স্বামীর মুক্তির জন্য সাড়ে ৩ বছর দ্বারে দ্বারে রাবেয়া

প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২২, ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কয়েক দিনের ছুটিতে দেশে এসেছিলেন বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের প্রবাসী আবুল বাসার। স্ত্রী-সন্তান ও স্বজনদের সঙ্গে আনন্দময় সময় কাটিয়ে ২০২১ সালের ১১ মার্চ তিনি সৌদি আরবে ফিরে যেতে বাড়ি থেকে রওনা দেন। রাতে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোর্ডিংয়ের জন্য সৌদি এয়ারলাইন্সের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়ান তিনি। এ সময় বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত একজন এসে ছোট একটি প্যাকেট ধরিয়ে বলেন, ‘আমার ভাই সৌদিতে থাকে। খাবারের প্যাকেটটি নেন। জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর সে এটি নিয়ে নেবে।’ প্যাকেট নিতে না চাইলে ওই ব্যক্তি জোর করে তাঁর ব্যাগে ঢুকিয়ে দেন। আর এতেই তছনছ আবুল বাসারের জীবন।

তাঁর স্ত্রী মোছা. রাবেয়া বলেন, ‘বিমানবন্দরের পরিচ্ছন্নতার কাজে নিয়োজিত এ কে ট্রেডার্সের সুপারভাইজার (চাকরিচ্যুত) নূর মোহাম্মদ আমার স্বামীকে একটি প্যাকেট দিয়ে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি বলেছেন– প্যাকেটে কিছু আচার ও খাবার আছে, সৌদিতে অবস্থানরত তাঁর ভাই মো. সাইদ সেটি বিমানবন্দর থেকে নেবে। প্যাকেট নিতে অস্বীকৃতি জানান আমার স্বামী। এক পর্যায়ে নূর নিজেকে বিমানের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ভয়ভীতি দেখান এবং প্যাকেট না নিলে তাঁকে ফ্লাইটে উঠতে দেবেন না বলে হুমকি দেন। এক পর্যায়ে নূর নিজেই জোর করে আমার স্বামীর ব্যাগে প্যাকেটটি ঢুকিয়ে দেন। এ সময় ভয়ভীতি দেখানো এবং সময় না থাকায় কথা না বাড়িয়ে তিনি বিমানে উঠে পড়েন। সৌদি আরবের জেদ্দা বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পর নিরাপত্তাকর্মীরা আমার স্বামীর ব্যাগ তল্লাশি করলে সেই প্যাকেটে ইয়াবা পান।’
রাবেয়া জানান, দেশ ছাড়ার পর থেকে আবুল বাসারের খোঁজ পাচ্ছিল না পরিবার। এর ২০ দিন পর সৌদি আরবের জেল থেকে ফোন করে ঘটনার বিস্তারিত জানান বাসার। ২০২১ সালের ১০ এপ্রিল হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে গিয়ে এয়ারপোর্ট আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে বিষয়টি জানান রাবেয়া। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে বিমানবন্দরের সিসিটিভি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করে ঘটনার সত্যতা পায় আর্মড পুলিশ। এর পর নূরকে গ্রেপ্তার করা হয়। কিন্তু এর চার দিন পরই তিনি জামিনে বেরিয়ে যান।
রাবেয়া বলেন, ‘আমার স্বামী অপরাধ না করেও জেলে আছেন সাড়ে তিন বছর। সৌদিতে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে আইনি সহায়তা না পাওয়ায় একপক্ষীয়ভাবে তাঁকে ২০ বছরের সাজা দিয়েছেন আদালত। তাঁর মুক্তির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরেছি। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। সাত বছরের কন্যাকে নিয়ে আমি দুর্বিষহ জীবন কাটাচ্ছি। আমার বিশ্বাস, এই সরকারই সৌদি আরবের কারাগার থেকে আমার নিরপরাধ স্বামীকে মুক্তির ব্যবস্থা করবে।’ শাহজালাল বিমানবন্দরের প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের (বিএমইটি) সহকারী পরিচালক শাহেদ হোসেন সমকালকে বলেন, বিদেশে কোনো শ্রমিক আটক থাকলে তাঁকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, রাবেয়ার দরখাস্ত পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।