সর্বসম্মতিক্রমে শোকপ্রস্তাব গৃহীত, বাংলাদেশকে আরও উন্নত করতে হবে: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
একাদশ জাতীয় সংসদের ৬১ নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল কুদ্দুস, ১৬০ নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন, সাবেক ধর্মমন্ত্রী মো. মতিউর রহমান, সাবেক সংসদ সদস্য ও শহীদ জায়া অধ্যাপিকা পান্না কায়সার এবং সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ উল্যার মৃত্যুতে আজ জাতীয় সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।
স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এ শোক প্রস্তাব সংসদে উত্থাপন করেন। শোক প্রস্তাবে সংসদ সদস্যবৃন্দ ও সাবেক ধর্মমন্ত্রী মো. মতিউর রহমানের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করা হয়।
সংসদে শোক প্রস্তাবে আরো বলা হয়, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের ৬১ নাটোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মো. আব্দুল কুদ্দুস-এর মৃত্যুতে দেশ একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু.খ প্রকাশ, তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’
মো. আব্দুল কুদ্দুস ১৯৪৬ সালের ৩১ অক্টোবর নাটোর জেলার গুরুদাসপুর উপজেলার বিলশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন এবং গত ৩০ আগস্ট রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। তার পিতা হায়েতুল্লাহ সরদার এবং মাতা গুলেনূর বেগম। তার স্ত্রীর নাম রওশন আরা বেগম।
মো. আব্দুল কুদ্দুস রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন রাজশাহী কলেজ থেকে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ভারতে ও দেশে অস্ত্র চালনা ও গেরিলা প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। তিনি বৃহত্তর রাজশাহী জেলা মুজিব বাহিনীর প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করায় দীর্ঘ পাঁচ বছর তাকে কারারুদ্ধ করে রাখা হয়। তিনি রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি, বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি, স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ বৃহত্তর রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।
মো. আব্দুল কুদ্দুস পঞ্চম, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পঞ্চম জাতীয় সংসদে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও সরকারী হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, সপ্তম জাতীয় সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, নবম জাতীয় সংসদে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সদস্য, দশম জাতীয় সংসদে সরকারী প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি, সরকারী প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি একাদশ জাতীয় সংসদে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন ১৯৪৭ সালের ১৫ মে জন্মগ্রহণ করেন এবং গত ১১ জুলাই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। তার পিতা আশরাফ আলী খান এবং মাতা কামরুন নাহার খানম। তার স্বামী সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ভাষা সৈনিক ও মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক মরহুম আব্দুল মমিন।
রেবেকা মমিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্মানসহ এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালীন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি ১৯৬৯ এর গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।
রেবেকা মমিন নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নবম জাতীয় সংসদে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, দশম জাতীয় সংসদে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সরকারি হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং একাদশ জাতীয় সংসদে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন উন্নয়ন ও সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডের সাথে জড়িত ছিলেন।
শোক প্রস্তাবে বলা হয়, ‘একাদশ জাতীয় সংসদের ১৬০ নেত্রকোনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেবেকা মমিন-এর মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নিবেদিতপ্রাণ সমাজসেবককে হারালো। এ সংসদ তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ, তার রুহের মাগফিরাত কামনা এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সহমর্মিতা প্রকাশ করছে।’
প্রথা অনুযায়ি সংসদ সদস্য মো. আব্দুল কুদ্দুস ও রেবেকা মমিন-এর স্মরণে সংসদে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের সদস্য আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ওয়াসিকা আয়শা খান, শফিকুল ইসলাম শিমুল, আব্দুল আজিজ ও সাজ্জাদুল হাসান এবং জাতীয় পার্টির মশিউর রহমান রাঙ্গা।
শোকপ্রস্তাবে স্পিকার বলেন, আমরা ইতোমধ্যে একজন সাবেক মন্ত্রী ও দুইজন সাবেক সংসদ সদস্যকে হারিয়েছি। তারা হলেন- সাবেক ধর্মমন্ত্রী ও ১৪৯ ময়মনসিংহ-৪ আসনে তৃতীয় ও নবম জাতীয় সংসদের সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মতিউর রহমান, সপ্তম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপিকা পান্না কায়সার, তৃতীয় জাতীয় সংসদে, ২৭৬ লক্ষ্মীপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ উল্যা। তাদের মৃত্যুতে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করছে।
স্পিকার বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল (অব.) সুলতান মাহমুদ, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক সিরাজুল আলম খান, একুশে পদকপ্রাপ্ত কবি মোহাম্মদ রফিক, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু এমপি-র সহধমির্ণী কামরুন্নেছা আশরাফ দীনা, কাজী নাবিল আহমেদ এমপি-র পিতা অধুনালুপ্ত দৈনিক আজকের কাগজ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক, জেমকন গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা কাজী শাহেদ আহমেদ, কানিজ ফাতেমা আহমেদ এমপি-র পিতা কামাল উদ্দিন আহমেদ খান এবং স্বাধীনতা পুরস্কারপ্রাপ্ত বরেণ্য কৃষি বিজ্ঞানী ও কাজী পেয়ারার উদ্ভাবক কাজী এম বদরুদ্দোজার মৃত্যুতে মহান সংসদ গভীর শোক ও দু:খ প্রকাশ করছে।
শোক প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়াই দ্বীপের মাউইতে ভয়াবহ দাবানল, ভারতের উড়িষ্যা রাজ্যে মর্মান্তিক ট্রেন দুর্ঘটনা এবং দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করে।
শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর সর্বসম্মতিক্রমে তা গৃহিত হয়। পরে মৃত্যুবরণকারীদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন ও তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য হাফেজ রুহুল আমিন মাদানী।
এরপর সংসদের নিয়ম অনুযায়ী বিদ্যমান সংসদের সদস্যের মৃত্যুতে দিনের অন্যসব কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদে বৈঠক মুলতবি করা হয়। তবে মন্ত্রীদের জন্য প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করা হয়।