সিরিয়ায় ভয়াবহ সংঘাত রক্তপাতের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার অঙ্গীকার আহমেদ আল-শারার

প্রকাশিত: ১২:১৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ১০, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

গত কয়েকদিনে সিরিয়ার নত্নু সরকারের প্রতি অনুগত সামরিক বাহিনীর সাথে দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ক্ষমতাচ্যুত বাশার আল-আসাদ সমর্থকদের তীব্র সংঘর্ষ হয়েছে।

লাতাকিয়া প্রদেশে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত একটি বিমানঘাঁটির কাছে হওয়া ওই সংঘর্ষে এক হাজারেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এমন অবস্থায় সংঘাত ও রক্তপাতের জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করার অঙ্গীকার করেছেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা।

একইসঙ্গে আসাদের অনুগতদেরও খুঁজে বের করার কথা জানিয়েছেন তিনি। রোববার (৯ মার্চ) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

সংবাদমাধ্যমটি বলছে, সিরিয়ার নেতা আহমেদ আল-শারা কয়েকদিন ধরে চলা সংঘর্ষের পর বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতি করার সাথে জড়িত যে কাউকে জবাবদিহি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই সংঘাতে সিরিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী ধর্মীয় সংখ্যালঘু আলাউইত সম্প্রদায়ের শত শত বেসামরিক নাগরিককে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষক সংস্থা জানিয়েছে, গত শুক্রবার এবং শনিবার পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় আলাউইতদের লক্ষ্য করে চালানো “গণহত্যায়” ৮৩০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।

অবশ্য বিবিসি স্বাধীনভাবে মৃতের সংখ্যা যাচাই করতে পারেনি। আসাদ সরকারের পতনের পর থেকে সিরিয়ায় এই সহিংসতাকে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে মনে করা হচ্ছে।

জাতীয় টিভিতে সম্প্রচারিত এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা এক ভাষণে সিরিয়ার নেতা আহমেদ আল-শারা — যার নেতৃত্বে বিদ্রোহী যোদ্ধারা গত বছরের ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদকে উৎখাত করেছিল — আসাদের অনুগতদের খুঁজে বের করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) অনুসারে, এই লড়াইয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৩১ জন সদস্য এবং আসাদের সমর্থক ২৫০ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছেন, যার ফলে মোট মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৩১১ জনে দাঁড়িয়েছে।

সিরিয়ার অন্তর্র্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট আল-শারা রোববার দেওয়া ওই ভাষণে বলেন, “আজ আমরা এই সংকটময় মুহূর্তে নিজেদেরকে একটি নতুন বিপদের মুখোমুখি দেখতে পাচ্ছি। সাবেক সরকারের অবশিষ্টাংশ এবং তাদের বিদেশি সমর্থকদের দ্বারা নতুন সংঘাত উস্কে দেওয়ার এবং আমাদের দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে, যার লক্ষ্য দেশকে বিভক্ত করা এবং দেশের ঐক্য ও স্থিতিশীলতা ধ্বংস করা।”

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার পোস্ট করা ভিডিও ভাষণে শারা আরও বলেন, “আমরা দৃঢ়ভাবে এবং প্রশ্রয় ছাড়াই সেইসব অপরাধীদের জবাবদিহি করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, যারা বেসামরিক নাগরিকদের রক্তপাত বা আমাদের জনগণের ক্ষতি করার সাথে জড়িত, যারা রাষ্ট্রের ক্ষমতা কাঠামোকে লঙ্ঘন করেছে বা নিজস্ব লক্ষ্য অর্জনের জন্য কর্তৃত্বের অপব্যবহার করেছে।”

তিনি বলেন, “কেউ আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে না এবং যাদের হাত সিরিয়ার নাগরিকদের রক্তে রঞ্জিত, তারা শিগগিরই বিচারের মুখোমুখি হবে।”

এর আগে “বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে অধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত এবং এর জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করতে” একটি “স্বাধীন কমিটি” গঠন করা হয়েছে বলে তিনি টেলিগ্রামে ঘোষণা করেন। তিনি জাতীয় ঐক্যেরও আহ্বান জানান কিন্তু উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া এবং তারতুসে তার সমর্থকদের চালানো নৃশংসতার অভিযোগের বিষয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করেননি।

দামেস্কের একটি মসজিদ থেকে দেওয়া পৃথক ভাষণে আল-শারা বলেন, “আল্লাহর ইচ্ছায়, আমরা এই দেশে একসাথে থাকতে পারব।”

সিরিয়ার একটি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, রোববার লাতাকিয়া, জাবলা এবং বানিয়াস শহরের চারপাশে লড়াইয়ের গতি ধীর হয়ে গেছে। মূলত গত বৃহস্পতিবার সরকারি বাহিনীর ওপর অতর্কিত হামলার পর সিরিয়ার উপকূলীয় প্রদেশ লাতাকিয়া এবং তারতুসে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে।

সিরিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানার কাছে এই হামলাকে নিরাপত্তা কর্মীদের বিরুদ্ধে “বিশ্বাসঘাতক আক্রমণ” বলে বর্ণনা করেছেন।