জাহাঙ্গীর আলম মিয়া:
বিএনপিকে ‘সন্ত্রাসী দল’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সংলাপ হতে পারে না। সংলাপের পার্ট শেষ হয়ে গেছে। একসময় বলেছিলাম— শর্ত তুলে নিলে সংলাপ হতে পারে, সেই সময় শেষ।’
আজ রবিবার (৫ নভেম্বর) বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘অবরোধবিরোধী অবস্থান কর্মসূচি’ পরিদর্শনে এসে নিজ কক্ষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলে তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দুই দল আবার কে? সন্ত্রাসীদের সংলাপ সঙ্গে হয় না। এবার তারা (বিএনপি) আবারও প্রমাণ করেছে— তারা আগুন সন্ত্রাসের দল। এখন তারা যা করছে, এরপর আর সংলাপের পরিবেশ নেই।’
‘বিএনপি নেতারা পাহাড়ের গুহায় বসে কথা বলছেন’, মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের দেখ যায় না। বিএনপির ১ কোটি নেতাকে ঘর ছাড়া করা হয়েছে, আর ৮ হাজার নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে— এসব মুখে না বলে তারা তালিকা দিক। আমরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কাছে সেই তালিকা দেবো। তাদের ১ কোটি ঘর ছাড়া, ৮ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করার কথা মিথ্যা। এসব মিথ্যা কথা বলে বিদেশিদের কাছে নালিশ দিচ্ছে।’
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘বিএনপির নেতারা পালিয়েছেন, তাহলে তাদের ১ কোটি নেতাকর্মীরা কোথায় গেল? এই বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক কার্যালয়ে কী অবস্থা করে রেখেছিল বিএনপি। তারা আমাদের নেতাকর্মীদের দাঁড়াতেই দেয়নি। বিএনপি-জামায়াত যা করছে, তা আমাদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘তারা পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপর হামলা করেছে। বিচারপতির বাসায় হামলা করছে, একজন পুলিশকে তারা হত্যা করেছে, বাসে আগুন দিয়েছে। পুলিশের উপর আক্রমণ, গাড়ির হেলপারকে পুড়িয়ে মারা, পুলিশ হসপিটালে হামলা; মির্জা ফখরুলসহ কেউ কি এর দায় এড়াতে পারবে? একজনও এড়াতে পারবেন না। তাদের নির্দেশেই এই সন্ত্রাস হয়েছে। কানাডার আদালতও সঠিকভাবেই বলেছে, তারা সন্ত্রাসী সংগঠন।’
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্যই বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিএনপির থাবা থেকে রক্ষার জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মীরা এমনেই ভয়ে আছে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘গত ২৮ অক্টোবর বিএনপির বড় বড় নেতাদের নির্দেশে সন্ত্রাস হয়েছে, তাদের বিচার হতেই হবে। ২৮ অক্টোবর পুলিশ পিটিয়ে হত্যা করেছে। এই অপরাধের কি ছাড় দেওয়া হবে? না, ছাড় দেওয়া হবে না। সাংবাদিকদের পিটিয়েছে। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা করেছে। পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া হবে না? তাদের কি ছাড় দেওয়া উচিত?’
তিনি বলেন, ‘তারা আবার আগুন সন্ত্রাস করছে। মানুষের জনগণের জানমালের রক্ষায় নিরাপত্তা আমাদের দিতে হবে। যত স্তরের নিরাপত্তা দেওয়া দরকার, সেটা দেওয়া হবে। এই দলটা কি নাটক করতে পারে, কীভাবে নাটক সাজালো! এই নাটকের পরিচালক তারেক রহমান, মিয়া আরেফিকে বাইডেনের ভূয়া উপদেষ্টা বানালো। মিডিয়ার এতো ব্যস্ত, ডাকবার কোনও সুযোগ নেই। সরকারের পতন ঘটানোর জন্য বাইডেনের দোস্ত বানিয়েছে। সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া বাড়ি। সারওয়ার্দীর মতো চতুর লোক কীভাবে তাকে নিয়ে আসলো। আন্দোলন নিজেরা করেছে। নিজেরাই নিজেদের আন্দোলন ভণ্ডুল করেছে। আমির খসরু এখন কোথায় গেল, যেসব বড় নেতারা গ্রেফতার হয়েছে; তারা কি এর দায় এড়াতে পারে। মির্জা ফখরুলসহ তাদের নির্দেশেই এসব অপরাধ হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী থাকুক না বাইরে। দুয়েকজন কথা বলার লোক থাকা দরকার। তবে ইচ্ছে থাকলেও অনেক সময় গ্রেফতার করা যায় না। তাদের তো বিভিন্ন সারির নেতারা রয়েছে। তাদের আসল নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান তো আছেই। সে স্কাইপিতে বিদেশ থেকে নির্দেশ দিচ্ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ১২টি দেশের বাজার থেকে বাংলাদেশের কারখানায় তৈরি হওয়া নানা ব্র্যান্ডের পোশাক তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘১২ দেশ পোশাক নেবে না, এটা গুজব।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে আটটি বুথে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা ও জমা দেওয়া যাবে। মনোনয়নপত্রের মূল্য ৫০ হাজার টাকা। এবার কেউ অনলাইনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে চাইলে করতে পারবেন। তবে কবে থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা যাবে, সেটা পরে জানাবো।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির প্রমুখ।