ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাননি বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকন। আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসকে। মনোনয়ন থেকে ছিটকে পড়ছেন আগে থেকেই এমনটি টের পেয়ে রোববার সকালে ধানমণ্ডির কার্যালয়ে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার সময় উপস্থিত ছিলেন না মেয়র খোকন। পরে মনোনয়নবঞ্চনা নিয়েও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি। এমনকি গত ২৪ ঘণ্টায় বাসা থেকে বের হননি। বনানীর বাসায়ই অবস্থান করছেন। অনেকটা স্বেচ্ছা গৃহবন্দি জীবন পার করছেন ডিএসসিসির এ নগরপিতা।
ডিএসসিসির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কর্মদিবসে রোজ বেলা ১১টার পর পরই নগরভবনে যেতেন মেয়র সাঈদ খোকন। কিন্তু রোববার দলীয় প্রার্থী ঘোষণায় নিজের নাম না দেখে অনেকটা হতবিহ্বল খোকন। নগরভবনে যাননি।
বাইরেও কোথাও তাকে দেখা যায়নি। দিনভর বনানীর বাসায় ছিলেন। তাকে সমবেদনা জানাতে পরিবারের সদস্যদের বাইরে অন্য কেউ বাসায় যাননি। ঘনিষ্ঠ কাউন্সিলরদেরও তার বাসায় যেতে দেখা যায়নি।
অথচ শনিবার পর্যন্ত তার বাসায় দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ভিড় লেগে ছিল। তারা ভাবতেও পারেননি যে, খোকন পুনরায় মনোনয়ন পাবেন না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বনানীর ১১ নম্বর রোডের একটি আলিশান ভবনে থাকেন মেয়র সাঈদ খোকন। রোববার বেলা ১১টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই বাড়িতে তেমন কাউকে ঢুকতে দেখা যায়নি। এ সময় মেয়র সাঈদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ধরেননি।
মেয়র খোকনের ঘনিষ্ঠরা জানান, সাঈদ খোকন আবারও মনোনয়ন পাবেন এমন আত্মবিশ্বাসী ছিলেন তার কর্মী-সমর্থকরা। গত কয়েক দিন তার বাড়িতে দলীয় নেতাকর্মী ও কাউন্সিলরদেরও ভিড় ছিল। কিন্তু খোকন নির্বাচনে মনোনয়ন না পেলে পাল্টে যায় চিত্র। রোববার তাকে সমবেদনা জানাতে ডিএসসিসির কর্মকর্তা-কর্মচারী, কাউন্সিলর, ঠিকাদার—কেউই যাননি। তার মনের অবস্থা ভালো নেই এ কারণেই হয়তো অনেকে সেখানে যাননি।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে সর্বশেষ ডিএসসিসি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পান অবিভক্ত ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে খোকন। নির্বাচনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে বিপুল ভোটে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হন খোকন। যদিও ভোটের দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায় বিএনপি।
২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ওই নির্বাচনে ৫ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন সাঈদ খোকন। ওই বছর ৬ মে মেয়র হিসেবে শপথ নেন তিনি।
আগামী বছর ১৭ মে পর্যন্ত দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রের দায়িত্বে আছেন সাঈদ খোকন।
২২ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন (ইসি) এই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ২৫ ডিসেম্বর থেকে মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করে আওয়ামী লীগ। প্রথম দিন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ না করলেও দ্বিতীয় দিন দলীয় ফরম সংগ্রহ করেন সাঈদ খোকন। সেদিন তিনি মনোনয়নপত্র হাতে নিয়ে অঝোরে কাঁদেন। বর্তমান সময়কে ‘কঠিন সময়’ অভিহিত করে সবাইকে তার পাশে থাকার আহ্বান জানান খোকন।
ওই দিন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন মেয়র খোকন। পরে গণমাধ্যমকে বলেন, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদী। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় বলেন, দলীয় প্রধান আমাকেই মনোনয়ন দেবেন। তিনিই আমার অভিভাবক।