গাবতলীতে পাইকারি ফুলের বাজার, খুলছে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার : নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ৭:৩৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১, ২০২৩

সেলিনা আক্তার :

দেশে যে কোন অনুষ্ঠানে এখন ফুলের চাহিদা বেড়েছে। আগে শুধুমাত্র বিয়ের অনুষ্ঠান ও কোন অতিথিকে বরণ করে নেয়ার জন্যই মূলত ফুল ব্যবহার করা হতো। সেই চাহিদা বিবেচনায় রেখেই ব্যবসায়ীরা বিদেশ থেকে ফুল আমদানি করতো। আর তা দিয়ে চাহিদা মেটানোর চেষ্টা চালাতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন বদলে গেছে অনেক কিছুই। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশে ফুলের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। দেশে একসময় শুধু গাঁদা, গোলাপ ও রজনীগন্ধা চাষ করা হলেও এখন ১৫-১৬ ধরনের ফুলের চাষ হচ্ছে। একসময় বিদেশ থেকে ফুল আমদানি হত, এখন টিউলিপ, কসমসসহ অনেক বিদেশি জাতের ফুলের চাষ হচ্ছে বাংলাদেশ। ফুল উৎপাদন ও বাজারজাতকারীরা বলছেন, সারা বছরই থাকছে ফুলের বাজার, যার আকার প্রায় ১৬০০ কোটি টাকা।

এ ফুলের সবচেয়ে বড় বাজার রাজধানী ঢাকায়। প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ফুল ঢাকায় আসে। শাহবাগ, আগারগাঁও, মিরপুর ১১সহ বিভিন্ন এলাকায় ফুলের খুচরা বাজার গড়ে উঠলেও, রাজধানীতে ছিল না এ পণ্যটির পাইকারি বাজার। ফুল দ্রুত পচনশীল হওয়ায় এর সংরক্ষণ নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল ব্যবসায়ীদের। এমন বাস্তবতায় আজ শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) গাবতলীতে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত ফুলের পাইকারি বাজার গড়ে তোলা হয়েছে। আর সেই পাইকারি বাজারটি আজ শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হয়েছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ফুলের পাইকারি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভবনে এখনো নির্মাণ হয়নি কোনো দোকান। ৩ তলা বিশিষ্ট ভবনে কোথায় কোন দোকান হবে তাও ঠিক হয়নি। ২০ টন ধারণক্ষমতার দুটি কোল্ডস্টোরেজ রয়েছে নিচ তলায়। এছাড়া ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণের কিছু যন্ত্র বসানো হয়েছে। তবে বাজারে প্রবেশেপথ সরু ও ভাঙাচোরা হওয়ায় ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত। এছাড়া বাজারের সামনে-পেছনে ইট, বালু, সিমেন্ট, ও পাথরের গদি থাকায় ফুল সংরক্ষণ নিয়েও গভীর উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা। ফুলের এই পাইকারী বাজার ঘিরে গাবতলী এলাকায় খুলছে সম্ভাবনার নতুন দুয়া।  সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের।

ফুল ব্যবসায়ীরা জানান, দেরি হলেও তাদের প্রাণের দাবি পূরণ হয়েছে। তবে গাবতলীর বাজার দ্রুত চালু করতে হবে, পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে, তাহলেই তারা লাভবান হবেন। তারা আরও জানান,  সমস্যা সমাধানে নিয়ে তারা কৃষিমন্ত্রী ও কৃষি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের আশ্বাস পেয়েছেন।

ফুল ব্যবসায়ী মহিউদ্দিন নিউজ পোস্টকে বলেন, এটা ঢাকার প্রবেশ পথে পড়েছে, এটা ভালো। কিন্তু অনেক দূরে বা এক পাশে পড়ে গেছে। এখান থেকে আগারগাঁও, শাহবাগের দূরত্ব ভালোই। এখানকার যোগাযোগ নিরাপদ না। আমাদের ব্যবসা শুরু হয় গভীর রাতে। মানে রাত ২টা থেকে ফুল আনা-নেওয়ার কাজ শুরু হয়।

তিনি বলেন, এখানে কোটি টাকার ব্যবসা হবে। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল। এখানে চলার পথে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এখানে আনসার ক্যাম্পের প্রয়োজন। রাস্তা সরু, এটা বাড়ানো দরকার। কেন না এ পথ দিয়ে ট্রাক আসবে। গাবতলী অনেক ঘিঞ্জি আছে, তার ওপরে বেড়িবাঁধ। এখানকার রাস্তা-ঘাট প্রশস্তের প্রয়োজন আছে। না হলে যানজট হবে, চুরি ডাকাতির ভয় থাকবে। এ বিষয়ে আমরা মন্ত্রী ও সংশ্লিষ্টদের অবহিত করেছি।

ফুল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শুধু ভবন নির্মাণ করলাম আর কোনো সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করলাম না, তাহলে তো ব্যবসা হবে না। এখানে দোকান বসাতে আরও ৬ মাসের মতো লাগবে। যেখানে পাইকারি বাজার থাকে, সেখানে খুচরা বাজারও গড়ে উঠে। এখানে বা এ বাজারের আশপাশেও খুচরা বাজার গড়ে উঠবে। এখানে ভালো পরিবেশ নিশ্চিত করা দরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে আরও ৬ মাস লাগবে। এটাকে ঠিক করতে হবে। তবেই সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলব। বাড়বে লোকবল, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গভীর রাতে এ অঞ্চলের জনপথে ফুলপ্রেমী ফুল ব্যবসায়ীদেরও আনাগোনা বাড়বে। সৃষ্টি হবে নতুন এক ইতিহা।  তাই এখনই ক্রেতা-বিক্রেতাদের নিরাপত্তা সার্বিক বিষয়ে বিবেচনায় নিয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হব। তবেই ব্যবসায়ীরা তাদের সার্থকতা পাবে। বাড়বে রাজস্ব খাতের আয়।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার্স সোসাইটির সভাপতি ও ফুলচাষি আব্দুর রহিম নিউজ পোস্টকে বলেন, শাহবাগ ও আগারগাঁয়ের ব্যবসায়ীদের জন্য এ ফুলের বাজার গড়ে উঠেছে। এ উদ্যোগ একটা মাইলফলক, এটা আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল।

তিনি বলেন, ২৫ জেলায় ২০ হাজার কৃষক ফুল চাষ করে। এ মার্কেটের কারণে ফুলের বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে। স্থায়ী এ বাজারের ফলে ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে, ফুল রপ্তানির দুয়ার খুলে যাবে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে আমাদের প্রচুর ফুল নষ্ট হয়। এ বাজারের ফলে এ ক্ষতি কিছুটা কমবে। পাশাপাশি ফুল রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ তৈরি হবে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মাসুদ করিম বলেন, ঢাকায় পাইকারি বাজার করা চাষি ও ফুল ব্যবসায়ীদের প্রাণের দাবি ছিল। কৃষি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এটা করা হয়েছে। এখানে ফুল প্রক্রিয়াজাতকরণের আধুনিক যন্ত্রপাতি রয়েছে। এ উদ্যোগে ফুল ব্যবসার সম্প্রসারণ আরও বাড়বে।