ডেস্ক রিপোর্ট:
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্রগোষ্ঠী হামাসের সাথে ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধের ষষ্ঠদিনে উভয়পক্ষে হতাহতের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত এক হাজার ৪০০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আর হামাসের হামলায় ইসরায়েলিদের প্রাণহানিও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর হামলায় উপত্যকায় ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা এক হাজার ৪১৭ জনে পৌঁছেছে। এছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন আরও ৬ হাজার ২০০ জনের বেশি।
এদিকে, গত শনিবার ভোরের দিকে ইসরায়েলে হামাসের হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ১ হাজার ৩০০ ইসরায়েলি নিহত ও আরও ৩ হাজার ২০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন।
গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিমান হামলা অব্যাহত আছে। বৃহস্পতিবার গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে বিভিন্ন ধরনের লিফলেট ফেলা হয়েছে। এতে গাজার বাসিন্দাদের অবিলম্বে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা গাজা উপত্যকায় নজিরবিহীন মানবিক সংকটের আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিতে ‘মানবিক করিডোর’ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
সোমবার ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক অবরোধ ঘোষণা করে। ইসরায়েলের এই ঘোষণার পর গাজায় খাদ্য, পানি, ওষুধ ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীর সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে।
জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় এই উপত্যকার একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্রটিও বুধবার বন্ধ হয়ে গেছে। অন্ধকারে ডুবেছে পুরো উপত্যকা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন হামাসের সাথে যুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিলেও গাজা উপত্যকায় খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও ওষুধ সরবরাহের ওপর অবরোধ আরোপের বিরোধিতা করেছে। সংস্থাটি বলেছে, গাজা উপত্যকায় সর্বাত্মক অবরোধ আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।
আন্তর্জাতিক সাহায্যকারী সংস্থা রেডক্রস বলেছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেওয়ায়— হাসপাতালগুলোতে অনেক মানুষ বিনা চিকিৎসায় মারা যেতে পারেন এবং হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হতে পারে।
সংস্থাটি বলেছে, গাজার একমাত্র বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন যেসব জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল রাখা হয়েছে সেগুলো আর কয়েক ঘণ্টা পর বন্ধ হয়ে যেতে পারে। ইসরায়েল বলেছে, হামাস যেসব ইসরায়েলিকে বন্দি করেছে; তাদের মুক্তি না দেওয়া পর্যন্ত তারা বিদ্যুৎ সংযোগ পুনরায় সচল করবে না।
কিন্তু বিদ্যুতের অভাবে হাসপাতালগুলোতে বিনা চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যুর শঙ্কা প্রকাশ করে রেডক্রসের আঞ্চলিক পরিচালক ফাবরিজিও কার্বোনি বলেছেন, ‘গাজা যেহেতু বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, হাসপাতালগুলোও বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়েছে। এর মাধ্যমে ইনকিউবেটরে থাকা নবজাতক এবং অক্সিজেনে থাকা বৃদ্ধরা ঝুঁকিতে পড়ে গেছেন।কিডনির ডায়ালাইসিস বন্ধ হয়ে গেছে, এক্সরে করা যাচ্ছে না। বিদ্যুৎ ছাড়া হাসপাতালগুলো মর্গে পরিণত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।’