নড়াইল প্রতিনিধি:
একটি হত্যা মামলায় আদিবাসী এক তরুণ দিনমজুরকে আটক করে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় জড়িত নড়াইল সদর থানার এক উপপরিদর্শকের (এসআই) বিচার দাবি করে গতকাল বুধবার বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে। এদিন দুপুরে নড়াইল জজ আদালত চত্বরে কর্মসূচি পালিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল সদরের চণ্ডীবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২২ জুলাই রাতে একই ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি চণ্ডীবরপুর পূর্বপাড়ার বাসিন্দা ইলিয়াছ শেখকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী শিউলি বেগম সদর থানায় হত্যা মামলা করেন। ২২ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হন আদিবাসী তরুণ রিপন বিশ্বাসকে (২০)। তাঁর স্বজনের ভাষ্য, হত্যা মামলায় তাঁর নাম ছিল না। কিন্তু গ্রেপ্তারের পর নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যায় জড়িত থাকার বিষয়ে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে ও ইলিয়াছ হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই আবদুল হকের বিচার দাবিতে বুধবার কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় বক্তব্য দেন নড়াইল আদিবাসী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি অশোক কমর্কার, আদিবাসী রমেশ বিশ্বাস, মিন্টু বিশ্বাস, শিখা রানী প্রমুখ। তারা অমানবিক কর্মকাণ্ডের জন্য মামলার তদন্ত কর্মকর্তার বিচার দাবি করেন। পাশাপাশি রিপন বিশ্বাসকে দ্রুত অব্যাহতি দেওয়ার আহ্বান জানান।
রিপনের মা সবিতা বিশ্বাস বলেন, তাঁর ছেলে দিনমজুর। পাঁচ সদস্যের সংসারে রিপনই একমাত্র উপার্জনক্ষম। সবিতা বলেন, ‘দুই মাস আগে গ্রামের কোথায় হত্যা হয়েছে, তাও আমরা জানি না। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) গভীর রাতে পুলিশ আমার ছেলেকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। এখন অত্যাচার-নিযার্তন করে হত্যায় স্বীকারোক্তির আদায়ের চেষ্টা করছে। ছেলেকে না ছাড়লে আমরা না খেয়ে মরে যাব।’
রিপনকে মামলায় জড়ানোর পেছনে অন্য কারণ দেখছেন নড়াইল আদিবাসী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি অশোক কমর্কার। তিনি বলেন, চণ্ডীবরপুর গ্রামে আদিবাসীদের মন্দিরের ২৮ শতাংশ জমি নিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সঙ্গে হাইকোর্টে একটি মামলা রয়েছে। প্রভাবশালীরা মন্দিরের জায়গায় জোর করে কলা গাছ লাগিয়েছে। মামলার বাদী পক্ষকে তারা বিভিন্নভাবে হুমকিও দিচ্ছে। এর প্রতিবাদ করায় রিপনকে মামলায় জড়িয়ে দিয়েছে। এটি আদিবাসীদের উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
আসামি পক্ষের আইনজীবী রাজিব আহম্মেদ রাজুর ভাষ্য, চণ্ডীবরপুর গ্রামে বিভিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলাদলি রয়েছে। পুলিশ নিরীহ দিনমজুর ছেলেকে ধরে এনেছে। তাঁকে অত্যাচার করে স্বীকারোক্তি আদায় করে মামলার আসামি করেছে।
যদিও এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সদর থানার এসআই আবদুল হক। তাঁর দাবি, ইলিয়াছ জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন রিপন। তাঁকে কোনো নির্যাতন করা হয়নি। এ ছাড়া এই মামলায় গ্রেপ্তার কয়েক আসামিও রিপনের সম্পৃক্ততার কথা বলেছে। যে কারণে তাকে এ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছেন।