গাজীপুর প্রতিনিধি:
কোথাও লেখা নেই— তবুও ‘মেয়র ভবন’ নামে পরিচিত বাড়িটি। গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম ও তার মা সাবেক সিটি মেয়র জায়েদা খাতুনের বাড়ি। ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে মহানগরের ছয়দানা এলাকার এই বাড়িতেই সাবেক মেয়র মা-ছেলে বসবাস করতেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় বিক্ষুব্ধ জনতা বাড়িটি ভাঙচুর ও পুড়িয়ে ফেলে।
৫ আগস্টের পর থেকে বাড়িটি সুনসান নীরব। সম্প্রতি তিন তলা ওই বাড়ির সামনে বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পাশেই টানিয়ে রাখা হয়েছে দুইটি সাইনবোর্ড।
এতে লেখা রয়েছে— ‘পৈত্রিক সূত্রে এই জমির মালিক: সাইফুল ইসলাম, মাসুদা বেগম, মাসুদ মণ্ডল, মামুন মণ্ডল, কামরুন্নাহার ও সামসুন্নাহার।’ মূলত তারাই বাঁশের বেড়া দিয়ে বাড়িটি বন্ধ করে রেখেছেন।
সাইনবোর্ডে লেখা জমির মালিক দাবিদার সাইফুল ইসলাম বলেন, অন্তত দশ বছর আগে ফাইজ উদ্দিন নামে জনৈক এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিছু জায়গা কিনে জাহাঙ্গীর বাড়ির নির্মাণকাজ শুরু করেন। কিন্তু ওই জায়গার সামনের অংশে ছিল আমাদের এক কাঠা পৈত্রিক সম্পত্তি। আমাদের স্থাপনাও ছিল। ফাইজ উদ্দিনের কাছ থেকে জায়গা কেনার আগে জাহাঙ্গীর আলম পার্শ্ববর্তী আব্দুল হালিমের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন।
তিনি বলেন, আমি ওই স্থানে মার্কেট নির্মাণ করে একটিতে নিজে দোকান করতাম এবং অন্য দুইটি দোকান ভাড়া দিয়েছিলাম। আমাদের জায়গা ছাড়া জাহাঙ্গীর তার কেনা জমিতে কোনো ভাবেই যেতে পারছিলেন না। তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য ওই জমির কোনো বিকল্প ব্যবস্থাও ছিল না। একপর্যায়ে জাহাঙ্গীর তার মামা প্রয়াত আলম মিয়ার মাধ্যমে ২০১৫ সালে ৩০ লাখ টাকা দাম ধরে আমাদেরকে চাপ প্রয়োগ করে ওই এক কাঠা জমি তিনি কিনেন নেন। কিন্তু টাকা দেননি। বায়না হিসেবে ৫ লাখ টাকা দিয়ে ছিলেন। রেজিস্ট্রিও হয়নি। আমার দোকানপাট ভেঙে তাকে জায়গা বুঝিয়ে দেই। কিন্তু তিনি কথা রাখেননি। বেঈমানি করেছেন।
সাইফুল বলেন, আমাদের জমি বিক্রির টাকার জন্য বছরের পর বছর তার পেছনে ঘুরেছি। পাত্তা দেননি। জমিটা রেজিস্ট্রি করে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছি, তিনি শুনেনি। ক্ষমতার দাপটে তার কাছে আমরা অসহায় ছিলাম। সম্প্রতি আমরা আমাদের জায়গায় বাঁশের বেড়া ও সাইনবোর্ড দিয়েছি। কিন্তু জাহাঙ্গীরের লোকজন সেগুলো ফেলে দিয়েছে। দ্বিতীয় দফায়ও বেড়া দেই, সেটা ভেঙে ফেলে। অবশেষে দু’দিন আগে তৃতীয় দফা বেড়া ও সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছি। বর্তমান বাজার মূল্যে আমাকে টাকা দিলে এখনও জমি তাকে দিয়ে দেব, যোগ করেন তিনি।
আত্মগোপনে থাকার কারণে বিষয়টি নিয়ে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোন কিংবা হোয়াটসঅ্যাপেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে পুলিশও কিছু জানে না বলে জানিয়েছেন গাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী মো. রাশেদ।