ক্রীড়া ডেস্ক:
‘সোনার চামচ মুখে নিয়ে জন্ম’– কথাটা ব্যক্তির ক্ষেত্রে বলা হলেও শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের সঙ্গে বেশ মানিয়ে যায়। কারণ, ক্রিকেটের জৌলুস ও শারজাহ স্টেডিয়ামের জন্ম যে একই সময়ে। ১৯৮২ সালে মরুর দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রতিষ্ঠিত হয় স্টেডিয়ামটির। এক বছর পরই কপিল দেবের নেতৃত্বে প্রথমবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতে ভারত। এর পরই তরতর করে বাড়ে ওয়ানডে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা। ক্রিকেটের জৌলুস বাড়ে। শুরু হয় রমরমা ক্রিকেটীয় ব্যবসা।
১৯৮৪ সাল থেকে শারজাহ স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জলসা বসছে। এশিয়ার দর্শকদের মিলনমেলায় তখনই ওয়ানডে ক্রিকেট আঁতুড়ঘর থেকে উড়ন্ত সূচনা করে। আরবি শারজাহ শব্দের অর্থ পূর্ব। স্টেডিয়ামের দিগন্তে তাই ৩০০ সূর্য। আজ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজের প্রথম ওয়ানডে দিয়ে বিশ্বের একমাত্র ক্রিকেট স্টেডিয়াম হিসেবে ৩০০ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজনের কীর্তি গড়বে স্টেডিয়ামটি।
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছরে অর্থাৎ ১৯৮৪-২০০৩ পর্যন্ত ১৯৮ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করে ফেলে শারজাহ স্টেডিয়াম। রাজনৈতিক কারণে ২০০২ সালে পাকিস্তান এখানে নিয়মিত ম্যাচ খেলতে শুরু করে। মরুর বুকে জমে ওঠে ভারত-পাকিস্তানের উত্তপ্ত দ্বৈরথ। দর্শকের চাপের কথা বিবেচনা করে ওই বছরই স্টেডিয়ামের আসন সংখ্যা বাড়িয়ে ২৭ হাজারে উন্নীত করা হয়। তখনই একটা ধাক্কা খেয়ে বসে আইসিসির সদরদপ্তরের স্টেডিয়ামটি। নব্বইয়ের দশকে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তার সঙ্গে সঙ্গে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ বাড়তে থাকে। জুয়াড়িদের টার্গেট হয়ে দাঁড়ায় তৎকালীন সংযুক্ত আরব আমিরাতের একমাত্র ক্রিকেট স্টেডিয়াম শারজাহ। বিপদ ঠেকাতে ২০০১ সালে ভারত সরকার স্টেডিয়ামটিতে দলের ম্যাচ আয়োজনে নিষেধাজ্ঞা দেয়। ২০০৩ থেকে ২০১০ পর্যন্ত কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করতে পারেনি স্টেডিয়াম কর্তৃপক্ষ।
বিপদের বন্ধু হয়ে সাত বছর পর খুলে যায় নতুন দুয়ার। নিরাপত্তা জটিলতায় ক্রিকেট খেলুড়ে দলগুলো পাকিস্তান সফর বন্ধ করে দেয়। শারজাহ-আবুধাবিকে নিজেদের হোম ভেন্যু হিসেবে নেয় পিসিবি। শুরু হয় নতুন পথচলা। করোনাকালেও বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেয় এই সংযুক্ত আরব আমিরাত, এই শারজাহ স্টেডিয়াম। ঝুঁকি নিয়েও বায়ো-বাবলে আয়োজন করে টি২০ বিশ্বকাপ। এমনকি বায়ো-বাবলে একটি আইপিএলও হয়েছে দেশটিতে।
পাকিস্তানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফেরায় অবশ্য শারজাহ স্টেডিয়ামে ম্যাচ কমেছে। তবে আফগানিস্তানের ঘরের মাঠ হিসেবে নতুন করে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে যেমন স্বাগতিকের ভূমিকায় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (এসিবি)। মরুর দেশের মাঠটি ৩০০ ম্যাচ আয়োজনের পথে পেছনে ফেলেছে সিডনি, মেলবোর্নের মতো ঐতিহাসিক সব স্টেডিয়ামকে। ২৯১ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ড আছে দুইয়ে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে হয়েছে ২৮৭ ম্যাচ। হারারে স্পোর্টস ক্লাব ও লর্ডসে যথাক্রমে ২৬৭ ও ২২৭টি ম্যাচ হয়েছে। ছয়ে আছে বাংলাদেশের হোম অব ক্রিকেট খ্যাত মিরপুর। ২১১ ম্যাচ হয়েছে এখানে।
তবে ওয়ানডের হিসাবে শারজাহর ধারেকাছে নেই কোনো স্টেডিয়াম। প্রথম স্টেডিয়াম হিসেবে ২৫০ ওয়ানডে আয়োজনের পর ২৫২-এর কীর্তিতে দাঁড়িয়ে মাঠটি। দুইয়ে থাকা হারারেতে হয়েছে ১৮২ ওয়ানডে। দেড়শ ওয়ানডের কীর্তি আছে কেবল সিডনি (১৬১), মেলবোর্ন (১৫২) ও শ্রীলঙ্কার প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের (১৫১) এবং একশর ঘরে ঢোকা মিরপুর স্টেডিয়াম (১২০) আছে ছয়ে।