শেষ মুহূর্তে অপ্রত্যাশিত সুখবর পেলেন কমলা

প্রকাশিত: ১১:৫১ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৪, ২০২৪

ডেস্ক রিপোর্ট:

নির্বাচনী উত্তাপে এখন কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্র। স্মরণকালের মধ্যে এবার দেশটিতে সবচেয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ভোট হচ্ছে। সারাবিশ্বও তাকিয়ে আছে বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর দেশটির ভোটের দিকে। এবারের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রবল চাপের মধ্যে পড়েছেন। তবে একদম শেষ প্রান্তে এসে অপ্রত্যাশিতভাবে সুখবর পেলেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রায় ৩০ বছর ধরে আইওয়াকে রণক্ষেত্র রাজ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। গত দুটি নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এখানে বড় ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। সাধারণত এ রাজ্যে ভোটের প্রাক্কালে চূড়ান্ত জরিপ প্রকাশ করে ডেস মইনেস রেজিস্টার নামে একটি সংবাদপত্র। তাদের পক্ষে জরিপটি পরিচালনা করে থাকে খ্যাতিমান সংস্থা সেলজার। এ সংস্থাটি ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার অনন্য ক্ষমতার জন্য ব্যাপকভাবে প্রত্যাশিত। এবার এ রাজ্যের বেশির ভাগ মানুষই তা উপেক্ষা করেছেন। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, এ রাজ্যে ট্রাম্পই বিজয়ী হবেন।
তবে সেলজারের নতুন জরিপে দেখা যাচ্ছে, ডেমোক্রেটিক দলের প্রার্থী কমলা হ্যারিস ট্রাম্পকে নিরাপদ ব্যবধানে পেছনে ফেলেছেন। কমলার ৪৭ শতাংশ সমর্থনের বিপরীতে ট্রাম্পকে ভোট দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ৪৪ শতাংশ নাগরিক। শনিবার রাতে রেজিস্টারের ওয়েবসাইটে ফলাফল পোস্ট করার সঙ্গে সঙ্গেই চারদিকে হইচই পড়ে যায়।

মিডওয়েস্টার্ন রাজ্য আইওয়া এবারের নির্বাচনের সাতটি যুদ্ধক্ষেত্র রাজ্যের মধ্যে একটি নয়। যদিও রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ এবং জরিপকারীরা যে কোনো একক জরিপে খুব বেশি আস্থা রাখার বিষয়ে খুব সতর্ক। তবে সেলজার আইওয়াতে ব্যাপকভাবে সমাদৃত জরিপ সংস্থা।
কমলা এবার এ রাজ্যে জয়লাভ করলে তা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে আমূল বদলে দিতে পারে। এ রাজ্যে ইলেক্টোরাল ভোট ছয়টি।

সম্ভাব্য ভোটারদের মধ্যে সেলজারের জরিপে কমলা এখন ৩ পয়েন্টে এগিয়ে থাকলেও সেপ্টেম্বরের সমীক্ষায় ট্রাম্প ৪ পয়েন্টের সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। গত জুনের একটি জরিপে ট্রাম্প তৎকালীন প্রার্থী জো বাইডেনের চেয়ে ১৮ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।

জরিপে দেখা গেছে, দেরিতে হলেও নারীরা এ রাজ্যে কমলার দিকে ঝুঁকছেন। এটা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। কমলার প্রতি নারীদের এই উচ্ছ্বাস সারাদেশের জন্য ইঙ্গিতবাহী হতে পারে।

তবে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে দিয়েছেন, ডেমোক্র্যাটরা এ জরিপ নিয়ে যাতে বেশি মাতামাতি না করেন। কারণ, শনিবার আইওয়াতে আরেকটি জরিপের ফল প্রকাশিত হয়, যাতে ট্রাম্প এখনও এগিয়ে রয়েছেন। এমারসনের সেই জরিপে দেখা যায়, কমলার তুলনায় এ রাজ্যে ৯ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

টেনেসির সাবেক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস প্রার্থী ক্রিস্টোফার হেল বলেছেন, ‘মাত্র ৯০ সেকেন্ডের জন্য সেলজারের জরিপের ফলাফল উদযাপন করুন এবং কাজে ফিরে যান। আমাদের জয়ের জন্য মঙ্গলবারের নির্বাচনকে মোকাবিলা করতে হবে।’

রণক্ষেত্রের সর্বশেষ ফলাফল

এবারের সাতটি রণক্ষেত্র রাজ্যের সর্বশেষ অবস্থা নিয়ে শনিবার জরিপ প্রকাশ করেছে নিউইয়র্ক টাইমস এবং সিয়েনা কলেজ। এতে দেখা যায়, কমলা হ্যারিস উত্তর ক্যারোলাইনা এবং জর্জিয়ায় নতুন শক্তিমত্তা দেখাচ্ছেন। তবে ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ায় কমলার নাগাল ধরে ফেলেছেন এবং অ্যারিজোনায় সুবিধাজনক অবস্থান বজায় রেখেছেন।

কয়েক দশকের মধ্যে সান বেল্ট এবং রাস্ট বেল্ট রাজ্যে তীব্র প্রতিযোগিতার মুখোমুখি হচ্ছেন দুই প্রার্থী। এর মানে হচ্ছে, প্রচারাভিযানের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে প্রতিযোগিতার ফলাফল অত্যন্ত অনিশ্চিত রয়ে গেছে।

কমলা এখন নেভাদা, উত্তর ক্যারোলাইনা এবং উইসকনসিনে সামান্য ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন বলে জরিপে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, ট্রাম্প অ্যারিজোনায় এগিয়ে রয়েছেন। উভয় প্রার্থীই মিশিগান, জর্জিয়া এবং পেনসিলভানিয়ায় হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অবতীর্ণ। তবে সাতটি রাজ্যের জরিপের ফলাফলেই যে নমুনা ত্রুটি রয়েছে, তাতে ফলাফল যে কোনো প্রার্থীর পক্ষে যেতে পারে।

অবশ্য এমন লক্ষণও দেখা যাচ্ছে, বিলম্বে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভোটারদের মধ্যে কমলার পাল্লা ভারী। সম্প্রতি যারা ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাদের মধ্যে ৫৫ শতাংশ কমলার আর ৪৪ শতাংশ ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। এখনও ১১ শতাংশ ভোটার সিদ্ধান্তহীন। এক মাস আগে এই সংখ্যা ছিল ১৬ শতাংশ।
ট্রাম্প পেনসিলভানিয়ায় জায়গা করে নিচ্ছেন, যেখানে কমলা এর আগের সব নিউইয়র্ক টাইমস/সিয়েনা কলেজের ভোটে ৪ শতাংশ পয়েন্টে এগিয়ে ছিলেন।

সাড়ে ৭ কোটি ভোট সম্পন্ন

দেশটিতে সাড়ে ৭ কোটির বেশি মানুষ ইতোমধ্যে ভোট দিয়েছেন বলে ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচনী ল্যাব জানিয়েছে। তাদের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুসারে, প্রায় ৪.১ কোটি ভোটার সশরীরে উপস্থিত হয়ে এবং ৩.৪ কোটিরও বেশি নাগরিক পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিয়েছেন।

আগাম ভোটে একমাত্র অ্যারিজোনায় এগিয়ে রয়েছেন ট্রাম্প। সেখানে ভোটারদের মধ্যে ৪৬ শতাংশ বলেছেন, তারা ইতোমধ্যেই ভোট দিয়েছেন এবং ট্রাম্প ৫০ শতাংশের সমর্থন পেয়েছেন। এখানে কমলা পেয়েছেন ৪৬ শতাংশ ভোট।

এদিকে ৫৩৮/এবিসি নিউজের সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে, কমলা জাতীয়ভাবে জরিপে গড়ে ট্রাম্পের চেয়ে এগিয়ে রয়েছেন। কমলা ৪৮ শতাংশ আর ট্রাম্প ৪৭ শতাংশ সমর্থন পাচ্ছেন।

সারাদেশে একজন প্রার্থী কতটা জনপ্রিয়, তা বোঝার জন্য জাতীয় জরিপগুলো একটি দরকারি নির্দেশিকা। তবে নির্বাচনের ফলাফলের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য এটি সেরা উপায় নয়। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রে জনগণের সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন না। এ ক্ষেত্রে ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থা রয়েছে।

ভোট কারচুপির অভিযোগ

ভোট ও কারচুপি সম্পর্কে গুজব, বিভ্রান্তিকর অভিযোগ এবং সরাসরি মিথ্যা নির্বাচনের আগে অভূতপূর্ব সংখ্যায় অনলাইন মাধ্যমকে প্লাবিত করছে। ব্যক্তি পর্যায়ের পাশাপাশি নিরপেক্ষ এবং রিপাবলিকান সমর্থকরা ভোটে কথিত কারচুপির শত শত ঘটনা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। ডেমোক্র্যাটদের কাছ থেকেও এ ধরনের সামান্য সংখ্যক পোস্ট আসছে।

প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে এ পোস্টগুলো ট্রাম্প শিবিরের মিথ্যা দাবিকে সমর্থন করছে, তিনি ২০২০ সালের নির্বাচনে জিতেছিলেন। কারচুপির মাধ্যমে তাঁর এবারের সম্ভাব্য বিজয়ও ছিনিয়ে নেওয়া হতে পারে।
ট্রাম্প নিজেই ভোটে ব্যাপক কারচুপির দাবি করেছেন। তিনি তাঁর ট্রুথ সোশ্যাল নেটওয়ার্কে পোস্ট করেছেন, ‘পেনসিলভানিয়া কারচুপি করছে এবং ধরা পড়ছে। এ রকম বড় আকারের কারচুপি এর আগে খুব কমই দেখা গেছে।’ তিনি সমর্থকদের উদ্দেশে বলেছেন, কর্তৃপক্ষের কাছে কারচুপির ঘটনা তুলে ধরুন। আইন প্রয়োগকারীকে এখনই এ নিয়ে কাজ করতে হবে।

সূত্র : বিবিসি, নিউইয়র্ক টাইমস ও গার্ডিয়ান।