এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার ফলমূল বিক্রি করা হচ্ছে। বিক্রির টাকা রাজস্ব আকারে জমা হয় সরকারি কোষাগারে। সেখানে ফল বিক্রির প্রায় ৪০ লাখ টাকার মত রয়েছে। এ বছর সংসদ ভবনের ফল বিক্রি করে আয় হয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। সংসদ সচিবালয় ও ঠিকাদার সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, খেজুর, আম, কাঁঠালসহ বেশ কয়েকটি প্রজাতির ফলগাছ রয়েছে জাতীয় সংসদে। অতীতে এসব গাছের ফলফলাদি সংসদ সদস্যসহ সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের মধ্যে বন্টন করে নিতেন। কিন্তু সদ্যবিদায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ স্পিকার থাকাকালে ২০১১ সালে প্রথমবারের মতো নিলামের মাধ্যমে ফল বিক্রির উদ্যোগ নেন। ওই বছর থেকে আম, কাঁঠাল ও নারকেল এই তিন ধরনের ফল বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রথম বছর ফল বিক্রি করে রাজস্ব আদায় হয় এক লাখ ৫৩ হাজার টাকা। এর ধারাবাহিকতায় প্রতি বছরই টেন্ডারের মাধ্যমে এই তিন ধরনের ফল বিক্রি করে আসছে সংসদ সচিবালয়।
এ বছর (২০২৩) সাল ফল বিক্রি করে সরকারের রাজস্ব আয় হয়েছে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গত বছর (২০২২) সালে আয় হয়েছিল তিন লাখ ৮০ হাজার টাকা।
প্রতি বছরই নিলামের মাধ্যমে সংসদ ভবনের ফল কিনেছের জিগির আলী নামে এক ব্যবসায়ী। তিনি জানান, গাছগুলোতে ফল ধরার শুরুতেই নিলামের মাধ্যমে এগুলো তিনি কেনন। পরে নিজস্ব লোক দিয়ে এগুলো দেখভালসহ প্রয়োজনীয় কীটনাশক প্রয়োগ করেন। পরে তার শ্রমিকরাই সেগুলো গাছ থেকে সংগ্রহ করে বিক্রি করেন। ফলফলাদির বেশিরভাগই সংসদ সচিবালয়ের স্টাফদের কাছে বিক্রি করেন বলেও তিনি জানান।
সংসদ ভবন এবং নাখালপাড়ার সংসদ সদস্য ভবন এলাকায় ১৪৭টি গাছের আম, ২০৮টি গাছের ডাব/নারকেল এবং ২৮৭টি কাছের কাঁঠাল নিলামে কিনেছেন বলে জানান জিগির আলী।
নিলামে কেনার পর রক্ষণাবেক্ষণ করে প্রতি বছর বিক্রি করে তার ৫০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় হয় বলে জানান তিনি। তবে এ বছর তার বেশকিছু টাকা লোকসান হবে বলে আশঙ্কার কথা জানান।
এদিকে নিলামে বিক্রি করা তিন ধরনের ফল ছাড়াও সংসদ ভবন এলাকায় যেসব ফলমূল রয়েছে সেগুলো কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভোগ করেন। এক্ষেত্রে যেসব ভবনের আশপাশে এসব গাছগুলো রয়েছে ওই ভবনের বাসিন্দারা এগুলো দেখভাল করে এবং তারাই তা ভোগ করেন।
ফলাফলাদি ছাড়াও সংসদ ভবন এলাকার জমিতে শীতকালীন শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি উৎপন্ন হয়। অবশ্য এসব শাক-সবজি সংসদ সচিবালয়ের ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে চাষাবাদ করা হয় না। সংসদ সচিবালয় এলাকায় বসবাসকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নিজেদের উদ্যোগে চাষ করেন। এগুলো তারা নিজেরা খাওয়ার পাশাপাশি আশপাশে বসবাসকারী সহকর্মীদের উপহার দেন।
এদিকে ফলফলাদি ছাড়াও সংসদ ভবনের লেকের মাছ ধরার টিকিট বিক্রি করে কোটি টাকার বেশি আয় হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মাত্র একবার সংসদ ভবনের লেক সেচ করে মাছ বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়। লেক সংস্কারের জন্য ২০১৯ সালে সেচ দিয়ে পানি শুকানো হয়। ওই বছর নিলামে লেকের মাছও বিক্রি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে নিলামে মাছ বিক্রি করে ৬ লাখ ২২ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়া হয়। অবশ্য ওই বছর আর কখনো এভাবে নিলামে মাছ বিক্রি হয়নি। তবে এর আগে পরে প্রায় প্রতি বছরই সৌখিন ও পেশাদার শিকারিদের কাছে মাছ ধরার টিকিট বিক্রি করা হয়। জানা গেছে, এই টিকিট বিক্রি করে দেড় কোটির মতো অর্থ আয় হয়েছে। তবে মাছ ধরার টিকিট পার্লামেন্ট মেম্বারস ক্লাব বিক্রি করে এবং এ খাতের আয় মেম্বারস ক্লাবের ফান্ডে জমা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের পরিচালক (সাধারণ সেবা ও সমান্বয়) ওয়ারেশ হোসেন বলেন, ‘সরকারি বিধি-বিধান মেনে নিলামের মাধ্যমে প্রতি বছর আম, কাঁঠাল ও নারিকেল— এই তিন ধরনের ফল বিক্রি করা হয়। বিক্রির টাকা পুরোটাই রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়।’