সামর্থ্যের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই আবাহনীর

প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, মে ১৬, ২০২৪

স্পোর্টস ডেস্ক রিপোর্টঃ 

ক্রিকেটে আবাহনী চ্যাম্পিয়ন। পরপর দুই বার লিগের ট্রফি ঘরে তুলল। ক্রিকেটে যখন আবাহনী আলো ছড়াচ্ছে, তখন একই ছাদের নিচে অন্ধকারে ডুবছে ফুটবল। লিগের ট্রফি গেছে, ফেডারেশন কাপ ফুটবলের ট্রফিও গেছে। গত মৌসুমে ফাইনাল খেলেছিল। এবার সেমিফাইনাল থেকে বিদায় আবাহনীর।

মঙ্গলবার বসুন্ধরা কিংসের কাছে ৩-০ গোলে হেরে বিধ্বস্ত আবাহনী এখনো গোপালগঞ্জেই রয়ে গেছে। গতকাল বিকালে হালকা ওয়ার্ম-আপ করছিল জেলা স্টেডিয়ামে। ফুটবল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম জানালেন লিগের খেলা আছে, ব্রাদার্সের বিপক্ষে শুক্রবার। ম্যাচটা শেষ করে ঢাকায় ফিরবে আবাহনী।ফেডারেশন কাপের সেমিফাইনালে বাজে ফুটবল খেলেছে আবাহনী। খুবই হতাশজনক। আকাশি-নীল সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা করেছেন। কঠোর ভাষায় হতাশার কথা লিখেছেন। লিগে আবাহনী এখন রানার্সআপ হওয়ার দৌড়ে।

ব্রাদার্স ছাড়াও চট্টগ্রাম আবাহনী ও মোহামেডানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ আবাহনীর। কী হবে, তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে সমর্থকরা আবাহনীর পারফরম্যান্স নিয়ে কর্মকর্তাদের তীরবিদ্ধ করছেন। আবাহনীর ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন। বলছেন আবাহনীর ফুটবল নীতিনির্ধারকরা ঘুমিয়ে আছেন। ক্লাবের বিখ্যাত সব কর্মকর্তা থাকার পরও কেন আবাহনীর এই অবস্থা হবে। তারা কি ফুটবলে খেয়াল রাখছেন না, নাকি ফুটবল নিয়ে কর্মকর্তাদের ভাবনা নেই? শুধু ক্রিকেট নিয়েই থাকতে চায় আবাহনী।

কথা বলছেন না আবাহনীর ডাইরেক্টর ইনচার্জ কাজী নাবিল আহমেদ। ফুটবল ম্যানেজার নজরুল ইসলাম যেন মুখে কুলুপ এঁটেছেন। একসময় যিনি ফুটবল খেলছেন, দেশকে ট্রফি এনে দিয়েছেন, তিনি নাকি কিছুই বুঝতে পারছেন না। নাকি বলতে চাইছেন না। কথা বলতে চাইলে বিদায় নেওয়ার জন্য নজরুল ব্যাকুল হয়ে ওঠেন। দলের যখন দুর্দশা, এই অবস্থা, তখন ম্যানেজারের দায়িত্ব হারানোর শঙ্কায় ছেড়ে দিতেও পারছেন না। নজরুলের কণ্ঠে আভাস মেলে, সত্যকথাও প্রকাশ করতে পারছেন না সাবেক এই ডিফেন্ডার। কী কারণে ফুটবল দলের করুণ হাল? এই প্রশ্নে ফোন রাখতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নজরুল। মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বললেন, ‘অনেক কারণ আছে। সবকথা কি আমার বলা ঠিক হবে? আমরা পারছি না। এটা তো সবাই দেখছে।’ কী কারণে পারছে না? নজরুলের সোজা সাপ্টা জবাব, ‘খেলতে পারি নাই’। কী কারণে খেলতে পারছে না, তার নূন্যতম ব্যাখ্যা নেই।

দলের বর্তমান খেলোয়াড় নিয়ে অনেক কথা হয়। গুঞ্জন, দলবদল করে অন্য ক্লাবে কথা পাকা করেছেন অনেকেই, এমন প্রশ্নে নজরুল বললেন, ‘আমি ভাই এ ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারব না। সময়মতো কথা বলব। আমাদের সামনে এখনো তিন ম্যাচ বাকি রয়েছে। মাঠে খেলা থাকাকালীন কোনো কথা বলতে পারব না।’ নজরুলের কথা হচ্ছে, এসব বিষয় নিয়ে এখন কোনো মন্তব্য করলে বাকি তিন ম্যাচে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।’ নেতিবাচক খেলা খেলতে খেলতে আবাহনী এমন এক অবস্থায় এসেছে, যেখান থেকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। সব হারিয়ে আবাহনী এখন বৈঠা ছাড়া নৌকা, কূল-কিনারাহীন সাগরে ভেসে বেড়াচ্ছে।

ডিফেন্ডাররা বাজে খেলছে। গোলরক্ষক বাজে খেলছে। মাঝমাঠে শক্তি নেই। আক্রমণে দেশি-বিদেশি ফুটবলাররা তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে যেতে পারছেন না। আর্জেন্টাইন কোচ আন্দ্রেস ক্রুসিয়ানি পরিকল্পনা দিচ্ছেন কিন্তু মাঠে নেমে হচ্ছে তার উলটো। নজরুল বলছেন, ‘সামর্থ্যের বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা নেই আমাদের।’ ‘আবাহনীর কোটি কোটি ভক্ত। মাঠে কম আসেন। সমর্থকচাপ নেই। আসলাম, মুন্নাদের সময় ফুটবলে খারাপ করলে ঢিল ছুড়ে আঘাত করা হতো। মাঠ থেকে ফিরে ক্লাবে গিয়ে দেখেছেন বিছানাপত্র বাইরে পড়ে আছে। খেলোয়াড়রা রুমের বাইরে যেতে পারতেন না। ক্লাব কর্মকর্তারা বাইরে মুখ দেখাতে পারতেন না। সমর্থকচাপে থাকা সেই আবাহনী কোথায়? সমর্থকচাপ থাকলেই ভালো হতো,’ বললেন নজরুল।