সুদের টাকার জন্য শিকলে বেঁধে নির্যাতন, সেই কৃষক উদ্ধার

প্রকাশিত: ৮:৪৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০২৩

নাটোর প্রতিনিধি:

স্ত্রী সন্তান নিয়ে ছয় সদস্যের সংসার আসাদ আলীর (৫৫)। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করেন। যা আসে তাতে সংসার চলে না। মাঝে মাঝে দিনমজুরের কাজও করতে হয়। বছর দুয়েক আগে মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে আর্থিক অনটনে পরেন। সে সময় ৮০ হাজার টাকায় ১০ কাঠা জমি বন্ধক রেখেছিলেন আব্দুল আজিজের কাছে।
দুই বছরে ২০ হাজার টাকা লাভ দিয়েছেন। আসল টাকার মধ্যে ৩০ হাজার পরিশোধ করেছেন। এ বছর সময় মতো টাকা দিতে না পারায় সুদের টাকা আদায় করতে দিনমজুর আসাদ আলীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যান পাওনাদার আব্দুল আজিজের লোকজন। এরপর আজিজের বাড়িতে শনিবার সকাল থেকে রোববার ভোর পর্যন্ত শিকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয় আসাদ আলীকে।


৩৬ ঘণ্টা শিকল বন্দী থাকার পর রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে দিনমজুর আসাদ আলীকে উদ্ধার করে পুলিশ। সুদে কারবারি আব্দুল আজিজের বাড়ি গুরুদাসপুর উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের বাহাদুরপাড়া গ্রামে।
এ ঘটনায় সুদে কারবারি আব্দুল আজিজ ও তার বড় ভাই মাজেদুল এবং বাবা আফজাল প্রামাণিককে অভিযুক্ত করে গুরুদাসপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন আসাদ আলীর স্ত্রী শাহানারা বেগম। কৃষক আসাদ আলীর বাড়ি পার্শ্ববর্তী তাড়াশ উপজেলার ঈশ্বরপুর গ্রামে। শনিবার সকালে সেখান থেকেই আসাদ আলীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
গুরুদাসপুর থানার ওসি মো. মোনোয়ারুজ্জামান জানান, সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত খবর দেখে শিকলে বেঁধে নির্যাতনের বিষয়টি তিনি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠান। অভিযুক্ত আব্দুল আজিজের বাড়ি থেকে ওই কৃষককে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ সময় আব্দুল আজিজকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নির্যাতনের শিকার কৃষক আসাদ আলী জানান, বছর দুয়েক আগে জমি বন্ধক রেখে আব্দুল আজিজের কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা নিয়ে ছিলেন তিনি। এ বছর ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অভাব-অনটনে পরে সময় মতো টাকা ফেরত দিতে পারেননি তিনি।

শনিবার বিকালে সুদে কারবারি আব্দুল আজিজের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, দিনমজুর আসাদ আলী কোমরে শিকল পেঁচিয়ে তালা দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে বারান্দার এক খুঁটির সঙ্গে। টাকা দিতে না পারায় দিনভর তাকে শিকলে বেঁধে রাখা হয়। টাকা দিতে না পারলে হাত-পা ভেঙে ফেলার হুমকিও দেন আব্দুল আজিজ।
ভুক্তভোগী এই কৃষকের স্ত্রী শাহানারা বেগম জানান, শনিবার সকালে তার স্বামী ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে বাড়িতে এসে সুদেকারবারি আব্দুল আজিজ ও তার লোকজন চিৎকার চেঁচামেচি করতে থাকেন। একপর্যায়ে ঘুমন্ত স্বামীকে বিছানা থেকে জোরপূর্বক তুলে হাত পা বেঁধে ফেলেন। সে সময় টাকার দাবিও করেন। টাকা দিতে না পারায় স্বামীকে চোখের সামনেই টেনে হেঁচড়ে আব্দুল আজিজের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে শিকলে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে।

অভিযুক্ত আব্দুল আজিজ জানান, দুই বছর আগে ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখে তার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন আসাদ। বার বার তাগিদ দিলেও টাকা পরিশোধ করেননি। এ কারণে পাওয়া টাকা আদায় করতেই বাড়ি থেকে আসাদ আলীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ছিলেন তিনি। যাতে পালিয়ে যেতে না পারে এজন্য শিকলে বেঁধে রাখা হয়েছিল।

স্থানীয়রা জানান, আব্দুল আজিজ পেশাদার সুদে কারবারি। গ্রামের অনেক মানুষ জমি বন্ধক রেখে তার কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন।