ক্রীড়া ডেস্ক:
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আউটের পর একজন ক্রিকেটানুরাগীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখা ছিল– ‘মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখন আর প্রিয় নেই, শ্রদ্ধেয় হয়ে গেছেন। অবসর নেওয়া উচিত।’ জাতীয় দলের এ মিডল অর্ডার ব্যাটারের বয়স ৩৮ বছর ২৮০ দিন আজ। সনদের এই বয়সের সঙ্গে আরও কয়েক বছর যোগ করতে বলছেন রিয়াদের ময়মনসিংহের এক প্রতিবেশী। সে হিসাবে মাহমুদউল্লাহর বয়স এখন ৪০ বছর পেরিয়েছে বা ছুঁইছুঁই!
কুড়ির শরীরে কুড়েমি না থাকলেও চল্লিশের শরীর কিন্তু চলে না! তা তিনি যতই মুখে বলেন, বয়স একটি সংখ্যা মাত্র! বাস্তবে তিনি বয়সের ভারকে উপেক্ষা করতে পারছেন না। শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে শট খেলেও বাউন্ডারি সীমানা পার হয় না বল। ক্যাচ এবং বোল্ড আউট হওয়া এখন নিয়মিত ঘটনা রিয়াদের ক্ষেত্রে। শরীর মনের এই টানাপোড়েন বুঝেও না বোঝার ভান করে চলেছেন তিনি। কারণ, তিনি জানেন জাতীয় দল ছাড়লেই লিগে বাজার হারাবেন। স্বাভাবিকভাবেই রিয়াদের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট চালিয়ে যেতে চাওয়া দোষের কিছু না। দোষ কিছু হয়ে থাকলে তা করছেন তাঁকে যারা দলে নিচ্ছেন।
রিয়াদ জোর করে জাতীয় দলে খেলছেন এ দাবি কেউ করতে পারবে না। জাতীয় দলে টিকে থাকার জন্য লবিংও করার মতো মানুষ না তিনি। নির্বাচকরা তাঁকে রাখেন বলে না জাতীয় দলে থাকেন। রিয়াদকে ওয়ানডে দলে নিয়মিত রাখার কারণ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে একজন নির্বাচক বলেছিলেন, তারা বিকল্প খুঁজে পাচ্ছেন না। মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসানের শূন্যস্থান পূরণ করা গেলেও রিয়াদের বিকল্প কেন মিলছে না, তা কোটি টাকার প্রশ্ন।
আসলে রিয়াদের জাতীয় দলের অধ্যায় শেষ হয়ে গিয়েছিল ২০২২ সালেই। টেস্টের পর টি২০ দল থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ওয়ানডে দলেও রাখা হয়নি বেশ কয়েক সিরিজে। নেওয়া হয়নি ২০২৩ সালের এশিয়া কাপেও। আফিফ হোসেন, শামীম হোসেন পাটোয়ারির ব্যর্থ হওয়া আর মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের উদাসীনতা রিয়াদকে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ কর দেয়। বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হোম সিরিজে লড়াই করে জায়গা করে নেন বিশ্বকাপ দলে। তেইশের ব্যর্থ বিশ্বকাপে সফল ছিলেন মিডল অর্ডার এ ব্যাটার। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাল পরাজয়ের ম্যাচে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে জবাব দিয়েছিলেন উপেক্ষার!
৩৮ বছর বয়সী এ ব্যাটারের সেঞ্চুরি উদযাপন দেখে চারদিকে হাসির রোল পড়ে গেলেও নির্বিকার ছিলেন তিনি। কারণ জাতীয় দলে জায়গা ধরে রাখার পাথেয় ছিল অকার্যকর সেঞ্চুরিটি। সেই ১১১ রানের পর একটি হাফ সেঞ্চুরি ও ত্রিশের কোটায় কয়েকটি ইসিংস খেলে নির্বাচকদের হৃদয় জিতে নিলেও দলের কাজে লেগেছেন খুব কমই। তাই তো রিয়াদকে জাতীয় দলে রাখা নিয়ে সমর্থকদের কাঠগড়ায় নির্বাচকরাও।
মিডল অর্ডার ব্যাটার রিয়াদ আগের মতো ক্ষিপ্রগতিতে ফিল্ডিং করতে পারেন না, তা প্রমাণিত সত্য। শরীরের ক্ষিপ্রতা কমে গেলে তাঁর কী দোষ। এই যে জোরে শট খেলেও বল সীমানা পার করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, তাতে দোষ দেখা ভুল হবে। কারণ তিনি জাতীয় দলে জোর করে খেলছেন না। একাদশেও থাকেন টিম ম্যানেজমেন্ট রাখে বলে। তাই তিনি শূন্য, এক, দুই, তিন রান করে দলকে বিপদে ফেললেও দোষ তাঁকে দেওয়া যাবে না! দোষ সমর্থকদের কাঠগড়ায় থাকা নির্বাচকদের।