ফাইল ছবি
সৌদি আরব থেকে আজ রোববার ও গতকাল শনিবার দেশে ফিরেছেন ১৫ নারীসহ ১৭৬ বাংলাদেশি নাগরিক। এ নিয়ে গত চার দিনে ফিরলেন মোট ৩১৭ জন।
ইউএনবির খবরে বলা হয়, তাঁদের মধ্যে শনিবার রাত ১১টা ২০ মিনিটে ও রাত দেড়টায় সৌদি এয়ারলাইনসের দুটি ফ্লাইটে দেশে ফেরত আসেন ১০৬ জন। আজ ফেরেন আরও ৭০ জন। এ ছাড়া আজ রাতে আরও শতাধিক বাংলাদেশির দেশে ফেরত আসার কথা রয়েছে।
নিঃস্ব হয়ে দেশে ফেরা প্রবাসীদের সহায়তা দিতে কাজ করছে ব্র্যাক অভিবাসন কর্মসূচি।
ইউএনবি জানায়, গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে নিয়োগকর্তা কর্তৃক নির্যাতনের শিকার হয়ে ফিরেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সেলিনা আক্তার ও শামিমা বেগম। তাঁরা প্রথমে নিয়োগকর্তার বাড়ি থেকে পালিয়ে আশ্রয় নেন জেদ্দায় অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সেফহোমে। দুই দিনে দেশে ফেরা ১৫ নারীর ক্ষেত্রে ঘটনা প্রায় একই।
প্রথম আলোর খবরে বলা হয়, বাংলাদেশ থেকে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে বিদেশে যাওয়া নারীদের প্রায় ৮০ শতাংশের গন্তব্য সৌদি আরব। নির্যাতনের অভিযোগে ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন গৃহকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিলে ২০১৫ সালে বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে সৌদি আরব। এরপর থেকে গত জুলাই পর্যন্ত প্রায় তিন লাখ নারী কর্মী গেছেন দেশটিতে।
সৌদি আরবে নানাভাবে অবৈধ হয়ে যাওয়া পুরুষ কর্মীদের বিরুদ্ধেও অভিযান চলছে। গতকাল ফেরা শহিদ মিয়া (৪০) ইউএনবিকে জানান, আড়াই বছর আগে সাড়ে চার লাখ টাকা দিয়ে টাইলস ফিটিংয়ের কাজ নিয়ে গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। কর্মস্থল থেকে ফেরার সময় পথ থেকে ধরে নিয়ে কাজের পোশাকেই তাঁকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়।
চার মাস আগে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার হানিফ গিয়েছিলেন সৌদি আরবে। পরে পাসপোর্টে তিন মাসের এন্ট্রি ভিসার মেয়াদ শেষ হলে কর্মস্থল থেকে ফেরার পথে তাঁকে আটক করে পুলিশ। প্রতিষ্ঠানের মালিক দায়িত্ব না নেওয়ায় দেশে ফেরত পাঠানো হয় তাঁকে। একই সঙ্গে ফিরেছেন টাঙ্গাইলের হাবিবুল্লাহ, কুমিল্লার প্রোফাইল সিলেটের শুভ দেবনাথসহ অনেকে।
দেশে ফেরা কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করেন, ইকামা তৈরির জন্য রফিককে (নিয়োগকর্তা) টাকা প্রদান করা হলেও তাঁরা করে দেননি। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তারের পর কপিলের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তারা কর্মীর দায় দায়িত্ব না নিয়ে ভিসা বাতিলের কথা বলে দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়ার কথা বলছে প্রশাসনকে।
ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির প্রধান শরিফুল হাসান ইউএনবিকে জানান, ২০১৯ সালে সৌদি আরব থেকে ২৪ হাজার ২৮১ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। আর নতুন বছরের শুরুর চার দিনে ফিরলেন ৩১৭ জন। তাঁরা ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন।
পররাষ্ট্র এবং প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরবে নারী ও পুরুষ কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে দুই দেশেরই বেশ কিছু সমস্যা আছে। নারী কর্মীরা সেখানে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। আবার পরিবর্তিত পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারছেন না। এসব নারী কর্মী শেষ পর্যন্ত কোথায়, কীভাবে আছেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের পক্ষে সেটার দেখভাল করাও সম্ভব হচ্ছে না।
পুরুষ কর্মীদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, ইকামা (কাজের অনুমতিপত্র) নিয়ে গেলেও একটি বড় অংশ ফ্রি ভিসায় গিয়ে বিপদে পড়ছে। তাঁরা মূলত ইকামার মেয়াদ শেষ হওয়া আর কফিল (নিয়োগকর্তা) পরিবর্তনের কারণে আটক হয়ে ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে।