শহীদ বুদ্ধিজীবী ও মহান বিজয় দিবস ঘিরে সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার

প্রকাশিত: ৬:৫৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১২, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:
আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস ঘিরে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। দিবস দুটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনে জাতীয় কর্মসূচীসমূহ সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ইতোমধ্যেই সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।


পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মাঠ প্রশাসন থেকে ঊর্ধ্বতন পর্যায়ে সার্বিক দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দিবস দুটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্তে ইতোমধ্যেই পুলিশ সদর দপ্তরে শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করা হয়েছে। ওই বৈঠকেই দিবস দুটি উদযাপনে নিরাপত্তার বিষয়ে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক কর্মসূচীর নামে ঘটে যাওয়া নাশকতা-সহিংসতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। রাজনৈতিক কর্মসূচীর যে অস্থিরতা বিরাজ করছে তা মাথায় রেখেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সকল কর্মকর্তাকে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


আজ মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ সদর দপ্তরে যোগাযোগ করা হলে এআইজি (মিডিয়া) মনজুর রহমান নিউজ পোস্টকে বলেন, ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। এ দুটি দিবসই রাষ্ট্রীয়। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও দিবস দুটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কর্তব্যরত মাঠ পর্যায়ের পুলিশ প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থাকে সর্বাত্বক নিরাপত্তা নিশ্চিতে কঠোর দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নর জবাবে তিনি বলেন, দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাসহ অন্যান্য বিষয়কে মাথায় রেখেই নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছে। দিবস দুটি ঘিরে এই মুহুর্তে কোনো গোষ্ঠী বা মহল বিশেষের কাছ থেকে কোনো হুমকি পাওয়া যায়নি। আপাতত কোনো ধরণের হুমকিও দেখছি না। তবে সব ধরনের বিষয়টি মাথায় রেখেই আমরা আমাদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ জন্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।


এদিকে ডিএমপি জানায়, আগামী ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য নিরাপত্তা সংক্রান্তে গত ৪ ডিসেম্বর ডিএমপি সদর দপ্তরে এক সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান।
ওই সভায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও আসন্ন বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে জ্বালাও-পোড়াও এবং ককটেল বিস্ফোরণের বিষয়গুলো একেবারে উপেক্ষা করা যাবে না। ইতিমধ্যে তদন্তে এসেছে তারা নিজেরা এটি করেছে এবং শ্রমজীবী মানুষ ভাড়া করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। এজন্য গোয়েন্দা সংস্থা ও ইউনিফর্মধারী পুলিশ আরও বেশি সতর্ক থেকে দায়িত্ব পালন করবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান নিউজ পোস্টকে বলেন, দিবস দুটি উপলক্ষ্যে ইতিমধ্যে গত ১৮ অক্টোবর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ১২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন এলাকাসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা স্থাপনায় স্ব-উদ্যোগে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে, যা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখবে। দিবস দুটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিবেচনা করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থাকে কঠোর সতর্কতার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য দিক-নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক কর্মসূচীর মধ্যেও জাতীয় এ দুটি দিবস শান্তিপূর্ণভাবে পালনে ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা। তবে এখনো কোনো হুমকির আশঙ্কা নেই, তবে এ বিষয়টিসহ রাজনৈতিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়েই নিরাপত্তা ছক তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ডিএমপি কমিশনার।


এদিকে এ সংক্রান্তে গত ৪ ডিসেম্বর ডিএমপি সদর দপ্তরে আয়োজিত নিরাপত্তা সংক্রান্তের সমন্বয় সভায় বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, ঢাকা ওয়াসা, ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিগণ এবং ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করেন। ওই সভায় ডিএমপির যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপারেশনস্) বিপ্লব কুমার সরকার পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে সার্বিক নিরাপত্তা পরিকল্পনা উপস্থাপন করেন। সভায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস্) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (লজিস্টিকস্, ফিন্যান্স অ্যান্ড প্রকিউরমেন্ট) মহাঃ আশরাফুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (সিটিটিসি) মোঃ আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, যুগ্ম পুলিশ কমিশনারগণ, উপ-পুলিশ কমিশনারগণসহ বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।