সারাদেশে হরতাল-অবরোধের ২৫ দিনে ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগ

প্রকাশিত: ৯:২৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:
চলতি বছরের গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশের পর থেকে ধাপে ধাপে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। এসব কর্মসূচি ঘিরে সারাদেশে ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হাতেনাতে গ্রেফতার হয়েছেন ৪৫ জন। আজ বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) এসব তথ্য জানান পুলিশ সদরদপ্তরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) মো. মনজুর রহমান।


পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, দেশব্যাপী অবরোধ ও হরতালে গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত ২৭৫টি যানবাহন ভাঙচুর, ২৪টি স্থাপনা ভাঙচুর ও ১১টি অন্যান্যসহ মোট ৩১০টি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এছাড়া ২৯০টি যানবাহন, ১৭টি স্থাপনা ও ৬৯টি অন্যান্যসহ মোট ৩৭৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।
গত ২ নভেম্বর ঝালকাঠি জেলায় আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর, ৫ নভেম্বর পিরোজপুর এবং ৬ ও ১৫ নভেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলায় আওয়ামী লীগের দুটি অফিসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুবৃর্ত্তরা।


গাজীপুরের শ্রীপুর থানার বরমী ইউনিয়নের ১৩২ নম্বর গিলাশ্বর মরহুম আ. জব্বার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টিনের তৈরি স্কুল ঘরে অগ্নিসংযোগ করা হয় ১৯ নভেম্বর। দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে বিদ্যালয়টির ৪টি বেঞ্চ ও একটি টিনের জানালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

গত ২৯ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ঘটনায় কর্তব্যরত অবস্থায় এক পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন নিহত হয়েছেন।


পুলিশ সদরদপ্তর আরও জানায়, অবরোধ চলাকালে ৩১ অক্টোবর থেকে ২২ নভেম্বর পর্যন্ত রেলওয়েতে ২৪টি নাশকতার ঘটনা ঘটেছে।

 

 

এরমধ্যে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন, টাঙ্গাইল ও জামালপুরে ৩টি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ঢাকা মহানগরে একটি, ময়মনসিংহে ২টি, গাজীপুরে একটি, নেত্রকোনায় একটি এবং নওগাঁয় একটিসহ ৬টি ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। কিশোরগঞ্জে একটি, নোয়াখালীতে ২টি, সিলেটে একটি, পাবনায় একটি, দিনাজপুরে একটি ও গাজীপুরে ৩টিসহ রেললাইনে ৯টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

এছাড়া সিলেট, ময়মনসিংহ ও কিশোরগঞ্জে রেললাইন কেটে ফেলার চেষ্টার ৩টি এবং গাইবান্ধায় রেললাইনের ফিস প্লেট খোলার চেষ্টার ঘটনা ঘটে। পাবনায় ট্রেনে পেট্রোল ও ডিজেল ভর্তি বোতল নিক্ষেপ করা হয়। এছাড়া, নারায়ণগঞ্জে রেললাইনের ওপরে অতিরিক্ত ৩ ফুট লম্বা ও ৩ ইঞ্চি চওড়া পাত সংযোজন করে নাশকতার চেষ্টা করা হয়।


চলতি বছরের গত ২৮ অক্টোবর থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা মহানগর এলাকায় গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ২৯ জনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরমধ্যে রমনায় ২ জন, বংশালে ২ জন, মুগদায় ৪ জন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলে ২ জন, মোহাম্মদপুরে একজন, পল্লবীতে ৮ জন, কাফরুলে একজন, গুলশানে ৫ জন, ক্যান্টনমেন্টে একজন, খিলক্ষেতে ২ জন ও উত্তরা (পূর্ব) একজন।
এছাড়া গত ২৮ অক্টোবর থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত কুমিল্লা জেলায় অবরোধ ও হরতালের সময় পিকেটিং ও অগ্নিসংযোগ করাকালে ৬টি ঘটনায় হাতেনাতে ১৭ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এরমধ্যে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় একজন ও পিকেটিং করাকালে ১৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারদের অনেকেই নিজেদের সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে নাশকতাকারীরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘প্রেস’ লেখা জ্যাকেট পরে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, যা জনগণের কাছে এখন স্পষ্ট বলেও উল্লেখ করেছে পুলিশ সদরদপ্তর। ভাঙচুর ও নাশকতামূলক হিংসাত্মক কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বাংলাদেশ পুলিশ সবার প্রতি আহবান জানিয়েছে।

এছাড়া অবরোধ-হরতালে পরিবহন বা স্থাপনা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগকারীদের উপযুক্ত প্রমাণসহ ধরিয়ে দিলে অথবা সুনির্দিষ্ট তথ্য দিলে ২০ হাজার টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। তথ্য প্রদানকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে বলেও জানান পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার এই কর্মকর্তা।