স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপ: ঢাকায় ‘বিপদসীমা’র ওপরে এডিস মশার ঘনত্ব
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
নিজস্ব প্রতিবেদক:
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত পদ্ধতি ব্রুটো ইনডেক্স। এই মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ২০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জরিপে ঢাকা মহানগরীতে এডিসের লার্ভার ঘনত্ব পাওয়া গেছে তারচেয়েও বেশি। দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এডিসের লার্ভার গড় ঘনত্ব ২৪ দশমিক ৮৯ শতাংশ। বহুতল ভবনে এই হার আরও বেশি। উত্তর সিটির বহুতল ভবনে এই হার ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ আর দক্ষিণে ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাক-মৌসুম জরিপে এমন উদ্বেগজনক চিত্র উঠে এসেছে। অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা গত ১৮ থেকে ২৫ জুন রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় এই জরিপ পরিচালনা করেছে।
জরিপে দুই সিটির বহুতল ভবনগুলোতে সবচেয়ে বেশি এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) বহুতল ভবনগুলোয় লার্ভার ঘনত্ব ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) বহুতল ভবনগুলোয় লার্ভার ঘনত্ব ৪১ দশমিক ১৫ শতাংশ। এ ছাড়া বাসাবাড়ি, নির্মাণাধীন স্থাপনা, খালি জমিতেও উদ্বেগজনক হারে লার্ভা পাওয়া গেছে। পাশাপাশি প্লাস্টিকের ড্রাম, মগ, টায়ার ও সিমেন্টের পানির ট্যাংকেও লার্ভার উপস্থিতি মিলেছে।
জরিপে ডিএনসিসি এলাকার ২১ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িতে এডিস মশার লার্ভা ও ডিএসসিসি এলাকায় ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়িতে এমন লার্ভা পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ডিএসসিসির মোট ১৫৪৯টি বাড়ি পরীক্ষা করা হয়। এসব বাড়িতে জরিপকারীরা মোট ১ হাজার ৭৪৪টি ভেজা পাত্র খুঁজে পান। এরমধ্যে ১৫ দশমিক ০৭ শতাংশ বাড়িতেই মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। অন্যদিকে ডিএনসিসির ৯৬২টি বাড়ি পরীক্ষা করে মোট ৯৯৪টি ভেজা পাত্র পাওয়া যায়। এরমধ্যে প্রায় ২৭ দশমিক ৮৭ শতাংশ ভেজা পাত্রেই মশার লার্ভা ছিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ বছর মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। এর আগে কখনোই ডেঙ্গুর মৌসুম শুরু হওয়ার আগে এমন ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়েনি বাংলাদেশ। এ অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাপক হারে না বাড়ালে এ বছর ডেঙ্গু স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, এই জরিপে লার্ভার যে ঘনত্ব উঠে এসেছে তাতে আগামী কয়েক দিনে ডেঙ্গুর সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আবার গত কয়েক দিনের বৃষ্টির আগে করা এই জরিপের হিসাব আর বৃষ্টির পরের হিসাব এক থাকবে না। গত কয়েক দিনে থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ায় অসংখ্য পরিত্যক্ত পাত্রে পানি জমা হয়েছে, যার মধ্যে এডিস মশা ডিম পাড়বে। এই ডিমগুলো ফুটে লার্ভা, পিউপা ও উড়ন্ত মশায় পরিণত হবে। এই পরিস্থিতিতে জরুরি ভিত্তিতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম ব্যাপক হারে না বাড়ালে এ বছর ডেঙ্গু স্মরণকালের ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে দেখা দিবে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর বলছে, এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করার মূল কাজটি করে সিটি করপোরেশন। এ কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে হলে এখন সিটি করপোরেশনগুলোকেই উদ্যোগী হতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, এখনও ডেঙ্গুর প্রকৃত মৌসুম শুরু না হলেও আমাদের জরিপে যে চিত্র উঠে এসেছে তা ভয়াবহ। আমরা খুব কম সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট প্রকাশ করবো। এরপর ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের বাকি কাজ সিটি করপোরেশন করবে।
এদিকে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণের জন্য আগে থেকেই রুটিন কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। তবে সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়ার পর তাদের কার্যক্রম আরও জোরালো করা হয়েছে বলে দাবি করেছে সংস্থা দুটি।
ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির বলেন, স্বাস্থ্য অধিদফতরের জরিপে চিহ্নিত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আমরা একাধিকবার ক্রাশ প্রোগ্রাম করেছি। আগামী ৫ ও ৬ জুলাই আবারও ক্রাশ প্রোগ্রাম নেওয়া হচ্ছে। আমরা তিন দিন ডেঙ্গু নিধনে চিরুনি অভিযান পরিচালনা করবো। এ ছাড়া জুন থেকে প্রতিনিয়ত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম শফিকুর রহমান বলেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ইতোমধ্যে আমরা আমাদের মশক নিধনে নিয়োজিত সব কর্মীর ঈদের ছুটি বাতিল করেছি। হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের বাড়ির ঠিকানা সংগ্রহ করে অভিযান চালানো হচ্ছে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্কুলে স্কুলে ডেঙ্গু নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আশা করছি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে।