ঢাকা প্রতিনিধি:
রাস্তায় চলতে ফিরতে নাগরিকমাত্রই ভয়াবহ শব্দ তাণ্ডবের শিকার। রাজধানী ঢাকা যেন শব্দদূষণের সর্বোচ্চ মাত্রা অতিক্রম করেছে। সহনীয় মাত্রার অতিরিক্ত শব্দ আমরা যখন দিনের পর দিন শুনতে বাধ্য হই, তখন তা আমাদের শরীর ও মনের ওপর তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। যে শব্দগুলো আমাদের দেহমনে বিরক্তির উদ্রেক করে, শক্তির অপচয় ঘটায় এবং সর্বার্থেই স্বাস্থ্যের পক্ষে হানিকর, সেগুলোই মূলত শব্দদূষণের জন্য দায়ী।
বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে, হাসপাতাল কিংবা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-সংশ্লিষ্ট নীরব এলাকায় দিনে ৫০, রাতে ৪০ ডিবি শব্দমাত্রা থাকা উচিত। এর বেশি থাকলেই আমাদের পক্ষে ক্ষতিকর। শব্দের তীব্রতায় দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে করোনারি হার্ট ডিজিজ, মাইগ্রেন, নিদ্রাহীনতা ইত্যাদি শারীরিক জটিলতা দেখা দিতে পারে। উচ্চ মাত্রার শব্দের ভেতর দীর্ঘক্ষণ থাকলে মানসিক চাপ বেড়ে যায়। মেজাজ খিটখিটে হয়ে ওঠে।
আমাদের দেশে যারা গাড়ি চালান, ভাবখানায় মনে হয়, গোটা রাস্তাই তাদের। প্রয়োজন ছাড়াও যত্রতত্র হর্ন বাজানো যেন তাদের অধিকার। নগরীর রাস্তায় মোটরবাইক এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা উচ্চ মাত্রার হর্ন বাজানোয় সবচেয়ে এগিয়ে। এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ব্যাটারিচালিত রিকশা যেন শব্দদূষণের মূর্ত প্রতীক। প্রাইভেট কার, বাস ওদের কাছে তুচ্ছ।
যখন খুশি যেভাবে খুশি, যতক্ষণ অনবরত বিরক্তিকর হর্ন বাজিয়ে নাগরিকদের কান ঝালাপালা করে সজোরে এগিয়ে চলে। হর্ন বাজানোটাই যেন চরম আনন্দের কাজ। এ ক্ষেত্রে পথচারীরা যে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছে, সেদিকে কারও তোয়াক্কা নেই।
১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর বিমানবন্দরের আশপাশের দুই থেকে তিন কিলোমিটার এলাকা বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার পরীক্ষামূলক নীরব এলাকা বা সাইলেন্স জোন ঘোষণা করেছে। এটি অবশ্যই ইতিবাচক এবং জননন্দিত পদক্ষেপ। তবে পরিবেশ এবং শব্দদূষণের ভয়াবহতা নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে নীরব এলাকা ঘোষণার আন্দোলনে কেবল ভিআইপি এলাকাগুলো নয়; যেসব এলাকায় হাসপাতাল এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিক্য, অবিলম্বে সেসব এলাকা হর্নমুক্ত হিসেবে ঘোষণা করা হোক।
আমাদের দেশে পরিবেশের অন্য উপাদান যেমন বায়ু কিংবা পানীয় জলের দূষণের মতো শব্দদূষণকে তত গুরুতর ভাবা হয় না। প্রকৃতপক্ষে শব্দদূষণের পরোক্ষ প্রভাব আরও বেশি ক্ষতিকর।
শব্দদূষণের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ে জনগণকে সচেতন করে তোলা দরকার। গাড়ির হর্ন বাজানো নিয়ে চালককে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়া দরকার, যাতে হর্নের গতিবিধি নিয়ে তাদের যথেষ্ট ধারণা থাকে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে যেসব যানবাহন সড়কে অকারণে উচ্চ মাত্রার হর্ন বাজিয়ে পথচারীদের বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে তাদের জরিমানা করা প্রয়োজন। স্কুল-কলেজ এবং হাসপাতাল-সংলগ্ন এলাকায় গাড়ির গতি ও হর্নের যথাযথ মাত্রা নির্ধারণ করে দেওয়া দরকার, যেন উচ্চ শব্দ আতঙ্কের কারণ না হয়ে ওঠে। উচ্চ মাত্রার শব্দের কারণে রোগীদের ওপর যেমন অনাকাঙ্ক্ষিত চাপ পড়ে, তেমনি ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার একাগ্রতায় বিঘ্ন ঘটে। এ বিষয়ে সব শ্রেণির মানুষের সচেতন হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।