সিরাজগঞ্জে ধানচাষে এডব্লিউডি প্রযুক্তি ব্যবহারে লাভবান হচ্ছেন কৃষক, সাশ্রয় হচ্ছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
জেলা প্রতিনিধি,সিরাজগঞ্জঃ
সিরাজগঞ্জে ধানচাষে এডব্লিউডি প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন ভূগর্বস্থ্য পানির অপচয় রোধ হচ্ছে অন্যদিকে সেচ মালিকদের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচও সাশ্রয় হচ্ছে। বাড়ছে ধানের ফলন। কমছে রোগ বালাই। এই প্রযুক্তি ইতোমধ্যে জেলাজুড়ে কৃষকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এক কেজি ধান উৎপাদন করতে জমিতে ৩৫শ থেকে ৪ হাজার লিটার পানির সেচ দিতে হয়। যার পুরোটাই গভীর-অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্বস্থ্যথেকে তোলা হয়। এ কারণে মৌসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পানির স্তর অনেকটা নিচে নেমে যায়। ফলে জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। এতদিন কৃষকরা সচেতনতার অভাবে নিজেদের ইচ্ছেমত ধানের জমিতে পর্যাপ্ত সেচ দিতেন। চাহিদার অতিরিক্ত পানি ধরে রাখতেন। এতে ধানের চারা বেশি গজাতে পারত না। মাটিতে শ্যাওলা পড়ত। ধানের গোঁড়ায় পঁচন ধরতো। পোঁকা মাঁকড়ের আক্রমণসহ ফলন বিপর্যয় দেখা দিতো। অপরদিকে ভূগর্বস্থ্য পানির অপচয়ে সংকটের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
কৃষি বিভাগ পানির এই অপচয় রোধে পরিবর্তিত শুকনা ভেজা (এডব্লিউডি) নামে প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে। সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলায় গত দুই বছর ধরে এ পদ্বতির ব্যাপক ব্যবহার শুরু হয়েছে। ফলে ইরি-বোরো মৌসুমে পানির অপচয় রোধ এ প্রযুক্তি ব্যাপকভাবে অবদান রাখছে।উল্লাপাড়া উপজেলার সলঙ্গা থানার রুয়াপাড়া, চড়িয়া উজির গ্রামের বিভিন্ন মাঠ ঘুরে দেখা যায়, এখানকার কৃষকরা তাদের জমিতে এডব্লিউডি প্রযুক্তি স্থাপন করেছেন।
রুয়াপাড়া গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন, আব্দুর রশিদ, আব্দুল আলিম, মালেক, ঠান্ডু মিয়া বলেন, ‘আমাদের জমিতে কৃষি অফিস থেকে দেওয়া এডব্লিউডি স্থাপন করেছি। কৃষি কর্মকতারা আমাদের পানি পরীক্ষাসহ এ প্রযুক্তির বিভিন্ন কৌশল শিখিয়ে দিয়েছেন। সেভাবে আমরা জমিতে সেচ দিচ্ছি। আবার প্রয়োজন মতো শুকাচ্ছি। এটা খুব সহজ। আমরা এতোদিন বুঝতাম না। গত বছর থেকে এ পদ্ধতি ব্যবহার করে আমরা ধানের ভাল ফলন পাচ্ছি। এ এলাকায় আমাদের দেখাদেখি এবার সব কৃষক এর ব্যবহার শুরু করেছেন।’
ৎরপব ২
কৃষকদের এডব্লিউডি প্রযুক্তি সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তা। ছবি: ইত্তেফাক
এ পদ্ধতিতে ১২ ইঞ্চি একটি প্লাষ্টিক পাইপের ৯ ইঞ্চি চারদিকে একাধিক ছিদ্র করা হয়। এরপর সেই পাইপ ধানের জমিতে নির্দষ্ট যে কোন স্থানে বসানো হচ্ছে। ৯ ইঞ্চি মাটির নিচে পুতে ৩ ইঞ্চি উপরে রাখা হচ্ছে। এরপর পাইপের ভিতরের মাটি বের করে ফাঁকা রাখা হয়। মাটিতে পোতা পাইপের ছিদ্র দিয়ে পানি প্রবেশ করে। নিচে সেই পানির উপস্থিতি দেখে প্রয়োজন মতো জমিতে সেচ দেওয়া হয়।
পানির উপস্থিতি বেশি থাকলে আবার নিয়ম করে সেই জমি শুকানো হচ্ছে। এই পদ্ধতি অবলম্বন করায় জমিতে ধানের চারা বেশি গজাচ্ছে। রোগ বালাইয়ের আক্রমণও কম হচ্ছে। সেচ মালিকদেরও বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খরচ অনেক কমে এসেছে।
চড়িয়া উজির এলাকার নলকূপ মালিক চাঁদ আলী দেওয়ান বলেন, ‘এ পদ্ধতি আসায় অনেক বেঁচে গেছি। কৃষকরা এডব্লিউডি দেখে এখন পরিমান মতো সেচ চায়। আগে না বুঝে জমিভর্তি করে সেচ দেওয়া লাগতো। আমার অনেক বেশি বিদ্যুৎ বিল আসতো। কিন্তু এখন তা লাগছে না। আমি নিজে যেমন সাশ্রয় করছি। কৃষকরাও বেশি ফলন পাচ্ছে। এটা আমাদের সবার জন্য উপকার হয়েছে।’
শুধু সেচ মালিক আর কৃষকদের উপকার হচ্ছে না। এ পদ্ধতি আসায় ইরি-বোরো মৌসুমে বিপুল পরিমান ভূগর্বস্থ মিঠা পানির অপচয় রোধ হচ্ছে। যা আগামীতে ফসল উৎপাদনে বড় অবদান রাখবে। পাশাপাশি বিদ্যুতের উপর চাম কমছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকতা কৃষিবিদ সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি জানান, ভূগর্বস্থ্য মিঠা পানির অযাচিত ব্যবহার রোধ করতে হবে। নইলে আগামীর কৃষি উৎপাদন চরম হুমকির মুখে পড়বে। এ জন্য এ উপজেলার কৃষকদের সচেতন করতে আমি নিজে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকতাদের নিয়ে উঠান বৈঠকসহ সচেতনতা বাড়াতে কাজ করছি। ইতোমধ্যে আমরা প্রায় প্রতিটি এলাকায় কম বেশি এ পদ্ধতি কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পেরেছি। এতে পানির অপচয় রোধসহ কৃষকরা ভাল ফলনে লাভবান হবেন।
সিরাজগঞ্জ কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাবলু কুমার সূত্রধর বলেন, ‘সারাদেশে ব্যাপকভাবে এ পদ্ধতি ছড়িয়ে দেওয়া গেলে কৃষকরা যেমন লাভবান হবে। তেমন ভূগর্বস্থ্য পানির অপচয় রোধ করা যাবে। পাশাপাশি অতিমাত্রায় কিটনাশকের ব্যবহার কমে আসবে। এতে মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত হবে।’