শেরপুরের লাশ দাফনের কবরস্থান পেল তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
শেরপুর প্রতিনিধি:
মৃত্যুর পর আর লাশ সৎকারে বিড়ম্বনায় পড়তে হবে না তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের। লাশ দাফনের জন্য কবরস্থান পেল শেরপুরের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা। শেরপুরের বিদায়ী পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান এবং তার সহধর্মিণী পুনাক সভাপতি সানজিদা হক মৌ নিজেদের ব্যক্তিগত অর্থায়নে শেরপুরের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য কবরস্থানের জায়গা কিনে দিয়েছেন।
সদর উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের আন্ধারিয়া-সুতিরপাড় এলাকায় তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর গুচ্ছগ্রামের পাশেই ১১ শতক জমি দলিল মূলে ক্রয় করে কবরস্থান করে দেন তারা।
চারদিকে নির্মাণ করা হয়েছে সীমানাপ্রাচীর। এতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা।
আজ শুক্রবার বিকেলে তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের কবরস্থানটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। ফিতা কেটে উদ্বোধন করেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বিপিএম।
এ সময় পুলিশ সুপার পতœী সানজিদা হক মৌ সেখানে তিনটি গাছও রোপণ করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মো. রফিকুল ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সোহেল মাহমুদ, সদর থানার ওসি বছির আহমেদ বাদল, জন-উদ্যোগ আহ্বায়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, শিক্ষাবিদ শিব শংকর কারুয়া, সংস্কৃতিকর্মী এস এম আবু হান্নানসহ তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সদস্য ও স্থানীয় সুধীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
কবরস্থান পেয়ে উচ্ছ্বসিত তৃতীয় লিঙ্গ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা। শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সমিতির সভাপতি নিশি সরকার বলেন, ‘আমরা কৃতজ্ঞ পুলিশ সুপার এবং তার সহধর্মিণীর প্রতি।
তারা আমাদের আনন্দে শরিক হয়েছেন, শেষ বিদায়েও পাশে থাকার ব্যবস্থা করলেন। মৃত্যুর পর আমাদের মরদেহ দাফনের জন্য কবরস্থান নির্মাণ এবং লাশ সৎকারের দায়িত্ব নেওয়ায় আমরা তাদের প্রতি চিরঋণী হয়ে রইলাম।’
নাগরিক প্ল্যাটফরম জন-উদ্যোগ শেরপুর কমিটির আহ্বায়ক শিক্ষক মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, গত বছরের ৩০ অক্টোবর শেরপুর জেলা হিজড়া কল্যাণ সংস্থার পঞ্চম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান। সাথে ছিলেন তার সহধর্মিণীও। সেই অনুষ্ঠানেই তৃতীয় লিঙ্গ ‘হিজড়া’ জনগোষ্ঠীর মৃত্যুর পর লাশ সৎকার নিয়ে বিড়ম্বনার বিষয়টি তারা অবগত হন।
তখনই তারা কামারিয়ার সরকারি গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য পৃথক কবরস্থান নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সদ্য জামালপুর জেলায় বদলি হওয়া এই পুলিশ সুপার শেরপুর থেকে বিদায়ের আগেই তাদের লাশ দাফনের জন্য কবরস্থানটির ব্যবস্থা করলেন। এ জন্য তাদের অভিনন্দন জানাই।
পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান বলেন, ‘কবরস্থান নির্মাণের মাধ্যমে আমি কেবল একটি মানবিক কাজে শামিল হতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, সবার ভালোবাসায় একদিন তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকরা অবশ্যই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে। সমাজের অন্যান্য মানুষের সাথে একই মর্যাদায় বাঁচতে পারবে। যেখানেই থাকি না কেন, শেরপুরের তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের প্রতি আমাদের সহমর্মিতা অব্যাহত থাকবে।’
এ সময় তিনি সেখানের তৃতীয় লিঙ্গের কারো মৃত্যু হলে তাকে জানানো এবং লাশ কাফন-দাফনের সব ব্যয় বহন করারও ঘোষণা দেন।