শিক্ষিকার সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল

প্রকাশিত: ৯:২৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২৩

নওগাঁ প্রতিনিধি:

নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বেগুন জোয়ার উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী এক শিক্ষিকার সঙ্গে স্কুলের অফিস কক্ষে প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদের অসামাজিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে। এমন কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ গতকাল মঙ্গলবার (৪ জুলাই) বিকেল থেকে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদের একের পর এক নারী কেলেঙ্কারির ঘটনায় ফুঁসে উঠেছে এলাকাবাসী। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে ঘুষ দাবিসহ বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। এতে স্কুলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ঈদের ছুটির কারণে স্কুলটি বন্ধ। শিক্ষকদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বিষয়ে জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করা হয়েছে।

ওই দুই শিক্ষকের চারটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথম ক্লিপটি ১ মিনিট ১২ সেকেন্ড, দ্বিতীয়টি ১ মিনিট ৫১ সেকেন্ড, তৃতীয়টি ৪ মিনিট ১১ সেকেন্ড এবং চতুর্থটি ৪ মিনিট ৫৮ সেকেন্ড। ভিডিও ক্লিপে দেখা যায় স্কুলে প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ তার অফিস কক্ষে দফায় দফায় ওই নারী শিক্ষিকাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুম্বন করছেন। ভিডিওতে তাদের পোশাকও অস্বাভাবিক দেখা গেছে। অফিস কক্ষের দিকে কেউ আসছে কি না তা দেখতে প্রধান শিক্ষক মাঝে মাঝে জানালার কাছে গিয়ে উঁকি দিয়ে দেখে আসছেন।

জানা গেছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে স্কুলে স্বেচ্ছাচার চালিয়ে আসছেন প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ। এলাকার প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয়রা কিছু বলার সাহস পান না। চতুর ওই শিক্ষক নারী কেলেঙ্কারির বিষয়ে অর্থের বিনিময়ে ধামাচাপা দিয়ে পার পেয়ে যান। বর্তমানে অভিভাবকরা মেয়েদের ওই স্কুলে পাঠাতেও সংকোচ বোধ করছেন। এতে ওই বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ওই শিক্ষকের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানান অভিভাবকসহ এলাকাবাসী।

২০১০ সালের জুন মাস থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান আবু সাদাত শামীম আহমেদ। তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসী কিছু বলার সাহস পান না। তার ক্ষমতার উৎস তার আত্মীয়স্বজনরা বিভিন্ন পর্যায়ে সরকারি চাকরিজীবী। এ কারণে একের পর এক অপরাধ করেও পার পেয়ে যান তিনি। স্কুলের সভাপতির ছত্রছায়ায় বছরের বছর এ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছেন তিনি। অনৈতিক কারণে এর আগে বেশ কয়েকবার তাকে উত্তম-মধ্যম দেওয়া হয়েছে। নারী কেলেঙ্কারি ও বেশ কিছু অনিয়মের কারণে অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তাকে স্কুল থেকে ২০১৪ সালে বের করে দেন। এক বছর স্কুলের বাইরে থাকার পর কিছু মদতপুষ্টের সহযোগিতায় আবারো স্কুলে প্রবেশ করেন।

এদিকে ঈদের ছুটি থাকায় স্কুলটি বন্ধ। ভিডিওর বিষয়ে ওই শিক্ষিকার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ধরেননি। এক পর্যায়ে তিনি ফোনটি বন্ধ করে দেন। অপরদিকে প্রায় ৫ বছর যাবৎ পরিবারসহ নওগাঁ শহরে বসবাস করেন প্রধান শিক্ষক আবু সাদাত শামীম আহমেদ। গ্রামের বাড়িতে তাকে পাওয়া না গেলেও মা শিরিন সুলতানা বসবাস করেন। আবু সাদাত শামীম আহমেদের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ধরেননি। এমনকি সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তার মুঠোফোনে খুদেবার্তা পাঠিয়ে ভিডিওর বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের মা শিরিন সুলতানা বলেন, আমার বাবা মরহুম ওসমান গণি ওই স্কুলটি ১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেন। তবে এর আগে আমার ছেলের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ শুনিনি। এবার শিক্ষিকার সঙ্গে ভিডিওর বিষয়টি অবগত হয়েছি। আমার ছেলে প্রতিহিংসার শিকার। সব ষড়যন্ত্র। প্রধান শিক্ষক হওয়ার পর থেকে বিভিন্ন মহল তাকে স্কুল থেকে সরানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আ.স.ম শফি মাহমুদ বলেন, প্রায় ৫ বছর থেকে স্কুলের সভাপতির দায়িত্বে আছি। এর আগে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীর সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ডেরর কথা শুনেছি। বিষয়টি নিয়ে ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে বসতে চেয়েছিলাম। পরে শুনি তারা আপস করেছে। বর্তমানে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকার যে ভিডিওটি দেখা যাচ্ছে তাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা ষড়যন্ত্রের স্বীকার বলে দাবি করছেন।

এছাড়া শিক্ষিকাকে জোর করে যে এ কাণ্ড ঘটানো হচ্ছে বা প্রধান শিক্ষক তাকে বিরক্ত করেন এমন কোনো অভিযোগ আমাদের জানানো হয়নি। বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা হয়েছে, কেউ এ বিষয়ে কিছু বলতে পারছেন না।

বদলগাছী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়াশিউর রহমান বলেন, স্কুলের শিক্ষকদের ভিডিওর বিষয়ে অবগত হয়েছি। আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আলপনা ইয়াসমিন বলেন, লিখিত কোনো অভিযোগ এখনো পাইনি। তবে স্কুলের শিক্ষকদের ভিডিওর বিষয়ে অবগত আছি। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে নিয়ে বসে প্রয়োজনীয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।