সরকারি আয়-ব্যয়ের নিরীক্ষায় এনবিআর ও অডিট বিভাগের মুখোমুখি অবস্থান
সেলিনা আক্তার:
সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা নিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয় (অডিট বিভাগ) পরস্পর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে।
নতুন প্রস্তাবিত ‘পাবলিক অডিট বিল ২০২৪’ অনুযায়ী সংযুক্ত তহবিলের অর্থসহ ভ্যাট-ট্যাক্স ও ঋণের সঠিক হিসাব সরকারের হাতে পৌঁছেছে কি না, তা নিরীক্ষার পূর্ণ ক্ষমতা দাবি করেছে অডিট বিভাগ। এনবিআর এটি সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে।
২০২৪ সালের প্রস্তাবিত পাবলিক অডিট বিল অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মতামতের জন্য প্রকাশ করে। সংবিধানের ৮৪ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, সরকারি রাজস্ব, ঋণ ও ঋণ পরিশোধ থেকে প্রাপ্ত অর্থ সংযুক্ত তহবিলে জমা হয়। আর ১২৮ অনুচ্ছেদে মহাহিসাব নিরীক্ষককে সরকারি হিসাব নিরীক্ষার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তবে সংযুক্ত তহবিল নিরীক্ষার এখতিয়ার দেওয়া হয়নি।
এনবিআরের দাবি, প্রস্তাবিত আইনের ২(জ) ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (মূসক আইন ও বিধি) ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, ‘এনবিআরের আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কিছু প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এটি সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের লঙ্ঘন।’
অপরদিকে, অডিট বিভাগের উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইন সংবিধানের ১২৭ থেকে ১৩২ অনুচ্ছেদের ভিত্তিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। এটি সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।’
ব্যবসায়ী মহল মনে করছে, প্রস্তাবিত আইন তাদের জন্য ভোগান্তি বাড়াবে। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এশহান বলেন, ‘একটি অডিট শেষ হতে না হতেই আরেকটি অডিট শুরু হচ্ছে। এটি দুর্নীতি রোধ না করে ব্যবসায়ীদের হয়রানি বাড়াবে। বরং পুরো প্রক্রিয়াটি ডিজিটালাইজড করা উচিত।’
অডিট বিভাগ এই শঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বলছে, ‘অডিটের লক্ষ্য কখনোই কোনো প্রতিষ্ঠানের কাজে বাধা সৃষ্টি করা নয়। বরং এটি সহযোগিতার উদ্দেশ্যে করা হয়।’
১৯৭৪ সালে সংবিধানের ১২৮ অনুচ্ছেদ সংশোধন করে মহাহিসাব নিরীক্ষকের ক্ষমতা বাড়ানো হলেও সংযুক্ত তহবিলে তাদের হস্তক্ষেপের অনুমতি দেওয়া হয়নি। নতুন প্রস্তাবিত আইন এ ক্ষমতা দিতে পারে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আইন বিশেষজ্ঞরা।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, ‘প্রস্তাবিত আইন সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তৈরি করতে হবে। না হলে আইনটি প্রশ্নবিদ্ধ হবে।’
অডিট বিভাগের দাবি, নতুন আইন স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে। তবে এনবিআরের মতে, সংযুক্ত তহবিল নিরীক্ষার জন্য আলাদা আইন প্রয়োজন নেই। ব্যবসায়ীদের দৃষ্টিতে, আইনের কারণে ভোগান্তি ও হয়রানি বাড়তে পারে। এই মতবিরোধ নিরসনে দুই পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতাপূর্ণ সমাধান প্রয়োজন।