খুলনা প্রতিনিধি:
সুন্দরবনে দীর্ঘদিন পর আবারও কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এসব দস্যুবাহিনীর অত্যাচারে জেলে-বাওয়ালীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন। এসব বাহিনী মাঝে মধ্যে ফ্রি স্টাইলে হামলা চালিয়ে জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে চলেছে। এমনকি বাহিনীর টোকেন ছাড়া জেলেদের মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী জেলে-বাওয়ালী সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রশাসনের একের পর এক অভিযানে প্রায় সব বনদস্যু বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। ফলে বেশ কয়েক বছর সুন্দরবন দস্যুমুক্ত থাকলেও সম্প্রতি আবারও পৃথক ৩টি গজিয়ে ওঠা বনদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বাহিনী ৩টি হলো- দাকোপের কালাবগির আছাবুর, কয়রার মাস্টার ও কালু বাহিনী। প্রত্যেক বাহিনীতে ৭ থেকে ৮ জন করে দস্যু সদস্য রয়েছে বলে জানা গেছে।
সূত্রটি আরও জানায়, সুন্দরবনের পশ্চিম বনবিভাগের খুলনা রেঞ্জ এলাকায় এসব বাহিনীর সদস্যরা অধিকাংশ সময়ে বিচরণ করে থাকে। তবে বাহিনী ৩টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেপরোয়া হয়েছে আছাবুর বাহিনী। আর এ বনদস্যু বাহিনী প্রায়ই জেলে নৌকায় অতর্কিত হামলা চালিয়ে তাদের জাল, নৌকা, ডিজেল, চাল, ডাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় মালামাল লুটে নিয়ে মুক্তিপণের দাবিতে অপহরণ করছে। আর এ বাহিনীকে মুক্তিপণ না দিয়ে কোন জেলে বাড়ি ফিরতে পারছে না বলে তাদের পরিবারের অভিযোগ। এমনকি ওই দস্যু বাহিনীর টোকেন ছাড়া বনের ওই এলাকায় জেলেদের মৎস্য ও কাঁকড়া আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। আর টোকেন বিহীন জেলেদের অপহরণ করে জিম্মি রেখে আছাবুর বাহিনী মুক্তিপণ আদায় করছে বলে জানা গেছে। ইতিমধ্যে কালাবগি এলাকার বেশ কয়েকজন অপহৃত জেলে আছাবুর বাহিনীর নির্ধারিত ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরেছে বলে জানা গেছে।
আরও জানা যায়, এ বাহিনীকে খাদ্য খাবারের বাজারসহ প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করছে কালাবগি এলাকার ৪ থেকে ৫ জন কথিত জেলে ব্যবসায়ী। এসব বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে উপকূলীয় অঞ্চলের সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল হাজারো জেলে ও তাদের পরিবারগুলো। অতি আপনজন হারানোর ভয়ে ভুক্তভোগী এসব পরিবারের সদস্যরা মুখ খুলে কাউকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না বলে তাদের অভিমত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জেলে জানান, বনদস্যু আছাবুর বাহিনীর টোকেন ছাড়া মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। মাছ ও কাঁকড়া আহরণ করা জেলেদের আটনের নৌকা প্রতি ৩০ হাজার আর দোনদড়ি নৌকা প্রতি ২০ হাজার ৪০০ টাকার টোকেন নিতে হচ্ছে। এ ছাড়া তাদের সঙ্গে দেখা হলে ডিউটির ২ হাজার টাকা দিতে হয়। টোকেন এবং ডিউটির টাকা না দিলে এ বাহিনী জেলেদের অপহরণ করে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ আদায় করে। গত সোমবারও কালাবগি এলাকার অহিদুল শেখ নামে এক জেলে অনেক মিনতি করে ১০ হাজার টাকা আছাবুর বাহিনীকে মুক্তিপণ দিয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। এ ঘটনার পূর্বে অহিদুলকে ৫০ হাজার টাকা মুক্তিপণের দাবিতে সুন্দরবনের শরবত খালীর খাল এলাকা থেকে অপহরণের পর বেদম মারপিট রক্তাক্ত জখম করে শিকল দিয়ে তাদের ট্রলারে বেঁধে রাখে ওই বাহিনী। আবার অনেক সময় দস্যুদের টোকেন থাকার পরও অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করছে। এ ছাড়া মাস্টার ও কালু বাহিনীর সঙ্গে দেখা হলে ১০০০ টাকা করে ডিউটি দিতে হয়। ভুক্তভোগী জেলে ও তাদের পরিবারের সদস্যরা ভয়ে মুখ খুলে কাউকে কিছু বলতে সাহস পাচ্ছেন না। আর এসব বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন বলে জানান তারা।
এ বিষয়ে সুতারখালী ইউপি চেয়ারম্যান মাসুম আলী ফকির এ প্রতিবেদকে বলেন, সম্প্রতি সুন্দরবনে কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আছাবুর বাহিনী। এ খবর জানার পর আমি প্রশাসনকে বিষয়টা জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে আমাকে আশ্বস্ত করেছেন।
এ ব্যাপারে পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ.জেড.এম হাসানুর রহমান বলেন, বনদস্যুদের বিষয়ে আমি শুনেছি। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।