লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যু : স্বাস্থ্যের ডিজিকে তদন্তের নির্দেশ

প্রকাশিত: ৬:১৬ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৪

মোঃ সাইফুল ইসলামঃ 

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে আটকে পড়ে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমোটো) গ্রহণ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ঘটনা তদন্তপূর্বক কাদের অবহেলায় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হলো তা শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছে কমিশন।

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা ইউশা রহমান সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গাজীপুরে হাসপাতালের লিফটে আটকে রোগীর মৃত্যুর ঘটনা জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন স্বপ্রণোদিত অভিযোগ (সুয়োমোটো) গ্রহণ করেছে।

কমিশনের ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক সুস্মিতা পাইক স্বাক্ষরিত সুয়োমোটোর বিষয়বস্তুতে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লিফটে দীর্ঘ সময় আটকে থাকার পর এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। লিফটের ভেতরে আটকে পড়া রোগীর স্বজনেরা লিফটম্যানদের কল দিলে উদ্ধার না করে তারা দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ কল করলে ফায়ার সার্ভিস এসে তাদের উদ্ধার করে।

গৃহীত সুয়োমোটোতে উল্লেখ রয়েছে, চিকিৎসা সেবা নিতে হাসপাতালে এসে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত লিফটে আটকে থেকে মৃত্যুর অভিযোগটি অত্যন্ত মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো সরকারি হাসপাতালে এ ধরনের ঘটনা অত্যন্ত অনভিপ্রেত। ওঠানামা করার জন্য লিফট একটি অত্যাধুনিক বিদ্যুৎ চালিত যন্ত্র, নিয়মিতভাবে যার ত্রুটিবিচ্যুতি পরীক্ষা নিরীক্ষা করার প্রয়োজন হয়। শহীদ তাজউদ্দীন হাসপাতালের ওই লিফট নিয়মিতভাবে পরীক্ষা করা হয় কি না তা কমিশনের নিকট বোধগম্য নয়।

বারবার ফোন করার পরেও কেনো লিফটম্যানরা ঘটনাস্থলে পৌঁছায়নি তা নিবিড়ভাবে তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক বলে কমিশন মনে করে। উল্লিখিত ঘটনার সঠিক তদন্তপূর্বক কাদের অবহেলায় লিফটে ৪৫ মিনিট আটকে থেকে রোগীর মৃত্যু হলো তা শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বলা হয়েছে।

আদেশের অনুলিপি জ্ঞাতার্থে গাজীপুরের জেলা প্রশাসক, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব বরাবর পাঠানো হয়েছে। আগামী ২৫ জুন প্রতিবেদনের জন্য ধার্য করা হয়েছে।

গতকাল রোববার সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ৩ নম্বর লিফটে আটকে পড়ে মমতাজ বেগম নামে এক নারীর মৃত্যু হয়। পরে জয়দেবপুর ফায়ার স্টেশনের কর্মীরা গিয়ে লিফটে আটকে পড়া ওই রোগীর মরদেহ ও অন্যান্যদের উদ্ধার করেন। লিফট অপারেটরদের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ওই নারীর স্বজনরা।মৃত মমতাজ বেগম গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের বাড়িগাঁও গ্রামের শারফুদ্দিন বিএসসির স্ত্রী।

মমতাজের মেয়ে শারমিন আক্তার বলেন, ‘মাকে নিয়ে লিফটে উঠলে ৯ তলার মাঝামাঝি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় আমি, আমার মামা, ভাইসহ কয়েকজন মাকে নিয়ে ভেতরে ছিলাম। আমাদের দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। আমরা লিফটে থাকা তিনজন লিফটম্যানের নম্বরে কল দিই। তারা ফোনে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। ৪৫ মিনিট ভেতরে অবস্থান করার পর উপায় না পেয়ে ৯৯৯-এ ফোন দেই। ফোন পেয়ে পরে ফায়ার সার্ভিস এসে আমাদের উদ্ধার করে।