নিজস্ব প্রতিবেদক:
ইসলাম, বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান– সবাই মিলে সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি বলেন, অন্য যেসব ধর্ম আছে, সব ধর্ম, জাতি-গোষ্ঠী মিলে সুন্দর দেশ গঠন করতে চাই। এখানে সুন্দরভাবে শান্তিতে বসবাস, দেশ ও জাতির উন্নতি করতে চাই। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর মেরুল বাড্ডায় আন্তর্জাতিক বৌদ্ধবিহারে কঠিন চীবর দান উৎসব ও জাতীয় বৌদ্ধধর্মীয় মহাসম্মেলনে এসব কথা বলেন সেনাপ্রধান।
জেনারেল ওয়াকার বলেন, বৌদ্ধধর্মের মূলমন্ত্র শান্তি ও সম্প্রীতি। হাজার হাজার বছর ধরে আমরা এখানে আছি, এটাই আমাদের ঐতিহ্য। সনাতন, বৌদ্ধ, খ্রিষ্ট ও ইসলাম– প্রধান চার ধর্মের মানুষ আমরা শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করতে চাই। একে অপরকে সাহায্য করব, সহমর্মিতা প্রদর্শন করব। কারও কোনো অসুবিধা, কেউ বিপদে পড়লে সাহায্য করব। এভাবেই একটা সম্প্রীতির একটি দেশ গড়ে তুলতে চাই। সবাই মিলে ভালো থাকতে চাই।
তিনি বলেন, আজ আজানের সময় বৌদ্ধরাই বললেন কিছুক্ষণ পরে শুরু করি, আজানটা শেষ হয়ে যাক। এই যে ধর্মীয় বোঝাপড়া, সম্প্রীতি, মমত্ববোধ আপনারা দেখিয়েছেন, এটা অতুলনীয়। এভাবে প্রতিনিয়ত, প্রতি সময় আপনারা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করছেন, এটাই আমরা দেখতে চাই। সুখ-শান্তিতে থাকবেন। এজন্য যা কিছু করতে হয়, আমরা করব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এখানে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার দেখে ভালো লাগছে। বিশেষ করে থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতকে দেখে। তারা এ দেশে অনেক বৌদ্ধমন্দির তৈরিতে আর্থিক সহায়তা করেছেন। বাংলাদেশের বৌদ্ধ ধর্মাম্বলীদের জন্য এটা চমৎকার অবদান। এখানে ভিয়েতনাম ও অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার আছেন। তারাও বাংলাদেশে শান্তি-সম্প্রীতির জন্য অবদান রাখছেন।
তিন পার্বত্য জেলার ব্যাপারে সেনাপ্রধান বলেন, পার্বত্য জেলায় বিশেষ করে একটু শান্তি-সম্প্রীতির ঘাটতি আছে, সেটি পুষিয়ে নিতে চাই। একটি সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই যাতে পাহাড়ি-বাঙালি সবাই একসঙ্গে বসবাস করতে পারি। তিনি বলেন, পার্বত্য জেলার শান্তির জন্য যা কিছু প্রয়োজন, আমাকে বলা হলে করব। আপনাদের (পাহাড়ি জনগোষ্ঠী) আলাদা ভাষা ও সংস্কৃতি আছে। আমরা এটাকে সম্মান করতে চাই। সংস্কৃতি, ভাষা ও জীবন-বৈচিত্র্য– এটাকে আমরা রক্ষা করতে চাই। এটা আমাদের বিশাল বড় সম্পদ।
তিনি বলেন, পার্বত্য জেলাগুলো চমৎকার প্রাকৃতিক দৃশ্যসংবলিত। এখানে পর্যটকদের গন্তব্য হতে পারে। এখানে স্কুল-কলেজ, মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় করলে পাহাড়ি ভাইবোনরা সুন্দরভাবে পড়াশোনা করতে পারবেন।
মহাসম্মেলনে সেনাপ্রধানের হাতে একটি বুদ্ধমূর্তি তুলে দেন বাংলাদেশ বৌদ্ধ ফেডারেশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া। তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত মাকাওয়াদি সুমিতমোর, ভিয়েতনামের রাষ্ট্রদূত ন্যুয়েন মান কুঅং, অস্ট্রেলিয়ার ডেপুটি হাইকমিশনার নারদিয়া সিম্পসন প্রমুখ।
এদিকে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, গত ১০ অক্টোবর সেনাসদরে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের প্রতিনিধি দল। সে সময় সেনাপ্রধান তিন পার্বত্য জেলায় শুভ প্রবারণা পূর্ণিমা ও কঠিন চীবর দান উদযাপন উপলক্ষে আর্থিক সহায়তা এবং নিরাপত্তার অঙ্গীকার করেন। এরই ধারাবাহিকতায় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক কোটি টাকার চেক অনুদান হিসেবে বুড্ডিস্ট ফেডারেশনকে দেওয়া হয়। এ বছর পার্বত্য চট্টগ্রামসহ সারাদেশে ২৬৬ বৌদ্ধবিহারে যথাযথ ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে কঠিন চীবর দান পালিত হয়েছে।