মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে সুন্দরবনে সব ধরণের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে মৎস্য অধিদপ্তর এবং বন বিভাগ। শনিবার (২০ মে) থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত জেলেরা সুন্দরবনে মাছ শিকার করতে পারবেনা। এছাড়া ১লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচলও সম্পূর্ণ বন্ধ থাকবে।
এদিকে, বছরের বিভিন্ন সময় নিষেধাজ্ঞার কারণে জেলেরা সাগর এবং সুন্দরবনে মাছ ধরতে পারেন না। তার মধ্যে আবার দুর্যোগ তো রয়েছেই। ফলে উপকূলের জেলেদের বছরের বেশিরভাগ সময় কাটে খেয়ে, না খেয়েই। তাই জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানসহ নিষেধাজ্ঞা চলাকালে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার মতো সরকারি সাহায্য পাওয়ার আবেদন জানিয়েছেন উপকূলের জেলেরা। বেশিরভাগ জেলে কোনো সাহায্য সহযোগিতা না পাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জীবিকার তাগিদে সাগরে ঝুঁকি নিয়ে নেমে পড়তে হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উপকূলের জেলেদের সরকারি সাহায্য-সহযোগিতার ব্যবস্থা করা গেলে প্রজনন মৌসুম যেমন নির্বিঘ্ন হবে, তেমনি মাছ ও বন্যপ্রাণীর সংখ্যাও বাড়বে।
মোংলার চিলা ও কলাতলা এলাকার কয়েকজন জেলে বলেন, বছরের বিভিন্ন সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। যখন একটু মাছ ধরার সময় পাই তখন আবার থাকে ঝড়-জ্বলোচ্ছাস। বেশিরভাগ সময়ই নৌকা-জাল নিয়ে ঘাটে বসে থাকতে হয়। মহাজনের কাছ থেকে দাদন/ঋণ নিয়ে নৌকা ও জাল তৈরি করেছি। মহাজনকে কম-বেশি দিয়ে কোনোরকম সংসার চলতো। এখন তিন মাসেরও বেশি সময়ের এ নিষেধাজ্ঞায় আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। আমাদের তো জাল ধরা ছাড়া অন্য কোনো আয়ের পথ নেই। সরকার যদি আমাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ও সাহায্য করে তাহলে কোনোরকমে বেঁচে থাকব।
উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম বলেন, নিষেধাজ্ঞার এ সময়ে নিবন্ধিত ২৬৪০ জেলের প্রত্যেককে দুই দফায় ৮৬ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। তবে এখানে নিবন্ধিত ছাড়াও আরও ২৫০০ জেলে রয়েছেন। এছাড়া সুন্দরবন নির্ভরশীল জেলে রয়েছেন আরও ৫ হাজার। ফলে এসব জেলেকে নিষেধাজ্ঞাকালে মাছ শিকার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, ২০ মে থেকে সাগরের পাশাপাশি সুন্দরবনেও মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এছাড়া ১লা জুন থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত মাছ ও বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হওয়াতে এই সময়েও সুন্দরবনের নদী-খালে কোনো প্রকার মাছ শিকার করতে পারবেনা জেলেরা। এছাড়া বন্ধ থাকবে পর্যটনবাহী নৌযান চলাচলও। কারণ নৌযান চলাচলে মাছের প্রজনন এলাকা ক্ষতিগ্রস্থ ও নৌযানের বিকট শব্দে বন্যপ্রাণীর বিচরণসহ প্রজনন কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়ে থাকে। তাই সুন্দরবনে জেলে ও পর্যটকদের প্রবেশ বন্ধ থাকে তিন মাস ধরেই।