শান্তর মাইলফলক ছোঁয়ার ম্যাচে বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর দিন
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
ক্রীড়া ডেস্ক:
সেঞ্চুরিকে যেন ছেলের হাতের মোয়া বানিয়ে ফেলেছেন নাজমুল হোসেন শান্ত। আগের টেস্টেই আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি করেছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৩৭ রানে আউট হলেও বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ এক সেঞ্চুরি করলেন বাংলাদেশের নতুন অধিনায়ক। তার অনবদ্য এই সেঞ্চুরিতে তৃতীয় দিন শেষে শক্ত অবস্থানে বাংলাদেশ। ৩ উইকেট হারিয়ে স্বাগতিকদের সংগ্রহ ২১২ রান, তাতে লিড বেড়ে ২০৫ রানে।
বৃহস্পতিবার ৪৪ রানে পিছিয়ে থেকে তৃতীয় দিনে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। শুরুতে এলোমেলো বোলিং করে সফকারীদের লিড নেওয়ার সুযোগ করে দেন বাংলাদেশের বোলাররা। লেজের দুই ব্যাটার যখন অনায়াসে ব্যাটিং করছিলেন, তখন রান আটকাতে কোনও উদ্যোগই নেননি অধিনায়ক। বাংলাদেশের করা ৩১০ পেরিয়ে ৭ রানের লিড নেয় সফরকারীরা। শেষ ২ উইকেটে ৫১ রান যোগ করে।
দ্বিতীয় ইনিংসের শুরুতেই হোঁচট খায় বাংলাদেশ। এজাজ প্যাটেলের বলে জাকির হাসান হন এলবিডব্লিউ। আর তাতেই ১৩তম ওভারে দলীয় ২৩ রানে উদ্বোধনী জুটি ভাঙে বাংলাদেশের। এরপর অধিনায়ক শান্ত ও ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয়ের দায়িত্ব ছিল ইনিংসটাকে এগিয়ে নেওয়ার। কিন্তু মাত্র ৩ রান যোগ হতেই রান আউটে কাটা পড়েন জয় (৮)। শান্তর স্ট্রেইট ড্রাইভ হাত ছুঁয়ে যায় টিম সাউদির, বল এসে লাগে নন স্ট্রাইক প্রান্তের স্টাম্পে। ক্রিজের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা জয় রান আউটের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন।
১১ বলের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরায় মুমিনুল ও শান্তর জুটি। দুইজনের ৯০ রানের জুটি হওয়ার পর ভুল বোঝাবুঝিতে দ্বিতীয়বার রান আউটের শিকার হন মুমিনুল। ২ উইকেটে ১১১ রানে দ্বিতীয় সেশনের চা বিরতিতে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু বিরতি থেকে ফিরেই রান আউটে কাটা পড়েন মুমিনুল (৪০)।
এজাজের হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া বল অন ড্রাইভ করেই রানের জন্য ছোটেন মুমিনুল। পিচের মাঝামাঝি পৌঁছে পরবর্তীতে ফিরে যান, কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। মিড অনে থাকা হেনরি নিকলস উইকেটকিপারের কাছে থ্রো করতেই রান আউট হয়ে যান অভিজ্ঞ এই ব্যাটার।
এরপর দিনের বাকি সময়টুকু শান্ত ও মুশফিক মিলেই পেরিয়ে গেছেন। তাদের অবিচ্ছন্ন ৯৬ রানের জুটিতে বড় সংগ্রহের সুবাস পাচ্ছে স্বাগতিক দল। মুশফিক ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন, শান্ত পেয়েছেন ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি। এই সেঞ্চুরি করার পথে একটি মাইলফলকও ছুঁয়েছেন বাঁহাতি এই ব্যাটার। বাংলাদেশের অধিনায়ক হিসেবে নেমে প্রথম ম্যাচে এর আগে কেউই সেঞ্চুরি করতে পারেননি। সর্বোচ্চ ৯৬ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার পুরোনো রেকর্ড ভেঙে শান্ত নিজেকে নিয়ে গেলেন অনন্য এক উচ্চতায়।
অধিনায়ক শান্ত যখন ৯৬ রানে। ঠিক তখন থেকেই তার সেঞ্চুরির অপেক্ষায় সতীর্থ ও কোচিং স্টাফরা। ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে সতীর্থ, কোাচিং স্টাফরা ছিলেন তার সেঞ্চুরির অপেক্ষায়। নিজে কোনও তাড়াহুড়া করেননি, স্বাভাবিক ব্যাটিংয়েই পৌঁছেছেন তিন অঙ্কের জাদুকরী ফিগারে। স্পিনার এজাজের বল আলতো টোকায় লং অনে পাঠিয়ে প্রান্ত বদল তার। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে অর্ধেক আসার পরই হেলমেট খুলে হাতে নিয়ে নেন। রান পূর্ণ করার পর মেতে উঠেন উল্লাসে। শূন্যে লাফ দিয়ে, ব্যাটে চুমু খেয়ে মাতেন আনন্দে। অপরপ্রান্তে থাকা মুশফিকও রান শেষ করে এসে শান্তকে জড়িয়ে ধরে উল্লাসে শরিক হন।
শান্তর এই অনবদ্য সেঞ্চুরিতে সিলেট টেস্টে চালকের আসনে বাংলাদেশ। শুক্রবার দেড় সেশন ব্যাটিং করে নিউজিল্যান্ডকে সাড়ে তিনশ লক্ষ্য দেওয়া গেলে জয়ের দারুণ সম্ভাবনা তৈরি হবে। শান্ত-মুশফিকরা যেভাবে ব্যাটিং করছেন, তাতে করে এমন স্বপ্ন দেখাই যায়!