আন্তর্জাতিক ডেস্ক রিপোর্টঃ
ভারতের লোকসভা নির্বাচন সামনে রেখে ইশতেহার ঘোষণা করেছে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস। সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধী ও মল্লিকার্জুন খাড়গে গত শুক্রবার দিল্লিতে দলের সদর দপ্তরে এই নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ করেন। এতে ৩০ লাখ সরকারি শূন্য পদে চাকরি, ২৫ লাখ রুপি পর্যন্ত নগদহীন স্বাস্থ্যবিমা, নারীদের আর্থিক সহায়তা, জাত গণনা এবং ৫০ শতাংশ পর্যন্ত জাতভিত্তিক সংরক্ষণ (এসসি, এসটি ও ওবিসিদের জন্য), আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া উচ্চবর্ণের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।
জানুয়ারিতে ‘ভারত জোড়ো ন্যায়যাত্রা’য় রাহুল জানিয়েছিলেন, তার এই যাত্রা পাঁচটি ন্যায়ের ওপর দাঁড়িয়ে। তা হলো নারী, তরুণ, কৃষক, শ্রমিক ও ভাগীদারি বা জনসংখ্যা অনুযায়ী ক্ষমতায় অংশগ্রহণের ন্যায়ের দাবি। সেই ন্যায়ের অঙ্গীকারের সঙ্গে সংগতি রেখেই তৈরি হয়েছে কংগ্রেসের নির্বাচনি ইশতেহার ন্যায়পত্র ২০২৪।এতে কৃষকদের জন্য ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নিশ্চিত করার আইনি অধিকার নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে কৃষিবিজ্ঞানী এম এস স্বামীনাথনের নেতৃত্বাধীন কমিটির সুপারিশ মেনে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে।
ইশতেহারে রয়েছে, শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে অবকাঠামো উন্নয়ন কর্মসূচি চালু করার কথাও। একই সঙ্গে রয়েছে ২৫ বছরের কম বয়সী স্নাতকদের জন্য এক বছরের জীবিকামুখী শিক্ষানবিশ হওয়ার সুযোগ দেওয়ার সাংবিধানিক অধিকারের কথা। জম্মু ও কাশ্মীরের পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে। নরেন্দ্র মোদির আমলে চালু করা অস্থায়ী ‘অগ্নিবীর’ নিয়োগ কর্মসূচি বাতিল করে সেনাবাহিনীতে স্থানীয় নিয়োগ কর্মসূচি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছে কংগ্রেসের নির্বাচনি ইশতেহারে।
আগামী ১৯ এপ্রিল ভারতে লোকসভা নির্বাচন শুরু হবে। সাত ধাপে এই নির্বাচন হবে। লোকসভা নির্বাচন ঘিরে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আগেই নিজেদের ইশতেহার তুলে ধরল কংগ্রেস। বলা হচ্ছে, নির্বাচনি ইশতেহার ঘোষণার মাধ্যমে আগেভাগেই লড়াইয়ে নামল কংগ্রেস। যদিও বিজেপি ও বিরোধী পক্ষ দুই শিবিরই মনে করছে, এখনো ভোটের তেমন ‘হাওয়া’ ওঠেনি। বিরোধী শিবিরের পক্ষে বিরাট জনসমর্থন তৈরি হয়নি সেটা ঠিক। কিন্তু বিজেপির পক্ষেও যে প্রবল ঢেউ উঠেছে, তা-ও নয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী শিবিরের আশা, এখনো পর্যন্ত যা পরিস্থিতি, তাতে লোকসভা নির্বাচন একতরফা হবে না।
রাহুল গান্ধী কংগ্রেসের নির্বাচনি ইশতেহার প্রকাশ অনুষ্ঠানে বলেন, আমি ভবিষ্যদ্দ্রষ্টা নই। তবে আমার বিশ্বাস, যে রকম প্রচার হচ্ছে, সেই তুলনায় অনেক বেশি সমানে সমানে লড়াই হবে। ১০ বছর আগে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, তার সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির ‘অচ্ছে দিন’-এর স্বপ্ন ভারতে ঢেউ তুলেছিল।
২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ঠিক আগে, পুলওয়ামায় সিআরপি কনভয়ে জঙ্গি হানা ও তার জবাবে বালাকোটে বিমানবাহিনীর অভিযান ভারত জুড়ে জাতীয়তাবাদের আবেগ উসকে দিয়েছিল। তেমন হাওয়া এখনো পর্যন্ত তৈরি হয়নি।নরেন্দ্র মোদি অবশ্য আগেই বলে রেখেছেন, বিজেপি ৩৭০ আসনে জিততে চলেছে এবং ৫৪৩ আসনের লোকসভায় এনডিএর আসনসংখ্যা ৪০০ পেরিয়ে যাবে। উল্টো দিকে রাহুল রামলীলা ময়দানের জনসভায় দাবি করেছেন, ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ না হলে বিজেপি ১৮০তে নেমে আসবে।
তবে বিজেপি শিবিরের যুক্তি, রাহুলের দাবি ভিত্তিহীন। রামমন্দির ঘিরে দেশে হিন্দুদের মধ্যে আবেগ তৈরি হয়েছে। মোদি সরকারের কাজে সবাই খুশি। সর্বোপরি বিরোধী শিবিরে নরেন্দ্র মোদির বিকল্প কেউ নেই। সে কারণে বিজেপি ২০১৯-এর থেকেও বেশি আসনে জিততে চলেছে। তবে রাহুল গান্ধী পালটা যুক্তি দিয়েছেন, ‘অটলবিহারি বাজপেয়ির সময়েও একই রকম আবহ তৈরি করা হচ্ছিল। ইন্ডিয়া শাইনিংয়ের প্রচার চলছিল। এবার তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক মাত্রা যোগ হয়েছে। কিন্তু সেবারের নির্বাচনে কে জিতেছিল, তা মনে করুন।
‘ইন্ডিয়া’ জোটের এক নেতার দাবি, রামমন্দিরের উদ্বোধন ঘিরে হিন্দু ভাবাবেগ তৈরি হয়েছিল। তার পরে আড়াই মাস কেটে গেছে। বিজেপি রামমন্দিরের আবেগে ভর করেই ভোটে উতরে যাবে ভেবেছিল। মনে হচ্ছে, বিজেপির হিসাবে ভুল হয়েছে। বিরোধী শিবিরের নেতাদের দাবি, বিজেপিও এখন তা বুঝতে পারছে। আর সে কারণেই বিরোধী নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে, যে কোনো বিরোধী নেতাকে বিজেপিতে টেনে এনে প্রার্থী করে দেওয়া হচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্ব মরিয়া। কারণ, উত্তর ভারতে গত ভোটেই বিজেপি খুব ভালো ফল করেছিল। সেখানে আর আসন বাড়ানোর সুযোগ নেই। কর্ণাটক, বিহার, মহারাষ্ট্রেও বিজেপি বা এনডিএর যেমন আগের বারের মতো ভালো ফল করা কঠিন, তেমনি সেখানে আসন কমলে দক্ষিণের অন্যান্য রাজ্য থেকে তা পূরণ করাও কঠিন।
কংগ্রেস নেতৃত্বের একটাই আশঙ্কা যে, মোদি আগামী ১৪ দিনে নতুন বিষয় এনে বিজেপির পক্ষে প্রবল ঢেউ তৈরি করতে পারেন। তাহলে আর রাহুলের কথামতো ‘সমানে সমানে টক্কর’ হবে না। বিজেপি নেতারাও সেদিকেই তাকিয়ে।