সামরিক বাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বে? চাইলেন ক্ষমা নেতানিয়াহু

প্রকাশিত: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৯, ২০২৩

ডেস্ক রিপোর্ট :

গত ৭ অক্টোবরের হামাসের হামলার ব্যাপারে গোয়েন্দারা তথ্য দিতে ব্যর্থ হয়েছেন বলে মন্তব্য করে ব্যাপক তোপের মুখে পড়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর ওই মন্তব্যের পর ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন জরুরি মন্ত্রিসভায় ফাটল দেখা দিয়েছে। তার এমন মন্তব্যের পর ইসরায়েলের রাজনীতিতে উত্তাপ সৃষ্টি এবং প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাথে বিবাদ স্পষ্ট হওয়ায় অবশেষে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
দক্ষিণ ইসরায়েলে তিন সপ্তাহ আগে হামাসের হামলা ঘিরে গোয়েন্দা তথ্য এবং কার্যক্রমের ব্যর্থতার দায় নেতানিয়াহু না নিয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাঁধে চাপিয়ে দেওয়ায় জনগণের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। রোববার স্থানীয় সময় রাত ১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে গোয়েন্দাদের ব্যর্থতার কারণে ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে মন্তব্য করেন নেতানিয়াহু। এ নিয়ে ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোপের মুখে পড়েন তিনি। পরে এক্সে দেওয়া পোস্ট মুছে দিয়ে সামরিক বাহিনী ও মন্ত্রিসভার সদস্যদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।

হামাসের হামলায় ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেটসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি অর্থমন্ত্রী পর্যন্ত নিজেদের ব্যর্থতা স্বীকার করলেও নেতানিয়াহু তা করেননি। তিনি কেবল বলেছেন, যুদ্ধের পর তিনিসহ অন্যদের কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে।
রোববার ইসরায়েলে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় নেতানিয়াহুর মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কোনো মন্তব্য জানাতে অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যুদ্ধে রয়েছি, যুদ্ধের দিকে মনোনিবেশ করছি।’

নেতানিয়াহুর এক্সে দেওয়া পোস্টে বলা হয়, হামাসের যুদ্ধের আগ্রহ সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে কোনো সময় এবং কোনো পর্যায়েই সতর্ক করা হয়নি। বিপরীতে সামরিক গোয়েন্দা প্রধান এবং শিন বেটের প্রধানসহ নিরাপত্তা কর্মকর্তারা ধারণা করেছিলেন, যুদ্ধের ব্যাপারে হামাসের সক্ষমতা এবং আগ্রহ নেই।
এই মন্তব্যের পর ইসরায়েলে সাবেক ও বর্তমান মিত্রদের তোপের মুখে পড়েন নেতানিয়াহু। ইসরায়েলের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্তজ; যিনি নেতানিয়াহুর বর্তমান যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য, তিনিও নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা করেন।

এক্সে গ্যান্তজ লিখেছেন, নেতানিয়াহু যা বলেছেন তা প্রত্যাহার এবং বিষয়টি নিয়ে কথা না বলা উচিত। তিনি লেখেন, আমরা যুদ্ধে রয়েছি। এই সময় নেতাদের অবশ্যই দায়িত্ব প্রদর্শন ও সঠিক কাজ করার সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাহিনীকে এমনভাবে শক্তিশালী করতে হবে, যাতে তারা পরিস্থিতির দাবি অনুযায়ী, সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

গত ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার ঘটনাকে ইসরায়েলের ৭৫ বছরের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ হিসেবে দেখা হচ্ছে। হামাসের হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় বিধ্বংসী বিমান হামলা চালিয়ে আসছে। ইরান-সমর্থিত গাজার ক্ষমতাসীন এই গোষ্ঠীকে নির্মূল এবং ইসরায়েল থেকে অপহৃত বন্দীদের গাজায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েল।

নেতানিয়াহুর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বর্তমান বিরোধীদলীয় আইনপ্রণেতা আভিদগোর লিবারম্যান বলেছেন, আমি রাতে তার এক্স বার্তা দেখেছি, যা কেবল একটি বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করে : নিরাপত্তা এবং জিম্মিদের বিষয়ে তার কোনো আগ্রহ নেই। তিনি কেবল রাজনীতিতে আগ্রহী।

নেতানিয়াহুর সাবেক সরকারের অধীন ইসরায়েলের গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের প্রধান ছিলেন ইয়োসি কোহেন। ইসরায়েল রেডিওকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনাকে কাজের শুরু থেকে দায়িত্ব দিতে হবে, মাঝখান থেকে নয়। আমি যখন মোসাদের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, উদাহরণস্বরূপ … সেই সময় যা ঘটেছিল, তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমারই দায় ছিল।’