সারাদেশে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে ঈদে মিলাদুন্নবী পালিত

প্রকাশিত: ৩:১৬ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় সারাদেশে পবিত্র ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সা.) পালিত হচ্ছে। এ দিনটি মানব জাতির মহোত্তম পথপ্রদর্শক মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাতের দিন। দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) নামে পরিচিত। মুসলমানরা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে এ দিনটি পালন করছেন। প্রায় সাড়ে ১৪শ’ বছর আগে এই দিনে আরবের পবিত্র মক্কার মরু প্রান্তরে মা আমিনার কোল আলো করে জন্ম নিয়েছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)। আবার এই দিনে তিনি মহান আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দিয়ে পৃথিবী ছেড়ে চলে যান।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে এ দিনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। এ দিনটি উপলক্ষে  রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দেন। এ সময় দেশের সব সরকারি ও বেসরকারি ভবন ও অফিস প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও দূতাবাসগুলোতেও জাতীয় পতাকা উত্তোলিত হয়। সরকারি উদ্যোগে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গৃহীত হয়।
এ দিনটি উপলক্ষে বেসরকারিভাবেও বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। মসজিদ, মাদরাসা, মাজার ও দরবার শরীফগুলোতে আলেম-ওলামাসহ ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে মাহফিল ও জুলুসসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) আজ মসজিদে নববী (সা.), এখানেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রওজা শরিফ
ঢাকা: মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্ম ও ওফাতের স্মৃতিময় দিন আজ, বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) ১২ রবিউল আউয়াল। অত্যন্ত মর্যাদা ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে দিনটি বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলমানদের কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) হিসেবে পালিত হয়। ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের এই দিনে সৌদি আরবের মক্কা নগরে বিখ্যাত কোরাইশ বংশে মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) জন্মগ্রহণ করেন। ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের একই দিনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন। তাঁর বাবা আবদুল্লাহ ও মা আমিনা। জন্মের আগেই রাসুল (সা.) তাঁর বাবাকে হারান এবং ছয় বছর বয়সে তিনি মাতৃহারা হন।

আরব জাহান যখন পৌত্তলিকতা ও অনাচারের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল, সেই আইয়ামে জাহেলিয়ার সময় মহান আল্লাহ সত্য, ন্যায়, কল্যাণ ও একত্ববাদ প্রতিষ্ঠায় তাঁর প্রিয় হাবিবকে অপার রহমত হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন। এ কারণে রাসুল (সা.)-কে সম্মান জানিয়ে রাহমাতুল্লিল আলামিন হিসেবেও সম্বোধন করেছেন মহান আল্লাহ। বিনয়, সহিষ্ণুতা, দয়া, সহমর্মিতাসহ সব মানবিক সদগুণের সর্বোচ্চ বিকাশ ঘটেছিল তাঁর মধ্যে। শ্রেষ্ঠ মানবিক গুণাবলির অধিকারী হিসেবে তিনি ধর্ম-বর্ণ-সম্প্রদায় নির্বিশেষে সর্বকালে সর্বজনস্বীকৃত। ন্যায়পরায়ণতা ও সত্যবাদিতার জন্য শৈশবেই তিনি ‘আল আমিন’ উপাধিতে ভূষিত হয়েছিলেন। সব নবী ও রাসুলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মহানবী (সা.) ৪০ বছর বয়সে নবুয়ত পান।

এরপর ২৩ বছর তিনি তৌহিদের বাণী প্রচার করেছেন। আধ্যাত্মিকতার পাশাপাশি ব্যক্তিজীবনে এবং সমাজে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।

ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা বেশি বেশি দরুদ পাঠ, কোরআন তিলাওয়াত, দান-খয়রাতসহ নফল ইবাদতের মধ্য দিয়ে দিনটি অতিবাহিত করেন। এ ছাড়া রাসুল (সা.)-এর জীবনী নিয়েও আলোচনার আয়োজন থাকবে। গতকাল বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বাদ মাগরিব বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান শুরু হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে এর উদ্বোধন করেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান। এর আগে বাদ আসর মসজিদের দক্ষিণ চত্বরে মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলার উদ্বোধন করেন তিনি।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পবিত্র কোরআনখানি ও দোয়া মাহফিল, ১৫ দিনব্যাপী ওয়াজ, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, বাংলাদেশ বেতারের যৌথ প্রযোজনায় সেমিনার, ইসলামী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, আরবি খুতবা লিখন প্রতিযোগিতা, কিরাত মাহফিল, হামদ-নাত, স্বরচিত কবিতা পাঠ, ইসলামী ক্যালিগ্রাফি প্রদর্শনী, মাসব্যাপী ইসলামী বইমেলা, বিশেষ স্মরণিকা ও ক্রোড়পত্র প্রকাশ। এ ছাড়া ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সব বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়, ৫০টি ইসলামিক মিশন ও সাতটি ইমাম প্রশিক্ষণ একাডেমিতে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আজ সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মাহকে মোবারকবাদ জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেতৃবৃন্দ বলেন, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন বিশ্ব শান্তির অগ্রদূত। তার সার্বজনীন শান্তির বার্তা দুনিয়ার সর্বত্র ছড়িয়ে দিতে হবে। সমাজে সাম্য ও সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠায় তাঁর আদর্শের কোনো বিকল্প নেই। আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কোরআনুল কারীমে বলেছেন, আমি আপনাকে পুরো জগদ্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং-১০৭)। জীবনের সব ক্ষেত্রের জন্যই প্রিয়নবী (সা.) আমাদের আদর্শ। কোরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, রসূলুল্লাহ (সা.)-এর জীবনেই তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ। (সূরা আহজাব, আয়াত নং-২১)।

নেতৃবৃন্দ বলেন, এক সময় গোটা আরব অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল। তারা আল্লাহকে ভুলে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হয়ে পড়েছিল। আরবের সর্বত্র দেখা দিয়েছিল অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা। এ যুগকে বলা হতো আইয়ামে জাহেলিয়াত। তখন মানুষ হানাহানি ও কাটাকাটিতে লিপ্ত ছিল এবং মূর্তিপূজা করতো। অন্ধকার সেই যুগ থেকে মানবকুলের মুক্তিসহ তাদের আলোর পথ দেখাতে মহান আল্লাহ তা‘আলা রসূলুল্লাহকে (সা.) প্রেরণ করেন এই ধরাধামে। মহানবী অতি অল্প বয়সেই আল্লাহর প্রেম অনুরক্ত হয়ে পড়েন এবং প্রায়ই তিনি হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকতেন।

বাংলাদেশসহ বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় এ দিনটি ঈদে মিলাদুন্নবী হিসেবে পালন করে থাকেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী পালনের জন্য সরকার, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এসব কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে মহানবী (সা.)-এর ওপর আলোচনা, র‌্যালী, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (স.) উদযাপন উপলক্ষে দেশের সব হাসপাতাল, কারাগার, সরকারি শিশুসদন, বৃদ্ধ নিবাস, মাদকাসক্তি নিরাময়কেন্দ্রে উন্নত খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্নডারীয়া : পবিত্র ঈদ এ মিলাদুন্নবী (সা.)- উপলক্ষে আজ রমনাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে আনজুমানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্নডারীয়া চট্টগ্রাম এর উদ্যোগে নগরীতে বিশাল বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের করা হয়। এর আগে রমনা মিলনায়তনে মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন তথ্য মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

অপরদিকে গুলিস্তানের মহানগর নাট্যমঞ্চে আশেকানে রহমানিয়া মইনীয়া মাইজভান্নডারীয়া আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান।

ঢাকাস্থ রাজারবাগ দরবার শরীফে ১২ রবিউল আওয়াল উপলক্ষে বেশ কিছু কর্মসূচি পালিত হয়। যেমন বিশেষ ওয়াজ ও দোয়ার মাহফিল, প্রিয় নবীজির জীবনী নিয়ে রচিত বই প্রদর্শনী, সুন্নতি দ্রব্যের প্রদর্শনী এবং শতাধিক সুসজ্জিত গাড়িতে রাজধানীর রাস্তায় বিশেষ র‌্যালী বের করা হয়।

বিভিন্ন সভায় নেতৃবৃন্দ বলেন, প্রিয় নবীর আগমনেই বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। তার পূর্বে সারা বিশ্ব অশান্তির দাবানলে ভষ্মিভূত ছিল। কোন কিছুর বালাই ছিলনা। হাহাকার আর অসহায়ত্ব মানুষের সম্ভব ছিল। বিশ্ব নবির আগমনে সকল অন্যায়-অত্যাচারের কবর রচনা হয়। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সাম্প্রদায়িক-সম্প্রীতি সমন্বিত রাষ্ট্র ব্যবস্থা গঠনে প্রিয় নবির আদর্শের কোন বিকল্প নেই। সকল ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করেছিলেন বলেই আজ তিনি বিশ্বে মহান। সুতরাং আল্লাহর প্রেরিত এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানের ঈমানী দায়িত্ব। এ সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে। পরে পৃথক দুটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি জাতীয় প্রেসক্লাব ও জিরো পয়েন্ট থেকে বের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে পল্টন মোড় ও জিরো পয়েন্টে গিয়ে শেষ হয়।