শিগগিরই তৈরি পোশাক খাতের আয়কে ছাড়িয়ে যাবে আইসিটি রপ্তানি : জয়ের আশাবাদ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, ‘খুব শিগগিরই’ আইসিটি রপ্তানি তৈরি পোশাক (আরএমজি) খাতের আয়ের পরিমাণকে ছাড়িয়ে যাবে। আরএমজি খাত এখন সর্বাধিক বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। তিনি আজ নগরীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) তিন দিনব্যাপী ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার উদ্বোধনী আনুষ্ঠনে বলেন, ‘আজকের অফিসিয়াল রেকর্ড হচ্ছে- বাংলাদেশের আইটি রপ্তানি এক’শ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে…আমার বিশ্বাস খুব অল্প সময়ের মধ্যেই প্রযুক্তি রপ্তানির মাধ্যমে আমরা আমাদের তৈরি পোশাক রপ্তানি অতিক্রম করবো।’
জয় বলেন, অধিকাংশ আইটি সেবা ইন্টারনেট ভিত্তিক এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমেই এ খাতে রপ্তানী হচ্ছে। তাই প্রকৃতপক্ষে কি পরিমাণ রপ্তানি হচ্ছে তা জানা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘(তবে) আমাদের বিশ্বাস আইটি খাত থেকে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্তত আরো ১শ’ থেকে ২শ’ কোটি মার্কিন ডলার রপ্তানি হচ্ছে, কিন্তু তা জানা যাচ্ছে না। আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ হার্ডওয়ার রপ্তানি করছে-এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন ও স্মার্ট ডিভাইস এবং ‘এই রপ্তানি অত্যন্ত দ্রুত ও ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে’। অতএব আইসিটি খাত যে গার্মেন্টস শিল্পকে ধরার পথে ভালভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে এতে তারই প্রতিফলন ঘটছে। জয় বলেন, যেখানে এক দশক আগেও বাংলাদেশ সব ধরনের মোবাইল ফোন আমদানি করতো সেখানে এ খাতের অগ্রগতি কল্পনাও করা যায় না। তিনি বলেন, এক সময় ‘আমরা নিয়মিত প্রতি বছর তিন কোটি মোবাইল ফোন আমদানি করতাম। আর এখন বাংলাদেশে দুই কোটি মোবাইল উৎপন্ন হয়।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান একেএম রহমত উল্লাহ্, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব নূর-উর রহমান, হুয়াওয়ে টেকনোলজিস (বাংলাদেশ) লি. এর সিইও ঝাং ঝেংজুন।
আইসিটি উপদেষ্টা বলেন, ফাইবার অপটিকের মতো প্রযুক্তিগত সুবিধা এবং ব্যবহারকারির অভাবের কারণে মোবাইল ফোন অপারেটরগুলো আগে দেশে ৩-জি ও ৪-জি প্রযুক্তি চালু করতে পারেনি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার সমস্যাগুলোর দিকে নজর দিল, বাস্তবতার আলোকে এসব সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করল এবং এসব সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে দেশের অগ্রগতিতে সহায়তা করল। তিনি বলেন, অতপর বাংলাদেশ কম মূল্যে জনগণের হাতে ডিভাইস তুলে দিতে এনালগ মোবাইল ফোন উৎপাদন শুরু করে-যাতে প্রত্যেকে একটি মোবাইল ফোন কিনতে পারে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা (অতপর) বাংলাদেশে স্মার্টফোন উৎপাদন শুরু করি। কারণ আপনাদের প্রয়োজন ৪-জি স্মার্টফোন এবং বিদেশি স্মার্টফোন ছিল ব্যয়বহুল।’ এখন বাংলাদেশ কেবল অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতেই স্মার্টফোন উৎপাদন করে না, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশেও এই ডিভাইস রপ্তানি করছে। জয় বলেন, এটা জেনে আমি অত্যন্ত গর্ববোধ করছি।
জয় বলেন, বাংলাদেশে যৌথ উদ্যোগে স্যামসংসহ মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলো মোবাইল ফোন উৎপাদনে ফিলিপাইনের মতো অনেক দেশের তুলনায় উচ্চ মান বজায় রেখেছে। স্যামসং ফিলিপাইনের চেয়েও স্মার্ট ফোন উৎপাদনে দীর্ঘ ওয়ারেন্টি প্রদান এবং বাংলাদেশ থেকে এই ফোন রফতানি করার প্রস্তাব দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা জয় বলেন, আমি খুবই আশাবাদী এবং আমি মনে করি বাংলাদেশে সবকিছুই সম্ভব। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় ৫-জি টেকনোলজি চালু করতে সক্ষম হবে বলে আমি আশাবাদী। আওয়ামী লীগ সরকার বর্তমান মেয়াদের মধ্যে ৫-জি চালু করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের প্রথম মেয়াদে ৩-জি এবং দ্বিতীয় মেয়াদে ৪-জি চালু করেছি। তিনি বলেন, বিশ্ব চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের আওতায় শিল্প উৎপাদনের বয়স থেকে জ্ঞান ভিত্তিক শিল্প, জ্ঞান ভিত্তিক উৎপাদন এবং সার্ভিসে চলে এসেছে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাংলাদেশ এই বিপ্লবের অংশ হবে।
জয় বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশে রূপান্তরিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা আমাদের বিগত মেয়াদে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে জাতিসংঘ ও বিশ্ব ব্যাংকের সকল ক্রাইটেরিয়া পূরন করেছি। আমরা এখন মধ্য আয়ের দেশ এবং আমরা এখন শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির অপেক্ষায় রয়েছি। বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ বাজারগুলোর একটি। বিগত ১১ বছরে দেশে ক্রমবর্ধমান মধ্যবিত্তের বিকাশের এটাই হচ্ছে সুফল।
জয় বলেন, বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও ডাটার সর্ববৃহৎ দেশগুলোর মধ্যে একটি। ১১ বছর আগে যে পরিমাণ ডাটা ব্যবহার করা হতো, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি ডাটা ব্যবহৃত হচ্ছে। আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে ডাটা ব্যবহারের পরিমাণ হবে আকাশচুম্বি। বাংলাদেশ এখন ডিজিটাল শাসনে পাইওনিয়ার। দেশে এখন প্রতিটি সেবা ডিজিটালাইজ হয়েছে। আমরা শতভাগ ডিজিটালাইজ করার পরিকল্পনা সম্পন্ন করেছি। আমরা আমাদের সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছি।
যুক্তরাষ্ট্রে তার অভিজ্ঞতা বিনিময়ের উল্লেখ করে জয় বলেন, বাংলাদেশী ন্যাশনাল আইডি (স্মার্টকার্ড) যুক্তরাষ্ট্রের যে কোন আইডি’র চেয়ে অনেক এগিয়ে।
মেলায় আইএসপিএস, ব্রন্ডব্যান্ড ইন্টারনেট, ট্রিপল প্লে টেকনোলজিসহ মোট ৮২টি ফার্ম মোবাইল অ্যাপস, প্যারেন্টাল কন্ট্রোল এবং অন্যান্য প্রযুক্তি প্রদর্শীত হচ্ছে। মেলায় প্রায় ২৫টি স্টল, ২৯টি মিনি প্যাভিলিয়ন, এবং ২৮টি প্যাভিলিয়নে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়, বিভাগ এবং ডিপার্টমেন্ট ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে তাদের অগ্রগতি প্রদর্শন করছে।
মেলায় পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু’র জন্য একটি পৃথক কর্ণার রয়েছে। এতে ডিজিটালের মাধ্যমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও কর্ম তুলে ধরা হয়েছে।