত কলের লাইসেন্স আছে। বাকিগুলো অবৈধ। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
সন্তোষপুর বিট কর্মকর্তা এমদাদুল হকের ভাষ্য, ১৫ দিন ধরে যোগদান করেছেন তিনি। এখনও এলাকা ঘুরে দেখা হয়নি। সরেজমিন ঘুরে অবৈধ স’মিল পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী জালাল বলেন, বিষয়টি জানতে পেলাম। অচিরেই অবৈধ স’মিল বন্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।