সচিবালয়কে দালালদের হাটবাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছিল

ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি

প্রকাশিত: ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৮, ২০২৪

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

বাংলাদেশ সচিবালয়কে দালালদের হাট বাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ অভিমত ব্যক্ত করেন তিনি।
শুক্রবার সরকারি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যুকৃত অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দ্বারা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার বাতিল করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে নানা মহলে সমালোচনা শুরু হলে তিনি এ অভিমত ব্যক্ত করেন।

ওই আদেশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সচিবালয়ে সার্বিক নিরাপত্তা বৃদ্ধির স্বার্থে সচিবালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা–কর্মচারীদের অনুকূলে দেওয়া স্থায়ী প্রবেশ পাস (ডিজিটাল এক্সেস কন্ট্রোল সিস্টেম) এবং সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের জন্য দেওয়া অস্থায়ী প্রবেশ পাস ছাড়া সব ধরনের অস্থায়ী (বেসরকারি ব্যক্তিদের জন্য) সচিবালয় প্রবেশ পাস বাতিল করা হলো।

সাংবাদিকদের অনুকূলে ইস্যু করা অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড দ্বারা সচিবালয়ে প্রবেশাধিকার পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাতিল করা হলো।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বাতিল করা বিভিন্ন শ্রেণির সচিবালয় প্রবেশ পাসধারীরা আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ পুলিশ, ক্রাইম কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, ডিএমপি, ১৫ আবদুল গণি রোড, ঢাকায় স্থাপন করা বিশেষ সেলের মাধ্যমে নতুন করে অস্থায়ী প্রবেশ পাসের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

এই বিজ্ঞপ্তি জারির পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় বইছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ মজুমদার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ স্ট্যাটাস দেন।
স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন, কিছু লোক সরকারকে কঠোর হতে বলে, আবার সামান্যতম কঠোর হলে গেলে রব তোলে। এই দ্বিচারিতা বন্ধ হওয়া জরুরি। সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করা নিয়ে যথারীতি এই দ্বিচারিতা আবার শুরু হয়েছে। প্রবেশাধিকার সীমিত করার এই সিদ্ধান্তটি খুবই সাময়িক।

তিনি লেখেন, একটা বিষয় এখানে পরিষ্কার করা দরকার, কোনো সাংবাদিকের অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড এই সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে বাতিল করা হয়নি। কেবল সচিবালয়ের ক্ষেত্রে এর ব্যবহার সীমিত করা হয়েছে। তাও খুবই অল্প সময়ের জন্য। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে অস্থায়ী পাশ ইস্যু করা হবে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিগগির বিদ্যমান সব প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডই পর্যালোচনা করা হবে এবং নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করার জন্য সমস্ত স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কাছে আবেদন চাওয়া হবে।

আরও পড়ুন
তিনি আরও লেখেন, এটা এখন ওপেন সিক্রেট, বাংলাদেশ সচিবালয়কে দালালদের হাটবাজার বানিয়ে ফেলা হয়েছিল। সরকারের সর্বশেষ এই সিদ্ধান্তে দালাল ছাড়া কারও শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা মনে করি, এতে সাংবাদিকদের কাজ আরও সহজ করবে। এখন সাময়িক অসুবিধা হলেও চূড়ান্ত বিচারে এটা সবাইকে সহযোগিতা করবে। এজন্যই সবার সহযোগিতা চাওয়া হচ্ছে। সাম্প্রতিক অগ্নিকাণ্ডে রাষ্ট্রের একটা বিপর্যয় হয়েছে, এটা মানতে কারো দ্বিধা থাকার কথা নয়। এজন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও করা হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কখনো স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজিপি, ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক, সেনাবাহিনীর বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ দিয়ে একসঙ্গে কোনো ঘটনার তদন্ত করা হয়নি। বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকার স্বচ্ছতায় বিশ্বাসী বলেই এই ধরনের কমিটি করা হয়েছে। সাংবাদিকদের দূরে রেখে তদন্ত কাজ চালানো হবে বলে যারা আবোল তাবোল বকছেন এরা মারাত্মক ভুলে আছেন। আমাদের বিশ্বাস, সাংবাদিকরাও বিষয়টি উপলব্ধি করবেন এবং চলমান পরিস্থিতিতে সরকারকে সহযোগিতা করবেন।
এদিকে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য, যা এই সপ্তাহে একটি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়েছে। সরকার শিগগিরই বিদ্যমান প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন কার্ডগুলো পর্যালোচনা করবে এবং স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর কাছ থেকে নতুন আবেদনপত্র গ্রহণ করে প্রেস ইনফরমেশন ডিপার্টমেন্ট (পিআইডি) থেকে নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড ইস্যু করবে। এর মধ্যে, যে কোনো প্রেস ইভেন্টের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে দৈনিক অস্থায়ী প্রবেশপত্র ইস্যু করা হবে। সরকার এ অসুবিধার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করেছে।