সেন্ট্রাল-ইবনে সিনার পর এবার ল্যাব এইড হাসপাতালে প্রাণ গেল কলেজ ছাত্রের

প্রকাশিত: ৫:০৯ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক,

রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় নবজাতকসহ প্রসূতী নারী ও ইবনে সিনায় আরেক নারীর মৃত্যুর রেশ না কাটতেই এবার  ল্যাবএইড হাসপাতালে প্রাণ গেল এক কলেজ ছাত্রের। পেটের ব্যথায় ভর্তি হওয়ার পর দুই দফায় ভুল অপারেশন করানোর পর তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন নিহতের পরিবার। নিহতের নাম- তাহসিন হোসেন (১৭)। প্রায় তিন মাস চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় শুক্রবার (২৩ জুন) সকালে তার মৃত্যু হয়। নিহত তাহসিন হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। শুক্রবার দুপুরে ল্যাবএইড হাসপাতালের সামনে গিয়ে দেখা যায়, মেধাবী কলেজছাত্র তাহসিনের মৃত্যুর খবরে হাসপাতালের ভেতর-বাহিরে পরিবারের সদস্যরা আহাজারি করছেন।


নিহতের পরিবারের অভিযোগ করে বলেন, পেটের ব্যথার অপারেশন করার পরে তিন মাসে প্রায় ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অপারেশন করা হলেও সুস্থ হওয়ার বদলে দিন দিন স্বাস্থ্যের অবনতি হয়ে অবশেষে আজ মৃত্যু হয় তাহসিনের।

নিহত শিক্ষার্থীর বাবা মো. মনির হোসেন বলেন, আমার ছেলে মার্চ মাসে পেটের ব্যথায় ভুগছিল। পরে ঢাকা মেডিকেলে গেলে চিকিৎসকরা অপারেশনের পরামর্শ দেন। পরে মার্চের ২৭ তারিখ হাসপাতালে ভর্তি হয়। ২৮ তারিখ সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক ডাক্তার সাইফুল্লাহ প্রথম অপারেশন করেন। কিন্তু অপারেশনের পরেও আমার ছেলের রক্ত বের হচ্ছিলো। কিন্তু সেটা বলার পরেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। পরে ৬ এপ্রিল সকালে একই চিকিৎসক আবারও অপারেশন করেন। তবুও রক্ত ঝরা বন্ধ হয়নি। এমনকি অপারেশন করে পেট থেকে নাড়ির একটা অংশ কেটে ফেলে দেয়। এভাবেই গত তিন মাস ধরে চিকিৎসা চলছিলো।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার অভিযোগ করে মনির হোসেন আরও বলেন, গত তিন মাসে আমার ছেলে শরীরে ১৫০ ব্যাগের বেশি রক্ত দেওয়া হয়েছে, ৯০ ব্যাগের বেশি প্লাজমা দেওয়া হয়েছে। এই সময়ে তার শারীরিক কোনো উন্নতি হয়নি। বরং ধীরে ধীরে খারাপ হয়েছে। অথচ কোনো রকম জবাবদিহি ছাড়া এখন পর্যন্ত ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে।

নিহত শিক্ষার্থীর মা স্কুল শিক্ষক তাজভীন ভূইয়া বলেন, আমার ছেলেটা মেধাবী ছিলো। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন ছিলো। ওরা আমার ছেলের স্বপ্ন শেষ করে দিলো। এটা একটি হত্যা, আমি এর বিচার চাই। ভিটা-বাড়ি বিক্রি করে হাসপাতালে টাকা দিয়েছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা আমার ছেলের লাশ ধরিয়ে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।

এ দিকে ভুল চিকিৎসা ও অবহেলার অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে ল্যাব এইড হাসপাতালের মিডিয়া কর্মকর্তা মেহের এ খোদা দীপ বলেন, আপনার ভালো একটা ইস্যু  পেয়েছেন। এ বিষয় আমি কিছু জানি না। জেনে জানাতে হবে। এরপর একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।

প্রসঙ্গত, গত ৯ জুন দিবাগত মধ্যরাতে ধানমন্ডির সেন্ট্রাল হাসপাতালে  প্রসূতি নারী মাহবুবা রহমান আঁখির জরুরি সিজার করে নবজাতক পুত্র সন্তান বের করে আনেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তাররা। নবজাতকের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাৎক্ষণিক এনআইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। একইসময় সিজারিয়ান অপারেশনের কারণে  মৃত্যুঝুঁকিতে পড়েন প্রসূতি ওই নারী। পরবর্তীতে গত ১১ জুন নবজতককে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত ডাক্তার।  এরপরই প্রসূতি নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে পাশের ল্যাব এইড হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় গত ১৮ জুন দুপুরের দিকে তিনিও মারা যান।

এদিকে এই ঘটনার রেশ না কাঁটতেই রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা হাসপাতালে গত ২১ জন দুপুরে প্রাণ হারান পূরবী ঘোষ (৫৮) নামের এক নারী। গত ১০ জন নির্ভাসা বাথরুমে পড়ে আঘাত পান ওই নারী। এরপর পরিবারের সদস্যরা তাকে কল্যাণপুর শাখার ইবনেসিনা হাসপাতালে ভর্তি করে। ১৩ জন কর্তব্যরত ডাক্তার তার পায়ে অপারেশন করেন। সময়ের দিন যত বাড়তে থাকে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। সেখানে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১ জুন দুপুরের দিকে তার মৃত্যু ঘটে। ধানমন্ডির গ্রিন রোডের সেন্ট্রাল হাসপাতাল ও কল্যানপুরের সর্বশেষ ইবনে সিনা হাসপাতালের পর সেই ধানমন্ডির গ্রীন রোডে এবার ল্যাবএইড হাসপাতালে পেটের ব্যথায় অপারেশন করিয়ে প্রাণ হারালেন কলেজ ছাত্র তাহসিন হোসেন।