নিজস্ব প্রতিবেদক:
সোনারগাঁ বাংলাদেশের প্রাচীন রাজধানী এবং ঐতিহ্যবাহী শিল্পের অন্যতম কেন্দ্রস্থল। এর ধনাঢ্য ইতিহাস, প্রাচীন স্থাপত্য এবং সমৃদ্ধ সংস্কৃতির জন্য সোনারগাঁ বহুদিন ধরেই পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। তবে শুধু ঐতিহাসিক স্থান ও স্থাপত্যই নয়, এখানে বিদ্যমান কুটিরশিল্প, বস্ত্রশিল্প এবং ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প সোনারগাঁর পর্যটন শিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে সোনারগাঁর সম্ভাবনা কাজে লাগানোর লক্ষ্যে কয়েক বছর ধরে সরকার এবং স্থানীয় উদ্যোক্তারা একাধিক উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন। কিন্তু এ সম্ভাবনা পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন করতে গেলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন, পর্যাপ্ত বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সঠিক প্রচার চালানো জরুরি।
সোনারগাঁর পর্যটন শিল্পের বিকাশে ইতোমধ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৮ থেকে ’২২ সালের মধ্যে সোনারগাঁয় পর্যটকের সংখ্যা ২৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৮.৫ লাখ দেশি ও বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন। ২০১৯ সালে সোনারগাঁয় পর্যটন খাত থেকে আয় হয়েছিল প্রায় ৫৫০ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সালে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০০ কোটি টাকায়।
সরকার সম্প্রতি ‘মুগ্ধ সোনারগাঁ প্রকল্প’ নামে একটি বৃহত্তর উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যার আওতায় রয়েছে পানাম নগর পুনর্নির্মাণ, পর্যটকদের জন্য পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং আধুনিক পর্যটন সুবিধা নির্মাণ। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১,০০০ কোটি টাকা, যা ২০২৫ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে সোনারগাঁর পর্যটন শিল্পে বছরে আরও ১০ লাখ পর্যটককে আকৃষ্ট করা সম্ভব হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও পর্যটন শিল্পে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, সোনারগাঁর পর্যটন খাতকে এক বিশাল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রথমত, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অভাব এ শিল্পের উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। এখানকার বেশির
ভাগ ঐতিহাসিক স্থানের সঙ্গে ভালো
মানের রাস্তা ও পরিবহন সুবিধা এখনও পর্যাপ্ত নয়। এ ছাড়া পানাম নগরের প্রাচীন স্থাপত্য এবং ঐতিহ্যবাহী নিদর্শনগুলো অনেকাংশে সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণের অভাবে ধ্বংসের পথে।
২০২২ সালের বাংলাদেশ প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, পানাম নগরের মোট ৫২টি প্রাচীন ভবনের মধ্যে ২৫টির অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।
সোনারগাঁর পর্যটন শিল্পকে আরও গতিশীল করতে হলে প্রথমেই স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে পর্যটন খাতের সঙ্গে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের এগিয়ে আসতে হবে এবং পর্যটন খাতে আরও বড়মাপের বিনিয়োগ করতে হবে।