শারদীয় দুর্গাপূজা ঘিরে প্রতিটি মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ভিডিও সংরক্ষণসহ ২২ নির্দেশনা দিলো ডিএমপি

প্রকাশিত: ৬:০৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১২, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্ন করতে প্রতিটি পূজামন্ডপে পর্যাপ্ত সংখ্যক সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করাসহ ২২টি নির্দেশনা দিয়েছে ডিএমপি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা-১৪৩০ উৎসবমুখর ও নিরাপদ পরিবেশে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বিগত শারদীয় দুর্গোৎসবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও নিরাপদ পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে ডিএমপি যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলো তা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার শারদীয় দুর্গাপূজা-১৪৩০ এর বিস্তারিত নিরাপত্তা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। পূজার দিনগুলোতে প্রত্যেক মণ্ডপে স্থায়ীভাবে পুলিশ ও আনসার মোতায়েনের পাশাপাশি পুলিশী টহল বৃদ্ধিসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চেকপোস্ট স্থাপন ও গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনার মাধ্যমে চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই রোধের বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ডিএমপির গৃহীত পদক্ষেপের পাশাপাশি সর্বস্তরে সচেতনতাবোধ তৈরি করা গেলে পুলিশ ও পূজা উদযাপন কমিটি বা ভক্তদের যৌথ উদ্যোগ ও অংশগ্রহণে উৎসবমুখর এবং নিরাপদ পরিবেশে শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘ধর্ম যার যার, উৎসব সবার’ এই বাণীকে আরও সমুন্নত করা সম্ভব হবে। আসন্ন শারদীয় দুর্গোৎসবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ কর্তৃক গৃহীত নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি নিম্নবর্ণিত নির্দেশনাসমূহ অনুসরণ করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। আজ বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) সকালে নিউজ পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন।


তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক বার্তায় এসব নিরাপত্তা নির্দেশনাসমূহ মেনে চলার অনুরোধ করা হয়।
নির্দেশনাসমূহ নিম্নরূপ:
১. প্রতিটি পূজামণ্ডপ বা মন্দিরে রাত্রিকালীন ভিডিও ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা।
২. প্রতিটি পূজামণ্ডপের জন্য নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের আলাদা পোশাক, দৃশ্যমান পরিচয়পত্র ও আর্মড ব্যান্ড নির্ধারণ করে দেয়া। স্বেচ্ছাসেবকদের নামের তালিকা স্থানীয় থানায় প্রেরণ করা ও থানার অফিসারের উপস্থিতিতে স্বেচ্ছাসেবকদের ব্রিফিং করার ব্যবস্থা করা।
৩. প্রবেশ ও বাহির গেট মজবুতভাবে স্থাপন, যেসব মণ্ডপে সীমানা দেয়াল নেই সেসব ক্ষেত্রে বাঁশের শক্ত বেড়া নির্মাণ এবং নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক প্রবেশ গেটের ব্যবস্থা করা।
৪. স্থানীয় কাউন্সিলর, গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে শান্তি-শৃঙ্খলা কমিটি গঠন করা এবং তাদের নাম ও মোবাইল নম্বর সম্বলিত ব্যানার দৃশ্যমান স্থানে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা।
৫. সচেতনতামূলক নির্দেশনা প্রচারের ব্যবস্থা করা।
৬. প্রতিটি পূজামণ্ডপে ঋরৎব ঊীঃরহমঁরংযবৎ স্থাপন এবং গুরুত্বপূর্ণ পূজামণ্ডপে আর্চওয়ে গেট স্থাপন করা।
৭. বৈদ্যুতিক কাজে নিম্নমানের তার ব্যবহার না করা।
৮. অগ্নি দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য পূজামণ্ডপে মোমবাতি/আগরবাতি/আরতির সময় সাবধানতা অবলম্বন করা।
৯. আনন্দ উৎসবে মাদকের ব্যবহার, জুয়া খেলা ও আতশবাজি বন্ধ রাখা।
১০. প্রতিটি পূজামন্ডপ/মন্দিরের জন্য পরিদর্শন রেজিস্টার প্রস্তুত এবং রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা।
১১. প্রতিটি পূজামন্ডপ বা মন্দির ও সমগ্র এলাকায় পর্যাপ্ত ও বিকল্প আলোর (জেনারেটর) ব্যবস্থা রাখা।
১২. পূজামণ্ডপে দর্শনার্থীদের ব্যাগ বা পোটলা ইত্যাদি নিয়ে প্রবেশ না করার জন্য অনুরোধ করা। তাছাড়া পূজামণ্ডপ এলাকায় সন্দেহজনক কোন ব্যাগ বা পোটলা পড়ে থাকতে দেখলে বা দৃষ্টিগোচর হলে নিয়োজিত আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাৎক্ষণিক অবহিত করা।

১৩. ধর্মীয় সম্প্রতি বজায় রাখা এবং অপর ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের লক্ষ্যে আযান ও নামাজের সময় এবং মসজিদের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় বাদ্য বাজানো বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করা।
১৪. পূজামণ্ডপ সংলগ্ন স্থান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা এবং পূজামণ্ডপ ও আশপাশ এলাকায় মেলা না বসানো।
১৫. পুলিশ ও আনসার সদস্যদের জন্য ওয়াশরুমসহ স্বাস্থ্যকর আবাসনের ব্যবস্থা রাখা।
১৬. পূজার প্রসাদ প্রস্তুত করার সময় সতর্ক দৃষ্টি রাখা এবং পূজামন্ডপসমূহে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা।
১৭. পূজামণ্ডপ কেন্দ্রিক কোন বিরোধ থাকলে তা পূজা উদযাপন কমিটির সাথে সমন্বয় করে নিষ্পত্তি করা।
১৮. বিজয়া শোভাযাত্রায় উচ্চ বাদ্যযন্ত্র সেট (পিএ) ব্যবহার না করা।
১৯. শোভাযাত্রা চলাকালে যেন কোন গ্যাপ সৃষ্টি না হয় সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখা।
২০. প্রতিমা বিসর্জনের সময় নৌকায় ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করা এবং বিসর্জনের সময় পানিতে পড়ে প্রাণহানীর মত ঘটনা যেন না ঘটে সেজন্য সতর্কতা অবলম্বন করা, বিশেষ করে বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদের নৌকায় উঠা নিরুৎসাহিত করা।
২১. ২৪ অক্টোবর বিভিন্ন পূজামন্ডপ হতে প্রতিমা বেলা ৩ টার পূর্বেই ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা, সাড়ে ৩ টার মধ্যে শোভাযাত্রা শুরু করা এবং সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে প্রতিমা ওয়াইজঘাটে পৌঁছানো। ওয়াইজঘাটে সকল প্রতিমা রাত ৮ টার মধ্যে বিসর্জন সম্পন্ন করা।
২২. কোন দুর্ঘটনা বা অপরাধ সংঘটনের আশঙ্কা তৈরি হলে অতি দ্রুত পুলিশকে জানানো এবং জরুরী প্রয়োজনে পূজা উদযাপন কমিটি কর্তৃক সংশ্লিষ্ট থানার ফোকাল পয়েন্ট অথবা ৯৯৯ এর সেবা গ্রহণ করা।