কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
শতকোটি টাকার রিসোর্ট এখন খাঁ খাঁ! নেই আলোকসজ্জা, দামি গাড়ির বহর। নামে না হেলিকপ্টারও। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশিদের ‘প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট’-এ এখন দিনেও বিরাজ করে শিয়াল-কুকুর।
৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পতন হয় শেখ হাসিনার। তিনি বর্তমানে ভারতে আছেন। আওয়ামী লীগের অনেক নেতার মতো লাপাত্তা ডিবির হারুন। তিন মাস না যেতেই কিশোরগঞ্জের মিঠামইনে হাওরঘেঁষা তাঁর বিলাসবহুল প্রমোদশালা পরিণত হয়েছে আস্তাবলে।
গতকাল শুক্রবার সরেজমিন রিসোর্টের ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। কর্মচারী থেকে তত্ত্বাবধায়ক, কারও টিকিটি পাওয়া যায়নি। সুনসান ভূতুড়ে পরিবেশ। বিভিন্ন প্রাণীর চলাচলও বেড়েছে। অথচ স্থানীয়দের ভাষ্য, এক সময় রিসোর্ট গমগম করত মন্ত্রী-এমপি, পুলিশ প্রশাসন, অভিনয়শিল্পীসহ ধনাঢ্যদের পদভারে। লাইন থাকত ব্যক্তিগত গাড়ির। হুটহাট উড়ে আসত হেলিকপ্টার। সন্ধ্যা নামলেই আলোর রোশনাই চোখ ধাঁধিয়ে যেত। রাত যত গভীর হতো, জমে উঠত আলো-আঁধারির খেলা! সে সময় একটি কক্ষ বুকিং পেতেও কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষায় থাকতে হতো।
হারুনের নিজ গ্রাম মিঠামইনের ঘাগড়া ইউনিয়নের হোসেনপুর। এখানেই ৪০ একরের বেশি জমিতে শতকোটি টাকা ব্যয়ে গড়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট। ২০২১ সালের ৩ সেপ্টেম্বর চালু হয় এটি। রয়েছে হেলিপ্যাড ও অত্যাধুনিক সুইমিংপুল। লাখ লাখ টাকার আসবাবে সজ্জিত রিসোর্টের প্রিমিয়াম স্যুটের প্রতিদিনের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সর্বনিম্ন ডিলাক্স কক্ষের জন্যও গুনতে হয় ১০ হাজার। ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দেখভাল করতেন হারুনের ছোট ভাই ডা. শাহরিয়ার।
হারুন দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান। ২০তম বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটায় পুলিশ ক্যাডারে চাকরি পান। স্থানীয়রা জানান, হারুনের বাবা হাসিদ ভূঁইয়া কখনও মুক্তিযুদ্ধ করেননি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর রাজনৈতিক তদবিরে তাঁকে মুক্তিযোদ্ধা তালিকাভুক্ত করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, শেখ হাসিনার আস্থাভাজন হারুন অনিয়ম-দুর্নীতি, নির্যাতন-নিপীড়নের মাধ্যমে রাতারাতি অঢেল সম্পদের মালিক হয়ে যান। হেলিকপ্টার ছাড়া তিনি বাড়িতেও যেতেন না। শতকোটি টাকা পাচারের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। গত মাসে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) হারুনের গ্রামের বাড়িতে নোটিশ পাঠালে স্বজনরা গা-ঢাকা দেন।
এদিকে রিসোর্টের জন্য ভয় দেখিয়ে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে হারুনের বিরুদ্ধে। গ্রামের বাসিন্দা দিলীপ চৌধুরী জানান, তাঁর কোটি টাকা দামের ১ একর ১০ শতাংশ পৈতৃক জমি রিসোর্ট করার সময় দখলে নেন হারুন। একটি টাকাও দেননি। গ্রামের বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, রিসোর্ট করার সময় আমার ৫ একর জমি জোর করে নেন হারুন। বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি শতাংশ এক লাখ টাকার ওপরে। তিনি একটি টাকাও দেননি।
বর্তমানে রিসোর্ট দেখভালের দায়িত্বে থাকা আবুল হাসেম বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে সব বন্ধ। ফটকে ঝুলছে তালা। দৈনিক মজুরিতে কাজ করি। কেউ এলে খুলে দিই। এখানে দিনরাত শিয়াল-কুকর ঘোরাফেরা করে। ব্যবস্থাপক মো. পিন্টু বলেন, গত তিন মাসে কোনো বুকিং নেই। রেস্টুরেন্টও বন্ধ। সব স্টাফ চলে গেছেন। জিনিসপত্র নষ্ট হচ্ছে। রাতে এখানে ঘুমাই। শিয়ালের ডাকে ভয় লাগে। ডাক থামলে গা ছম ছম করে।
মিঠামইনের ইউএনও খান মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসও হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট নিয়ে কথা বলব। কোনো নির্দেশনা পেলে বাস্তবায়ন করা হবে।