শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় ড. ইউনূসের যুক্তিতর্ক ২০ নভেম্বর
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগের মামলায় বাদীপক্ষের আইনজীবীদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়েছে। আগামী সোমবার (২০ নভেম্বর) ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার শ্রম আদালতের বিচারক বেগম শেখ মেরিনা সুলতানার আদালতে বাদীপক্ষে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শুনানি করেন। আদালতে ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ। এদিন যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের শুনানিতে অংশ নিতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের দিকে ড. ইউনূসসহ চার আসামি আদালতে আসেন। ড. ইউনূস বিকেল ৫টা পর্যন্ত আদালতে অবস্থান করেন। এ সময় তিনি মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শোনেন। আদালতের কার্যক্রম শেষে ড. ইউনূস আইনজীবীদের সঙ্গে বেরিয়ে যান। আদালতের বাইরে অপেক্ষামান সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘আমি সুবিচার চাই।’
বাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের বিষয়ে আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, শ্রম আইনের কোন কোন বিষয় লঙ্ঘন করা হয়েছে সেগুলো আমরা আদালতে দেখিয়েছি। আদালত আমাদের বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে, আমরা উত্তর দিয়েছি। কারো প্রতি অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে এ মামলা করা হয়নি। যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মামলা করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন সম্পর্কে ড. ইউনূসের আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, যে তিনটি অভিযোগ লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলা করা হয়েছে সেগুলোর সঙ্গে ড. ইউনূসের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ কথা জেরায় মামলার বাদী নিজেও স্বীকার করেছেন। অন্যরাও বলেছেন উনার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। কারো সংশ্লিষ্টতা না থাকলে তাকে কেন আসামি করা হলো।
গত ৯ নভেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজন শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে মামলায় নিজেদের সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে অব্যাহতি প্রার্থনা করেন।
গত ৬ নভেম্বর এ মামলার বাদীপক্ষের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিন আদালত ৯ নভেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ এ মামলার চারজন আসামির ফৌজদারি কার্যবিধি ৩৪২ ধারায় আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য রাখার দিন রাখেন।
শ্রম আইন লঙ্ঘনের এ মামলায় এরই মধ্যে চার সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। গত ১১ অক্টোবর মামলার বাদী এবং প্রথম সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ হয়। এরপর গত ১৮ অক্টোবর দ্বিতীয় সাক্ষী, ২৬ অক্টোবর তৃতীয় সাক্ষী এবং গত ২ নভেম্বর চতুর্থ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
এ মামলায় কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী সৈয়দ হায়দার আলী ও মো. খুরশীদ আলম খান। ড. ইউনূসসহ চারজনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন ও ব্যারিস্টার খাজা তানভীর আহমেদ।
গত ১১ অক্টোবর মামলার বাদী শ্রম পরিদর্শক তরিকুল ইসলামকে আসামিপক্ষের জেরা শেষ হয়। গত ২২ আগস্ট এ সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করার পর তাকে জেরা করেন ড. ইউনূসের আইনজীবীরা। এরপর গত ৫, ১৩, ২০ ও ২৭ সেপ্টেম্বর এবং ৩ ও ১১ অক্টোবর সাক্ষীকে জেরা করেন ইউনূসের আইনজীবী।
গত ২ নভেম্বর এ মামলায় চতুর্থ সাক্ষী মো. মিজানুর রহমান আদালতে জবানবন্দি দেন। এরপর তাকে আসামিপক্ষ জেরা করেন।
এর আগে গত ২৬ অক্টোবর তৃতীয় এবং ১৮ অক্টোবর এ মামলার দ্বিতীয় সাক্ষী হাদিউজ্জামানের সাক্ষ্য নেওয়া হয়। গত ১১ অক্টোবর মামলার বাদী শ্রম পরিদর্শক তরিকুল ইসলামের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান বাদী হয়ে ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে ওই মামলা করেন। মামলায় শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশনে নির্দিষ্ট লভ্যাংশ জমা না দেওয়া, শ্রমিকদের চাকরি স্থায়ী না করা, গণছুটি নগদায়ন না করায় শ্রম আইনের ৪-এর ৭, ৮, ১১৭ ও ২৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়। এ মামলায় ড. ইউনূস ছাড়াও গ্রামীণ টেলিকমের এমডি মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুরজাহান বেগম ও মো. শাহজাহানকে বিবাদী করা হয়েছে।