সাংবাদিকদের আবাসন-কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে: প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ৪:৪৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২, ২০২৩

মোঃ সাইফুল ইসলাম:
জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধুর কন্যা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাংবাদিকদের আবাসন, দশম ওয়েজবোর্ড গঠন ও কল্যাণ তহবিলে ১০ কোটি টাকা দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি গত শনিবার (২৮ অক্টোবর) সাংবাদিকসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন অব জার্নালিস্টসের (বিএফইউজ) সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীদের এ দেশে কোনো অধিকার নেই। তারা মানুষের কল্যাণ বা এ দেশের কল্যাণ চায় না।
তিনি বলেন, আন্দোলন আমরাও করেছি। আন্দোলনের নামে বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করা হয়, সেটি দুঃখজনক। বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবে কথা দিয়েছিল। কিন্তু তারা তা করেনি। সেখানে যেভাবে সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন করা হয়েছে, এটা অমানবিক। আমার মনে হয়, এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা আর দেখা যায়নি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকের মোটরসাইকেল ভেঙে পুড়িয়ে দিয়েছে, পিটিয়ে আহত করেছে। আমরা সাধ্যমতো সহযোগিতা করবো। তবে, চাই তারা সুচিকিৎসা পেয়ে সুস্থ হয়ে উঠুক।
শেখ হাসিনা বলেন, সেখানে তো আমাদের কেউ ছিল না। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আমরা শুধু শান্তিরক্ষা বা শৃঙ্খলা রক্ষার কথা বলেছি। তারাও হামলার শিকার হয়েছে।
এ সময় বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, তারা ২০১৩-১৪ তেও এরকম অগ্নিসন্ত্রাস করেছে। তারা হত্যা-খুন-গুম এগুলো ভালো পারে। এত অমানবিক আচরণ একটা রাজনৈতিক দলের হয় না। বিএনপির আমলে প্রেস ক্লাবে পুলিশ ঢুকিয়ে দিয়ে পিটিয়ে ছিল।
এ সময় গণমাধ্যমের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের কোনো কোনো পত্রিকা এটা (২৮ অক্টোবরের ঘটনা) কভার দেওয়ারও চেষ্টা করে, তাদের ধিক্কার জানাই। দেখা গেলো, যুবদলের একজন নেতা প্রেস লেখা জ্যাকেট পরে আগুন দিচ্ছে, পুলিশ পেটাচ্ছে। তারা ভেবেছিল, রেহাই পেয়ে যাবে। ধরা তো পরে গেছে। এর শাস্তি হবে।
গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলো সামান্য কিছু হলেই বিবৃতি দেয়। এখন তারা কোথায়? আমাদের দেশের সুশীল বাবুরা কোথায়? শুধু আওয়ামী লীগে কিছু হলেই বড় করে দেখায়? মানবাধিকার সংগঠনগুলো চুপ কেন? এদের বিবেক বলে কী কিছু নেই? আওয়ামী লীগের পান থেকে চুন খসলেই তাদের কণ্ঠে অনেক জোর দেখা যায়। এখন বিড়ালের মতো মিউ মিউ করলেও তো দেখতাম। তাও তো দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, ফিলিস্তিনে যেভাবে হাসপাতালে হামলা হয়েছে, এখানেও। জানি না তারা এই শিক্ষাটা ইহুদিদের থেকে পেয়েছে কি না।
সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তিনি বলেন, একটা জমির আবেদন দিয়েছেন আমি দেখবো। জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করে দেবো। সেখান থেকে আপনারা আবাসন যাতে পান, সে ব্যবস্থা করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা উচ্চমানের। এ পেশা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে। আমি সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে আরও ১০ কোটি টাকা অনুদান দেবো। মালিকরাও কিছু কিছু দিয়েন। কারা দিলেন আমরা কিন্তু দেখবো।
তিনি বলেন, মালিকরা কেন কল্যাণ ট্রাস্টে অনুদান দেন না? না দিলে বন্ধ করে দিতে পারি। করতে চাই না। কিন্তু ব্যবস্থা আছে। কল্যাণ ট্রাস্টে ফান্ড দেবে, তারপর চলবে। এখানে অনেক মালিক আছেন তো তাই বললাম। দেখি ভয় পেয়ে কিছু দেয় নাকি!
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন মালিকদের দায়িত্ব। সেটা বাস্তবায়ন না করে মামলা করলে সেটা দুর্ভাগ্যজনক। দশম ওয়েজবোর্ডের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সেটা আমরা দেবো। টেলিভিশনের সাংবাদিকদেরও আমরা ওয়েজবোর্ডের আওতায় আনবো। অনেক সময় আপনাদের মধ্যে নানামতের কারণে অনেক কিছু সময়মতো করা যায় না, এটায় আমাদের দোষ দিয়ে লাভ নেই। তবে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডে নিয়ে আসতে হবে। সামনে ওয়েজবোর্ড গঠনে মাথায় রাখতে হবে।

তিনি বলেন, সাংবাদিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। কল্যাণ ট্রাস্ট গঠন করে দিয়েছি। এর বাইরেও প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ তহবিল থেকে অসুস্থ ও ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগিতা দিয়ে থাকি। আজ এখানে আসার আগেও কিছু ফাইল দেখে এসেছি, সাধ্যমতো দেওয়ার চেষ্টা করেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ যত বেশি, সংবাদপত্র তার চেয়েও বেশি। উন্নত দেশেও এত সংবাদপত্র নেই। এর বাইরেও দেশে বর্তমানে ৩৩টি বেসরকারি টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে। আরও ১৫টা সম্প্রচারের অপেক্ষায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নিজেও সাংবাদিক ছিলেন। যার কারণে আপনাদের মাঝে এলে আমি দাবি করি, আমি আপনাদেরই পরিবারের একজন। সাংবাদিক কলাকুশলীদের যাতে কর্মসংস্থান হয়, সব কিছু বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তথ্য অধিকার আইন, তথ্য কমিশন ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ করেছি।
তিনি বলেন, আমি ফিরে এসেছিলাম এমন একটি দেশে, যেখানে আমি আমার বাবা-মার হত্যার বিচার চাইতে পারবো না। ইনডেমনিটি দিয়ে সেটির পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। যে আদর্শ নিয়ে এ দেশের মানুষ জাতির পিতার ডাকে সাড়া দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতা এনেছে, সেটি বৃথা যেতে পারে না। স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধুর লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমি এসেছি। আমাদের প্রচেষ্টা দেশের মানুষের জন্য কাজ করা।
সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবে বিএফইউজে প্রতিনিধি সম্মেলন শুরু হয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য, সম্প্রচারমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। সম্মেলনে এখন বক্তব্য রাখেন বিভিন্ন জেলা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিরা। দ্বিতীয় পর্বে বিকেল ৩টায় একই স্থানে দেশের সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।