সিটি নির্বাচন: বরিশালের ৮৪ ও খুলনার ৫৬ শতাংশ ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ, বিজিবিটহল শুরু

প্রকাশিত: ৬:৪৮ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২৩

বরিশাল প্রতিনিধি: আগামী ১২ জুন সোমবার বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) নির্বাচন। এদিন সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে শনিবার (১০ জনু) রাত ১২টায় প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হয়েছে। এখন শুধু ভোট গ্রহণের অপেক্ষা।
বরিশালের ৮৪ শতাংশ ও খুলনার ৫৬ শতাংশ কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
বরিশালে মোট ১২৬ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১০৬টিকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং খুলনায় ২৮৯ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১৬১টি কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। দুই সিটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিপুল সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকছে। খুলনা মহানগরীতে ১১ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। শনিবার সকাল থেকেই বিজিবি সদস্যরা ভোট কেন্দ্রসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে টহল শুরু করেছে।

ধর্মগ্রন্থে শপথ পড়িয়ে ভোট চাচ্ছে হাতপাখা
কুরআন শরীফে হাত রেখে ওয়াদা করিয়ে ভোট চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিটি নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সমর্থকদের বিরুদ্ধে। এই সংক্রান্ত একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। তবে এই পন্থায় ভোট চাওয়ার বিষয়টিকে অস্বীকার করেছেন ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী।

সর্বশেষ প্রচারণায় শোডাউনের নগরী বরিশাল

প্রচারণার শেষ দিন শনিবার দুপুর থেকেই শোডাউনের জন্য মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত এলাকার কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে। এই দিন নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোডসহ বিভিন্ন সড়কে এ শোডাউনের ফলে নগরীতে যানজটের সৃষ্টি হয়।
শনিবার বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের আবুল খায়ের আবদুল্লাহ নগরীর হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, নবগ্রাম রোড, পলাশপুর, বেলতলাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর চাঁদমারি এলাকায় প্রচার-প্রচারণা ও লিফলেট বিতরণ করেন জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। দুপুর ১২টায় নগরীর পোর্ট রোড কলাপট্টি এলাকায় গণসংযোগ করেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মো. ফয়জুল করিম।

স্বতন্ত্র প্রার্থী রুপনের ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা

বরিশাল সিটি করপোরেশনকে মানবিক ও সবুজ নগরীতে রূপান্তর, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সিটি করপোরেশন গড়া, জলাবদ্ধতা নিরসন, বাড়তি পৌর কর আরোপ না করার প্রত্যয় নিয়ে ৩০ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কামরুল আহসান রুপন।

ছয় জামায়াত নেতাকর্মী আটক

নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতের ছয় নেতাকর্মীকে আটক করা হয়েছে। শুক্রবার (৯ জুন) দিবাগত রাতে তাদের আটক করে পুলিশ। তারা হলেন নগরীর কাউনিয়া থানা জামায়াতের সেক্রেটারি আব্দুর রহমান, নগরীর ৪নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি সাইফুল ইসলাম, ৫নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি ফেরদৌস গাজী, একই ওয়ার্ডের সেক্রেটারি মো. ইব্রাহিম ও সক্রিয় কর্মী সাইফুল ইসলাম ও ইকবাল।

‘খুলনায় শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী নেই নৌকা মার্কার সামনে’

খুলনা সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন জানিয়েছেন, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।

এবারের কেসিসি নির্বাচনে পাঁচ জন মেয়র প্রার্থী, ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৩৬ কাউন্সিলর প্রার্থী ও সংরক্ষিত ১০টি ওয়ার্ডে ৩৯ জন নারী কাউন্সিলর প্রার্থীসহ মোট ১৮০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। পাঁচ জন মেয়র প্রার্থীর মধ্যে একমাত্র হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক। নগরবাসীর ধারণা, তার বিরুদ্ধে শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় সহজেই জয় পাবেন নৌকা মার্কার এই প্রার্থী। তারপরও নির্বাচনকে হালকাভাবে নেননি তিনি। শান্তিপূর্ণ ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু।

কেসিসি নির্বাচন নিয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বলছে, বিএনপিসহ বেশ কিছু রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ফলে রাজনৈতিক দলভিত্তিক এই নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হলেও সার্বিক বিবেচনায় গ্রহণযোগ্যতার সংকটে পড়বে।
মেয়র প্রার্থীদের শেষ মুহূর্তের গণসংযোগ

শনিবার কেসিসির পাঁচ মেয়র প্রার্থী শেষ মুহূর্তের প্রচার ও প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। ভোর থেকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক নগরীর খালিশপুরের ১নম্বর উর্দুভাষী ক্যাম্প থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এরপর তিনি ১২, ১৩ ও ১৫নম্বর ওয়ার্ড এবং নগরীর বিভিন্ন জায়গায় নৌকা প্রতীকে ভোট চেয়ে গণসংযোগ করেন। সন্ধ্যায় তিনি নগরীর ৩১নম্বর ওয়ার্ডের বান্দা বাজারে মতবিনিময় করেন।

এদিকে, জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী শফিকুল ইসলাম মধু সকাল ১০টা থেকে নগরীর হাজী মুহসিন রোড, টুটপাড়া কবরখানা মোড়, হাসপাতাল পাড়া, কেডি ঘোষ রোড ও বড় বাজারসহ আশপাশের এলাকায় প্রচার ও প্রচারণা চালান। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাওলানা আব্দুল আওয়াল নগরীর দৌলতপুর বাজার, স্টেশন রোড, বড় বাজার, ডাকবাংলো, কদমতলা, রূপসা ট্রাফিক মোড়, সাতরাস্তা, গল্লামারী, নিউমার্কেট, সোনাডাঙ্গা বাস টার্মিনাল ও খুলনা মেডিকেল কলেজ এলাকায় গণসংযোগ ও পথসভা করেন। এছাড়া জাকের পার্টির মেয়র প্রার্থী এস এম সাব্বির হোসেন ও স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী এস এম শফিকুর রহমান মুশফিক গণসংযোগ করেছেন।

অপরদিকে, শনিবার কেসিসির ২৯ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী ও ১০ সংরক্ষিত আসনের নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরাও নিজ নিজ এলাকায় গণসংযোগ করে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন।