হঠাৎ কমলো টেসলার বাজারমূল্য, বিশ্লেষকরা বলছেন নজিরবিহীন দরপতন

প্রকাশিত: ৩:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

ইলন মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরির প্রতিষ্ঠান টেসলার বাজারমূল্য এত অল্প সময়ে এত বেশি কমেছে যে মাত্র কয়েক মাসে ৪৯ শতাংশ বাজারমূল্য হারিয়েছে। জেপি মর্গানের বিশ্লেষকরা বলছেন, অটোমোটিভ শিল্পের ইতিহাসে এর সঙ্গে তুলনীয় আর কোনো ঘটনা খুঁজে পাননি তারা। এমন ঘটনা ‘নজিরবিহীন’।

বিশ্লেষকরা লিখেছেন, আমরা অটোমোটিভ শিল্পের ইতিহাসে এমন কোনো নজির খুঁজে পাচ্ছি না যেখানে কোনো ব্র্যান্ড এত কম সময়ে এত বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে।

তারা আরও উল্লেখ করেন, তুলনীয় সবচেয়ে কাছের উদাহরণ হতে পারে ২০১২ ও ২০১৭ সালের ঘটনা, যখন চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপড়েনের জেরে জাপানি ও কোরিয়ান গাড়ির বিক্রি ব্যাপকভাবে কমে গিয়েছিল। সুত্র: বিজনেস ইনসাইডার

তবে সেই ঘটনাগুলো নির্দিষ্ট একটি বাজারেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু ২০২৫ সালে টেসলার বিক্রির পতন কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা অঞ্চলে সীমাবদ্ধ নেই।

বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জেপি মর্গানের বিশ্লেষকরা টেসলার শেয়ারদরের লক্ষ্যমাত্রা ৪১ শতাংশ কমিয়ে ২৩০.৫৮ ডলার থেকে ১৩৫ ডলারে নামিয়ে আনেন। সেইসঙ্গে ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে টেসলার গাড়ি সরবরাহের পূর্বাভাসও ৩ লাখ ৫৫ হাজার ইউনিট নির্ধারণ করেছেন, যা ২০২৪ সালের প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।

বিশ্লেষকদের মতে, টেসলার এই নাটকীয় পতনের পেছনে মূলত দুটি কারণ রয়েছে—বিশ্ববাজারে বিক্রি কমে যাওয়া এবং কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ইলন মাস্কের রাজনীতিতে জড়ানোর ফলে সৃষ্ট ব্র্যান্ডিং ইস্যু।

একসময় মনে করা হচ্ছিল, মাস্কের ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন টেসলার জন্য সুফল আনবে। নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের জয়ের পর টেসলাই ছিল একমাত্র বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারক যাদের শেয়ারমূল্য বেড়েছিল।

ধারণা করা হচ্ছিল, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাস্কের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলে সরকারি খরচ কমানোর নীতির সুবিধা পেতে পারে টেসলা।

কিন্তু এখন সেই ধারণা বদলে যাচ্ছে। নতুন বিশ্লেষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে মাস্কের কাজ করা বরং টেসলার বাজার চাহিদার জন্য খারাপ ফল আনতে পারে।

জেপি মর্গানের বিশ্লেষকরা লিখেছেন, মাস্কের ডিপার্টমেন্ট অভ গভর্নমেন্ট এফিশিয়েন্সি-তে কাজ করা ঘিরে দেশেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে দক্ষিণপন্থীরা যেমন এতে সন্তুষ্ট, তেমনি বামপন্থীরা ক্ষুব্ধ। তবে শেষপর্যন্ত এই বিতর্কের ফলে টেসলার বিক্রিই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ডিসেম্বর থেকে গত বুধবার পর্যন্ত টেসলার বাজার মূলধন কমেছে প্রায় ৪৯ শতাংশ। ২০২৪ সালের শেষদিকে যেখানে কোম্পানিটির বাজারমূল্য ছিল ১.৫৪ ট্রিলিয়ন ডলার, এখন তা ৭৭৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে। অর্থাৎ প্রায় তিন মাসে টেসলার বাজারমূল্য কমেছে ৭৬৩ বিলিয়ন ডলার।

গত কয়েক সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে টেসলার শোরুমের সামনে বিক্ষোভ হয়েছে; বেশ কয়েকটি স্থানে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে। ট্রাম্প এ ঘটনায় টেসলার পক্ষে নিয়ে বলেছেন, তিনি দোষীদের ‘দেশীয় সন্ত্রাসী’ ঘোষণার বিষয়টি বিবেচনা করবেন।

শুধু ব্র্যান্ড ইমেজ নয়, কিছু বিশ্লেষক মাস্কের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের মতে, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে মাস্ক টেসলা পরিচালনায় মনোযোগ দিতে পারছেন না।

জেপি মর্গানের বিশ্লেষকরা আরও বলেছেন, টেসলার গাড়ির মূল্য ও বিক্রয় দুটোই যখন নিম্নমুখী, সেই সময়ই মাস্ক টুইটার (বর্তমান এক্স) কিনে নেন।

মর্গান স্ট্যানলির বিশ্লেষকরা সোমবার এক প্রতিবেদনে লিখেছেন, টেসলার শেয়ারের দরপতনের মূল কারণ বিক্রির নিম্নগতি, ব্র্যান্ড ইমেজ সংকট এবং বাজারে আস্থার ঘাটতি। তবে টেসলার শেয়ারকে তারা এখনও সম্ভাবনাময় বিনিয়োগ মনে করছেন।

এ বিষয়ে টেসলার পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শেয়ারের মূল্য অর্ধেকে নেমে গেলেও টেসলা এখনও বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান গাড়ি কোম্পানি। টেসলার পরেই রয়েছে টয়োটা। তাদের বাজারমূল্য ২৯২ বিলিয়ন ডলার।