সাগর-রুনি হত্যা মামলা বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার বড় উদাহরণ

প্রকাশিত: ৭:০৪ অপরাহ্ণ, মে ১৩, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

হাইকোর্ট এক রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলা ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রিতার বড় উদাহরণ।মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ঘোষণার রায়ে আজ (সোমবার) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ পর্যবেক্ষণ দেন।

হাইকোর্ট বলেন, সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিগত ১২ বছর ধরে তদন্ত হচ্ছে, এখনও তদন্ত শেষ হচ্ছে না। বিচার তো আরও পরের স্টেজ। আমাদের দেশে ট্রায়াল স্টেজ শেষ হতেই ৫ থেকে ১০ বছর সময় লেগে যায়।এই ধরনের বিলম্ব যেখানে হয় সেখানে মৃত্যুদণ্ডের আসামিকে নির্জন সেলে ১৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত যদি বন্দি রাখা হয় তাহলে তাকে ডাবল শাস্তি দেওয়া হয় বলে মন্তব্য করেন আদালত।

আইনজীবী শিশির মনির বলেন, রায়ে আদালত আরও বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দির বিষয়ে তথ্য চাইলে (সাংবাদিক, গবেষক) আইন অনুসারে তা কারাকর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির বিষয়ে সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রারকেও আইন অনুসারে তথ্য দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক রিপোর্টেও এসব আসামির তথ্য সন্নিবেশিত করতে বলা হয়েছে।

আদালত বলেছেন, আমাদের দেশে হাইকোর্ট বিভাগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির জামিনের দরখাস্ত শুনানি করা হয় না। বাকি আসামিদের জামিনের দরখাস্ত যেমন সহসাই শুনানি হয় এবং তারা জামিন লাভ করেন। কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হলে তার জামিনের আবেদন আর শুনানি হয় না। আদালত বলেছেন, অন্যান্য আসামিদের মতো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের জামিনের আবেদনও যেন শুনানি করা হয়।

রায়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছেন আদালত।এক রিট পিটিশনের চূড়ান্ত রায়ে আজ (সোমবার) এই ঘোষণা দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি মো. বজলুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সাড়ে ৩ ঘণ্টাব্যাপী রায় ঘোষণা করা হয়।

রায়ে বলা হয়েছে, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির আপিল, রিভিউ, রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ধাপগুলো নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা যাবে না। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড চূড়ান্ত হওয়ার আগে সারা দেশে যত আসামিকে কনডেম সেলে রাখা হয়েছে তাদের দুই বছরের মধ্যে ক্রমান্বয়ে সাধারণ সেলে রাখার কথা বলা হয়েছে। তবে, বিশেষ কারণে (স্বাস্থ্যগত কারণ, সংক্রামক রোগ) কোনো ব্যক্তিকে নির্জন কক্ষে রাখতে পারবে কারা কর্তৃপক্ষ। সেক্ষেত্রে ওই ব্যক্তির উপস্থিতিতে শুনানি হতে হবে।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট আসাদ উদ্দিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এমএমজি সারোয়ার পায়েল, নাসিম ইসলাম রাজু।আইনজীবীরা বলেছেন, এটি একটি ঐতিহাসিক রায়।

গত বছরের (২০২৩) ১২ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত হওয়ার আগে আসামিদের কনডেম সেলে বন্দি রাখা কেন বেআইনি হবে না এবং কেন জেলকোডের ৯৮০ বিধি অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হবে না, এই মর্মে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়।এর আগে ওই বছরের ৫ এপ্রিল এ বিষয়ে রুল জারি করেছিলেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে কনডেম সেলে থাকা বন্দিদের বিষয়ে ছয় মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয় সেদিন। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন।

২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর মামলা চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হওয়ার আগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে কনডেম সেলে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।চট্টগ্রাম কারাগারে কনডেম সেলে থাকা জিল্লুর রহমানসহ মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দির পক্ষে আইনজীবী শিশির মনির এ রিট দায়ের করেন।

রিট আবেদনকারীরা হলেন– চট্টগ্রাম কারাগারের কনডেম সেলে থাকা সাতকানিয়ার জিল্লুর রহমান, সিলেট কারাগারে থাকা সুনামগঞ্জের আব্দুল বশির ও কুমিল্লা কারাগারে থাকা খাগড়াছড়ির শাহ আলম। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই তিন আসামির আপিল হাইকোর্ট বিভাগে বিচারাধীন রয়েছে।