চট্টগ্রাম প্রতিনিধি:
চট্টগ্রাম টেস্ট শেষের সংবাদ সম্মেলনে নাজমুল হোসেন শান্ত বলেছেন, জাতীয় দলের নেতৃত্ব উপভোগ করেছেন। এতেই বোঝা গেছে, নেতৃত্ব ছাড়তে চাওয়ার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে, যেটা জনসমক্ষে বলতে পারছেন না। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে– হঠাৎ করে এমন কী ঘটেছে, নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার মতো অভিমান হয়েছে তাঁর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় দল নির্বাচক প্যানেলের সঙ্গে দূরত্বের কারণে তৈরি হওয়া হতাশা থেকে অধিনায়কত্ব ছাড়তে চেয়েছিলেন তিনি। জাতীয় দলের একটি সূত্র জানায়, বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে ঘটনা খুলে বলতে পেরে মন হালকা হয়েছে তাঁর। তিনিই নেতৃত্বে থাকছেন। শান্তকে অধিনায়ক রেখে দলও ঘোষণা করা হয়েছে গতকাল।
ঢাকা টেস্টের পরই নেতৃত্ব ছেড়ে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদকে বার্তা দেন শান্ত। সভাপতি অপেক্ষা করছিলেন শান্তর সঙ্গে কথা বলার জন্য। বিদেশ থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে অধিনায়কের সঙ্গে একান্তে বৈঠক হয় সভাপতি ফারুকের। মেহেদী হাসান মিরাজের সঙ্গেও মিটিং ছিল তাঁর।
বিসিবি সভাপতি মিরাজকে বলেছিলেন, টেস্ট ও ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে। শর্ত ছিল শান্ত মত পরিবর্তন না করলে মিরাজকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু শান্তর মান ভাঙায় নেতৃত্ব বদলের প্রয়োজন হয়নি। এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে বিসিবি সভাপতিকে ফোন করে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে খোঁজ নিয়ে শান্তর অভিমানের কারণ জানা গেছে। প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু ও নির্বাচক হান্নান সরকারের সঙ্গে কিছুটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে অধিনায়কের। সভাপতির কাছে শান্তর অভিযোগ ছিল, দল গঠন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচক প্যানেলের কাছ থেকে পূর্ণ সমর্থন পাচ্ছেন না তিনি।
২৭ অক্টোবর এই অভিযোগ সম্পর্কে প্রধান নির্বাচকের কাছে জানতে চাওয়া হলে বিষয়টি উড়িয়ে দেন। লিপু বলেন, ‘শান্তর সঙ্গে আমাদের সেভাবে দেখাই হয় না। ১৫ দিনে এক বার হতে পারে। এতে কী আর সম্পর্ক খারাপ হবে!’ হান্নান সরকারও জানান, অধিনায়ক শান্তর সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তাঁর।
বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সময় অধিনায়ক ও প্রধান নির্বাচক নিয়োগ পেয়েছেন। জাতীয় দল সূত্রে জানা গেছে, দল নির্বাচনে শান্তর কোনো মতামত থাকবে না বলে শর্ত দেওয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে লিপুকে দেওয়া হয় দল নির্বাচনে অবারিত স্বাধীনতা। কোচ ও অধিনায়কের মতামত নিয়ে ১৫ বা ১৬ সদস্যের দল গঠনে শেষ সিদ্ধান্ত প্রধান নির্বাচকের। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর দেশের ক্রিকেটে ব্যাপক পরিবর্তন এলেও দল নির্বাচন ব্যবস্থা আগের মতোই রয়ে গেছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অধিনায়ক শান্তও আশা করেছিলেন তাঁর চাওয়াকে গুরুত্ব দেওয়া হবে। নির্বাচক প্যানেলের কাছ থেকে সেই সমর্থন না পাওয়ায় অভিমান হয় শান্তর।
অভিমান করার কারণও আছে, ব্যর্থতার পুরো দায়টা যে তাঁকেই নিতে হয়। যদিও দলের ভেতর থেকে প্রশ্ন উঠেছে অধিনায়কের ব্যাটিং পারফরম্যান্স নিয়ে। তাই আসন্ন সিরিজ দুটি শান্তর জন্য টিকে থাকার পরীক্ষা। ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ভালো হলে নির্বাচকদের কাছ থেকে নিজের অধিকার আদায় করে নেওয়ার লড়াইটা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিসিবি পরিচালকরাও আশা করছেন, নির্বাচক প্যানেলের কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পাবেন শান্ত।